প্রতীকী ছবি।
সম্প্রতি রক্তদান করেছিলেন বীরভূমের রাজনগর এলাকার এক ব্যক্তি। তিনি যে ‘বম্বে গ্রুপ’ নামক বিরলতম ব্লাড গ্রুপের অধিকারী, সেটা শনিবার চিহ্নিত করলেন সিউড়ি জেলা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরা। তাঁকে অযথা যাতে বিব্রত হতে না হয়, সেই স্বার্থেই ওই ব্যক্তির নাম গোপন রেখেছে হাসপাতাল। তবে, জেলায় এই প্রথমবার এক ‘বম্বে গ্রুপে’র দাতা চিহ্নিত হওয়ায় খুশি স্বাস্থ্যকর্তারা।
সিউড়ি হাসপাতাল সুপার শোভন দে বলছেন, ‘‘জীবনে আর একবারও এমন ঘটনার সাক্ষী থাকতে পারব কিনা, জানি না। তবে, এর কৃতিত্ব ব্লাড ব্যাঙ্কের দুই মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট আখতারুল আলম ও অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কারণ, জেলা হাসপাতালে ওই রক্তের গ্রুপ নির্ণয় মোটেই সহজ নয়।’’ তিনি জানান, ওই দু’জনের চেষ্টাতেই ওই রক্তদাতা যে বিরল ব্লাড গ্রুপের অধিকারী, সেটা তাঁকে জানানো গেল। এই গ্রুপের রক্তের জন্য কারও প্রাণ সংশয় ঘটলে তাঁকে তিনি রক্ত দিতে পারবেন।
আরও পড়ুন: বৈষম্য মুছতে সরস্বতী পুজোয় পুরোহিত আদিবাসী ছাত্রী
সুজয় ঘোষ পরিচালিত ‘কহানি’ সিনেমার ভিলেন মিলন দামজি গুলিতে জখম হয়ে হাসপাতালে যখন ভর্তি হয়েছিল, তখন জানা যায় তাঁর শরীরেও বইছে বম্বে গ্রুপের রক্ত। সিনেমায় দামজির জন্য এক ইউনিট বম্বে গ্রুপের রক্ত মিলেছিল। বাস্তবে, এই বিরল রক্ত-গ্রুপের অধিকারীদের ভাগ্য মিলন দামজির মতো হয় না। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘বম্বে ব্লাড গ্রুপে’র রক্তের অভাবে কলকাতায় এক সদ্যোজাত শিশুকে গত এপ্রিলে প্রাণ হারাতে হয়েছিল। এত কম সংখ্যক মানুষের শরীরে ওই বিরল গ্রুপের রক্ত রয়েছে যে, তাঁদের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লেই ওই গ্রুপের রক্তদাতা ও রক্ত পেতে কালঘাম ছুটে যায়। সারা রাজ্যে আদতে কত মানুষ আছেন, তার নির্দিষ্ট তথ্যও নেই।
বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ির কথায়, ‘‘জেলা হাসপাতালে এমন এক জন দাতার খোঁজ মেলাই ভার। এটা খুবই বিরল।’’ পরিচিত যে সকল ব্লাড গ্রুপ রয়েছে, ‘এ, বি, এবি’ এবং ‘ও’ অথবা প্রতিটির নেগেটিভ গ্রুপ, সেগুলির চেয়ে ‘বম্বে’ ব্লাড গ্রুপ প্রকৃতিগত ভাবে আলাদা। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, আমাদের পরিচিত প্রধানত আটটি গ্রুপের (এ, বি, ও ইত্যাদির মতো) রক্তে এ, বি এবং এইচ—এই তিনটির মধ্যে একটি অ্যান্টিজেন থাকেই। কিন্তু বম্বে ব্লাড গ্রুপে তিনটির কোনওটিই থাকে না। ফলে, এক জন ‘বম্বে ব্লাড গ্রুপ’-এর রক্তদাতার দেহ থেকেই ‘বম্বে ব্লাড গ্রুপ’-এর রোগী রক্ত গ্রহণ করতে পারেন।
সিউড়ি জেলা হাসপাতাল সূত্রে খবর, ১২ জানুয়ারি একটি স্বেচ্ছা রক্তদান শিবির হয়েছিল। সেখানেই রক্ত দেন ওই ব্যক্তি। আবার ওই দাতাকে ডেকে শনিবার রক্ত পরীক্ষা করে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়। মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট অনির্বাণ বলছেন, ‘‘রক্তদান করার এটাও ইচিবাচক দিক। সুস্থ সবল মানুষেরা রক্ত দান করলে, কারা এমন বিরল রক্ত গ্রুপের, সেটা জানা সম্ভব।’’