Durga Puja 2020

অতিমারির ছায়া পড়ল পুজোর বই বিপণিতেও

পুজোর মণ্ডপ চত্বর ও আশেপাশে বইয়ের স্টল খোলা বাংলায় বহু কালের রেওয়াজ।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২০ ০২:৩৯
Share:

বাঁ দিকে, জোড়াসাঁকো এলাকার পুস্তক বিপনিতে বিমান বসু। ডান দিকে, বৈদ্যবাটীতে ভেঙে দেওয়া বামপন্থী বইয়ের বিপনি আবার চালু। নিজস্ব চিত্র।

দুর্গা এলেন। সরস্বতীর আসরও বসল। কিন্তু লক্ষ্মীলাভ সে ভাবে হল না!

Advertisement

পুজোর মণ্ডপ চত্বর ও আশেপাশে বইয়ের স্টল খোলা বাংলায় বহু কালের রেওয়াজ। সংখ্যার তারতম্য হলেও বিপণি খুলেছে এ বারও। তবে পুজো দেখতে আসা মানুষের ভিড় পাতলা হয়ে যাওয়ায় বইয়ের ক্রেতা বা গ্রাহক সে ভাবে নেই বেশির ভাগ জায়গায়। কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। শাসক তৃণমূল বা বিরোধী বিজেপি ও সিপিএমের নেতৃত্ব বলছেন, এ বারের বিশেষ পরিস্থিতিতে লোক কম আসবেন এবং বইয়ের বিক্রি কম হবে জেনেও তাঁরা বিপণি খোলায় উৎসাহ হারাননি। কারণ, পুজোর সময়ে এই ধরনের বিপণি জনসংযোগেও কাজে লাগে। অল্পসংখ্যক লোক এলেও যাঁরা যা বই দেখতে পাচ্ছেন, সেটাকেই উৎসাহজনক বলে ধরছেন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব।

শাসক তৃণমূল তাদের মুখপত্রের নামে বইয়ের বিপণি খোলে পুজো মণ্ডপ চত্বরে। কলকাতা ও আশেপাশের এলাকায় বহু পুজোর আয়োজনে তৃণমূলের নেতাদেরই কর্তৃত্ব থাকায় দলের বাড়তি সুবিধাও আছে। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘পুজো এ বার নিয়ন্ত্রিত। ভিড় কম, মানুষ যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন, সেই আবেদনই করা হয়েছে। কিন্তু তার জন্য বইয়ের স্টল খোলা যাবে না, এই রকম নির্দেশ আমরা কোথাও দিইনি। কর্মীরা যেখানে যে ভাবে পেরেছেন, স্টলের ব্যবস্থা রেখেছেন।’’ অন্যান্য বারের মতো এ বারও তৃণমূলের পুস্তক বিপণিতে মুখ্য চরিত্র মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা বিবিধ বই। যদিও বই নেওয়ার লোকসংখ্যা এ বার কম।

Advertisement

একই ছবি বাম শিবিরেও। রাজ্য জুড়ে হাজারেরও বেশি ‘মার্ক্সীয় সাহিত্যের বিপণি’ খুলেছে তারা। কিন্তু সেখানে বই নেওয়ার চেনা ছবি অমিল। এই বিপণিতে যারা বই দেয়, সেই সংস্থা ন্যাশনাল বুক এজেন্সি (এনবিএ)-র অধিকর্তা অনিরুদ্ধ চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘পরিস্থিতি মাথায় রেখেই এ বার আমরা বই কম ছেপেছি। গত বার যেমন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বইয়ের জন্য বিপুল চাহিদা ছিল, এ বার সেই পরিস্থিতিও নেই। বিপণির জন্য নানা এলাকার কর্মীরা বই নিয়ে গিয়েছেন। তবে এখনও পর্যন্ত যা খবর পাওয়া যাচ্ছে, মানুষের হাতে তেমন ভাবে বই উঠছে না।’’ বয়স্ক অনেক মানুষ চাহিদার কথা জানিয়েছেন, তাঁদের বাড়িতে বই পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা হবে বলে সিপিএম সূত্রের বক্তব্য।

রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি রীতেশ তিওয়ারির দাবি, ‘‘বাংলায় বিজেপি এখন অনেক বড় হয়েছে। আমাদের বইয়ের স্টলের জন্য আগ্রহও বেড়েছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রিত আকারে পুজো হওয়ার প্রভাব বইয়ের স্টলেও পড়েছে।’’ তবে বিপণি-দৌড়ে বিজেপি যে পিছিয়ে নেই, তা বুঝিয়ে দলের প্রাক্তন বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য বলছেন, পুজোর প্রথম দু’দিনে তিনি নিজেই ২১টা স্টলে গিয়েছেন।

এরই মধ্যে অন্য ছবি পূর্ব মেদিনীপুরে। নন্দীগ্রাম, খেজুরির মতো যে সব জায়গায় সিপিএম বহু দিন বিপণি খুলতে পারেনি, এ বার সেখানে তা চলছে ভাল ভাবেই। ওই জেলা থেকে বইয়ের চাহিদাও আসছে এনবিএ-র কাছে। আবার অন্য দিকে, এসইউসি-র রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্যের অভিযোগ, দক্ষিণ ২৪ পরগনার মৈপীঠে তাঁদের বই বিপণি শাসক দলের দুষ্কৃতীরা ভেঙে দিয়েছে, কোথাও বন্ধ করার হুমকি দেওয়া হয়েছে। তবু দলের কর্মী ও স্থানীয় মানুষের প্রতিরোধে সেখানে বিপণি ফের চালু হয়েছে। শাসক দলের নেতৃত্ব অবশ্য হামলায় যোগ থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement