জখম ফাইজুল তখনও বেঁচে। নিজস্ব চিত্র।
রবিবার জেলার একটি পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের সভাপতির গুলিতে মারা গিয়েছে দুই কিশোর। তার রেশ কাটতে না কাটতেই মালদহেই বোমা বাঁধতে গিয়ে তা ফেটে দু’জনের মৃত্যুর ঘটনায় ফের জড়াল তৃণমূলের নাম। মালদহের কালিয়াচক থানার সুজাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ডাঙা এলাকায় সোমবার দুপুরে ওই বোমা ফেটে যায়। অভিযোগ লিটন শেখ নামে এক ব্যক্তির পরিত্যক্ত একটি গুদামে বোমা ফাটে। মৃতদের নাম হান্নান শেখ (৩০) ও ফাইজুল শেখ (৩২)। লিটনবাবু সুজাপুরের অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি মফিজুল শেখের আত্মীয়। মফিজুল অবশ্য বলেন, ‘‘আমাদের বদনাম করতে এমন অভিযোগ করা হচ্ছে। এদিনের ঘটনায় দলের কেউ যুক্ত নন। সকলেই দুষ্কৃতী।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেনও বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীদের কোনও রং হয় না। যারা বোমা বাঁধার কাজ করছিল প্রত্যেকেই দুষ্কৃতী। পুলিশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছে।’’ তবে গুদামের মালিককে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
গত শুক্রবার দুপুরে মালদহের বৈষ্ণবনগরের চর সুজাপুরে বোমা বাঁধতে গিয়ে মৃত্যু হয় গঙ্গারাম মন্ডল নামে এক ব্যক্তির। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছিল, তিনি নিজের এলাকার একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে বোমা বাঁধছিলেন। তখন বোমা ফেটে গেলে গুরুতর ভাবে জখম হন গঙ্গারাম। পরিবারের লোকেরা তাঁকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা গঙ্গারামকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় এখনও কোনও কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। কী কারণে তিনি বোমা বাঁধছিলেন তা-ও জানতে পারেনি পুলিশ।
তার পরপরই ফের বোমা বাঁধতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটল মালদহে। এদিন দুপুর ১২টা নাগাদ কালিয়াচক থানা সুজাপুর গ্রামপঞ্চায়েতের ডাঙা গ্রামে একটি প্লাস্টিকের পরিত্যক্ত গুদামে বিষ্ফোরণের শব্দ শুনতে পান গ্রামাবাসীরা। ঘটনাস্থলে গেলে তাঁরা দেখেন রক্তাক্ত অবস্থায় চার জন মাটিতে পড়ে রয়েছেন। ঘটনাস্থলেই হান্নান শেখের মৃত্যু হয়। আর বাকিদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় সুজাপুর গ্রামীণ হাসপাতালে। তবে আহতদের মধ্যে ফইজুল শেখ ও নাসিরুল শেখের অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায় সঙ্গে সঙ্গে স্থানান্তরিত করা হয় মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। পরে এদিন বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ মৃত্যু হয় ফইজুল শেখের। প্রত্যেকেরই বাড়ি কালিয়াচকের বামনগ্রাম মোসিমপুরে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কালিয়াচকের সুজাপুরের চাষপাড়া গ্রামের বাসিন্দা লিটন শেখ নামে এক ব্যক্তির ওই প্লাস্টিকের গুদামটি। গুদামটি ইটের প্রাচীর দিয়ে তৈরি এবং টিনের ছাউনি রয়েছে। ওই গুদামটিতে গভীর রাত পর্যন্ত মানুষ যাতায়াত করত বলে দাবি স্থানীয়দের। লিটনের মদতেই বোমা বাঁধার কাজ চলছিল বলে দাবি পুলিশ ও গ্রামবাসীদের একাংশের। এ দিন পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তিনটি তাজা বোমা উদ্ধার করে। পরে ওই বোমা গুলি নিষ্ক্রিয় করা হয়। ঘটনাস্থলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় লোহার ছোট বলগুলি। বিষ্ফোরণে টিনের ছাউনির কিছু অংশ উড়ে গিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, লিটনের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
স্থানীয় তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত অক্টোবর মাসে দলের মালদহের পর্যবেক্ষক শুভেন্দু চৌধুরীর সভায় সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন মফিজুল শেখ। তার কিছুদিন বাদেই সহরুল বিশ্বাসকে সরিয়ে মফিজুলকে সুজাপুর অঞ্চল কমিটির সভাপতি করা হয়। তাঁর মদতেই তৃণমূলের একাংশ এলাকায় অসামাজিক কাজকর্ম শুরু করেছে বলে দলের একাংশের অভিযোগ।
সহরুল বিশ্বাস বলেন, ‘‘মফিজুলের আত্মীয়ের গোডাউনেই বোমা বাঁধা হচ্ছিল।’’ সহরুলের দাবি, ‘‘মফিজুল দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই এলাকায় সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। বাধা দিলে উল্টে ওরা হুমকি দিচ্ছে। কাউকে পরোয়া করছে না। দলকে বিষয়টি জানিয়েছি।’’
এ দিন মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় বোমা ফাটার ঘটনায় নাসেরুল ইসলামের শরীরের সামনের অংশ ঝলসে গিয়েছে। তবে তাঁর মা দিলন বিবি বলেন, ‘‘ছেলে মাছের ব্যবসা করে। সকালে সাইকেল নিয়ে মাছের খাবার নিয়ে আসার জন্য বেরিয়ে পড়ে। রাস্তায় তাকে কয়েকজন ধরে মারধর করে তাকে বোমা ছুড়ে পালিয়ে যায়।’’ কিন্তু পিছন থেকে বোমা মারলে শরীরের সামনের অংশ কী ভাবে ঝলসে গেল তার সদুত্তর মেলেনি।