কলেজ স্ট্রিটে দলের পুস্তক বিপণির উদ্বোধনে প্রবীণ সিপিএম নেতা বিমান বসু। নিজস্ব চিত্র।
এক জনের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল সকালে। সেই রাত পেরিয়ে ভোরের দিকে আর এক জনকে ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছিল। ঘটনাচক্রে, দু’জনেরই শেষ যাত্রা হয়েছিল একই দিনে। এ বার পুজোয় সেই দুই চরিত্রকে ঘিরে প্রকাশিত বই-ই আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠছে বামপন্থী পুস্তক বিপণিতে। রাজ্যের অতীত পরিস্থিতির বিশ্লেষণ এবং বর্তমান ন্যায়-বিচারের দাবি যেন মিলে যাচ্ছে পুজোর স্টলে!
পুজোর মণ্ডপ চত্বরে বইয়ের স্টল খোলা সিপিএম-সহ বাম দলগুলির বরাবরের রেওয়াজ। এ বার যেমন কলকাতা জেলা সিপিএমের আওতাধীন শহর এলাকায় মোট ১১৫টি বিপণি খোলা হয়েছে। জেলায় জেলায় সিপিএমের এরিয়া কমিটির তত্ত্বাবধানে খোলা হয়েছে একই রকমের স্টল। পুজোর বিপণিতে কী ধরনের বই বেশি নজর কাড়তে পারে, তার একটা ধারণা করে প্রকাশনা সংস্থার কাছ থেকে বই নিয়ে যান এরিয়া কমিটির নেতৃত্ব। পাশাপাশি, স্টলে রাখার পরে চাহিদা দেখে প্রকাশনা সংস্থার কাছে বই চাওয়া হয়। এই দুই সূত্রেই যা তথ্য মিলছে, তাতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং আর জি কর-কাণ্ডে নির্যাতিতা চিকিৎসকের উপরে বইয়েরই চাহিদা এ বার বেশি।
‘জাগরণের নাম তিলোত্তমা’ শীর্ষক একটি সঙ্কলন এ বার পুজোয় প্রকাশ করেছে সিপিএম। যা আসলে ‘আর জি কর আন্দোলনের ইতিবৃত্ত’। আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসক-ছাত্রীর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পরে বিচারের দাবি কী ভাবে এগিয়েছে, সেই পথে কে কী বলেছেন, তা-ই ধরার চেষ্টা হয়েছে এই সঙ্কলনে। যেখানে জায়গা পেয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যও! সাম্প্রতিক কালে সম্ভবত এটাই প্রথম সিপিএমের বই, যেখানে মমতাও আছেন। বইটির ভূমিকা লিখেছেন সিপিএমের পলিটব্যুরোর চিকিৎসক-সদস্য তথা রাজ্যের প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্য্যকান্ত মিশ্র। সঙ্কলনের সম্পাদক, দলের তরুণ নেতা সৃজন ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘চলমান এই আন্দোলনের ধারাকে আমরা নথিবদ্ধ করতে চেয়েছি। সেখানে আমাদের দলের নেতৃত্বের কথা যেমন আছে, কংগ্রেসের রাহুল গান্ধীর বক্তব্যও আছে। এমন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী কী বলেছেন, সেটাও রাখা হয়েছে।’’
বুদ্ধদেবের লেখা নিয়ে পুজোর বিপণিতে এমনিতেই আগ্রহ থাকতো। তাঁর প্রয়াণের পরে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর লেখা সন্ধানের প্রবণতা বেড়েছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের কথায়, ‘‘জেলায় জেলায় সীতারাম ইয়েচুরি ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্মরণ-সভা চলছে। সেই সূত্রেই জেলায় খোঁজ নিয়ে জেনেছি, অনুষ্ঠানের অবসরে এবং বুক স্টলে বুদ্ধদা’র লেখা বইয়ের চাহিদা আছে।’’ এই তালিকায় নতুন সংযোজন হয়েছে বুদ্ধদেবের ‘রাজনৈতিক প্রবন্ধগুচ্ছ’। সেলিমের মতে, ‘‘আমাদের রাজ্যে পুজোর সময় অন্যান্য জিনিসের সঙ্গে বই কেনা ও পড়ার একটা রেওয়াজ আছে। এই নতুন বইটা বুদ্ধদা’র পরিপাটি স্বভাবের সঙ্গে মানানসই।’’
প্রমোদ দাশগুপ্তের সঙ্গে বুদ্ধদেব গিয়েছিলেন চিনে। সে সময়ে লিখেছিলেন ‘পিকিং ডায়েরি’। আমেরিকার নির্দেশে কিউবায় যখন অর্থনৈতিক অবরোধ চলছে, সেই সময়ে ফিদেল কাস্ত্রোর দেশে গিয়ে লিখেছিলেন ‘হাভানা ডায়েরি’। ছিল ভিয়েতনাম সফরের গল্পও। আবার পাহাড়ে আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে লেখা হয়েছিল ‘হিমালয়ের কোলে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন’। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর প্রয়াণের পরে তাঁর নানা সময়ের লেখার সঙ্কলন করেই প্রকাশিত হয়েছে ‘রাজনৈতিক প্রবন্ধগুচ্ছ’। প্রকাশনা সংস্থা এনবিএ-র অধিকর্তা অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, পরবর্তী পর্বে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সাহিত্য-নির্ভর লেখার সঙ্কলন করা হবে। তিনি বলছেন, ‘‘নানা জায়গা থেকে আসা তথ্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, ‘তিলোত্তমা’র উপরে বইটার চাহিদা বেশি। সেই সঙ্গে রয়েছে বুদ্ধবাবুর বইও।’’