যশোর রোডের উপর পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ বনগাঁর পড়ুয়াদের। —নিজস্ব চিত্র।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করানোর দাবিতে যশোর রোড অবরোধ করে আত্মহত্যার হুমকি দিলেন বনগাঁ কুমুদিনী স্কুলের পড়ুয়ারা। ওই পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলেও পড়ুয়াদের দাবি, তাঁদের সকলকে পাশ করিয়ে দিতেই হবে। এই দাবি না মানলে রাস্তাতেই অনশন আন্দোলনের হুমকিও দিয়েছেন পড়ুয়ারা। বনগাঁ ছাড়াও হুগলি, বীরভূম এবং পশ্চিম বর্ধমানের মতো রাজ্যের বিভিন্ন জেলার নানা প্রান্তে প্রায় একই রকম বিক্ষোভের ছবি ধরা পড়েছে।
চলতি বছর উত্তর ২৪ পরগনার ওই স্কুলের ২৭৯ জন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৩৭ জন পরীক্ষার্থী ইংরেজি-সহ অন্যান্য বিষয়ে ফেল করেছেন। সোমবার সকাল থেকে বনগাঁর ওই স্কুলের সামনে যশোর রোডের উপর পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানো শুরু করেছেন পড়ুয়ারা। তাঁদের অনেকের দাবি, শিক্ষাবর্ষের মাঝেই পাঠ্যক্রমের নানা পরিবর্তন করা হয়েছে। কখনও অনলাইন, কখনও বা অফলাইনে পরীক্ষা দিতে হবে বলা হয়েছিল তাঁদের। অঙ্কিতা পাল নামে এক ছাত্রীর কথায়, ‘‘সিলেবাস বার বার পাল্টাছে। অনলাইনে পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল, অফলাইনে তা দিতে হয়েছে। সকলেই এক বিষয়ে ফেল করতে পারে না। যত ক্ষণ পর্যন্ত আমাদের পাশ করিয়ে না দেওয়া হয়, আমরা আন্দোলন করব। এ রাস্তা থেকে উঠব না।’’
একই দাবিতে বারাসত প্রিয়নাথ বালিকা বিদ্যালয়ের উচ্চ মাধ্যমিক অনুত্তীর্ণ পড়ুয়ারাও যশোর রোডে পথ অবরোধ শামিল হন। ওই স্কুলের ৭০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪০ জন অনুর্ত্তীর্ণ হয়েছেন। আন্দোলনকারীদের দাবি, তাঁদেরকে ইচ্ছাকৃত ভাবে ফেল করানো হয়েছে। যদিও এ বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তাঁরা সদুত্তর দিচ্ছেন না বলেও দাবি ছাত্রীদের।
বনগাঁর যশোর রোডের মতোই পথ অবরোধ হয় হুগলির চুঁচুড়ায়। চুঁচুড়ার ঘড়ির মোড়ে সোমবার সকাল থেকেই বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন উচ্চ মাধ্যমিকে অসফল ছাত্র-ছাত্রীরা। দেশবন্ধু গার্লস নারী শিক্ষামন্দির, জ্যোতিষচন্দ্র বিদ্যাপীঠ-সহ বেশ কয়েকটি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা অবরোধে শামিল হন। অবরোধের জেরে রাস্তায় যানজট দেখা দেয়। পরে চুঁচুড়া থানার পুলিশ গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের বুঝিয়ে অবরোধ তোলার চেষ্টা করে।
সাঁইথিয়ায় পড়ুয়াদের প্রতিবাদ। —নিজস্ব চিত্র।
চুঁচুড়া ছাড়াও বৈদ্যবাটির সুরেন্দ্রনাথ রায় বালিকা বিদ্যালয়ের উচ্চ মাধ্যমিকে অসফল ছাত্রীরা বিক্ষোভ দেখান। ছাত্রীদের পাশাপাশি তাঁদের অভিভাবকেরাও স্কুলে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ ছাড়া, চন্দননগর জ্যোতির মোড়ে অবরোধ করেন উষাঙ্গিনী বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা।
উত্তর ২৪ পরগনা বা হুগলির মতোই বিক্ষোভ দেখা গিয়েছে বীরভূমে। ওই জেলার সাঁইথিয়ায় শশীভূষণ দত্ত বালিকা বিদ্যালয়ের ৩১০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২৯০ জনই ফেল করেছেন। সোমবার স্কুলে হাজির হন ওই পরীক্ষার্থীরা। এর পর পাশ করিয়ে দেওয়ার দাবিতে স্কুলের সামনে সাঁইথিয়া-লাভপুর চৌহাট্টা যাওয়ার রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। ছাত্রীদের দাবি, তাঁদের অবিলম্বে পাশ করাতে হবে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে অবরোধ ওঠানোর চেষ্টা শুরু করে সাঁইথিয়া থানার পুলিশ। অন্য দিকে, পাশ করানোর দাবিতে আসানসোলের রানিগঞ্জে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন উচ্চ মাধ্যমিকে অকৃতকার্য বহু ছাত্র-ছাত্রী। সকাল থেকেই আসানসোল সিটি বাসস্ট্যান্ডের সামনে হটন রোডে মোড়ে পথ অবরোধ ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তাঁরা। এর জেরে এলাকায় যানজট হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশবাহিনী। ছাত্র-ছাত্রীদের বুঝিয়ে অবরোধ সরানোর চেষ্টা করছেন পুলিশকর্তারা। বিক্ষোভকারী ছাত্রীদের উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে এক অভিভাবককে আটক করে মহিলা পুলিশ। এর জেরে মহিলা পুলিশের বচসা এবং ধস্তাধস্তিও হয় বিভোক্ষকারীদের।
পরীক্ষার আগে নানা সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার জেরেই একসঙ্গে এত জন ইংরেজিতে অকৃতকার্য হয়েছেন বলে মনে করছেন আন্দোলনকারীরা। একসঙ্গে এত জনের ফেল করা অসম্ভব বলেই দাবি তাঁদের। প্রীতিকা দে নামে বনগাঁ কুমুদিনী স্কুলের এক ছাত্রী বলেন, ‘‘স্কুল থেকে আমাদের সকলকে অকৃতকার্য দেখিয়েছে। কিন্তু, আমরা এমন পরীক্ষা দিইনি যে পাশ করব না। আমরা কী করে একটি বিষয়ে (ইংরেজিতে) ফেল করলাম? এত জন একসঙ্গে কী করে অকৃতকার্য হয়? এটা আমরা কিছুতেই মানতে পারছি না। আমরা আন্দোলন করছি। আমাদের পাশ করিয়ে দিয়ে হবে। তা না হলে এখানেই অনশনে বসব, নয়তো আত্মহত্যা করব।’’ আর এক পডুয়া অঙ্কিতা দাসের দাবি, ‘‘মাধ্যমিকে আমি ফার্স্ট ডিভিশন পেয়েছিলাম। উচ্চ মাধ্যমিক রেজাল্টও ভাল হওয়ার কথা। এতটা খারাপ পরীক্ষাও দিইনি। আমাদের পাশ করাতেই হবে।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।