বিস্ফোরণের পরে বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছে ছাদ, ভেঙেছে দেওয়াল। ইনসেটে, উদ্ধার হওয়া বোমা। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।
এক তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে বোমা ফেটে মৃত্যু হল এক জনের। পরে ওই কর্মী ও তাঁর পরিবারের লোকেরা নিহত এবং এক আহতকে চাটাইয়ে মুড়ে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে খড়ের পালুইয়ে লুকিয়ে রাখেন বলে অভিযোগ। রাতেই গ্রাম ছেড়ে পালান তাঁরা। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, পড়শির সঙ্গে জমি দখল নিয়ে গোলমালের জেরেই কাটোয়ার গাঁফুলিয়া গ্রামে চলছিল বোমা বাঁধা।
গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, তৃণমূলের ওই কর্মী জিল্লু রহমান মল্লিকের বাড়ির চিলেকোঠার একটি দেওয়াল ধসে পড়েছে। বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছে ঘরের ছাদও। চারিদিকে ইটের টুকরো, বোমা তৈরির মশলা এবং কয়েকটি বোমাও ছড়িয়ে রয়েছে। ছাদে ও সিঁড়তে মিলেছে রক্তের দাগও। তবে নিহত বা আহত কাউকেই রাতে খুঁজে পায়নি পুলিশ। পুলিশের দাবি, সিঁড়িতে রক্তের দাগ দেখেই বোঝা গিয়েছিল দেহ লুকিয়ে ফেলা হয়েছে। পরে কাটোয়ার ওসি সঞ্জয় কুণ্ডুর নেতৃত্বে গোটা গ্রামে চিরুণি তল্লাশি চালানো হয়। ঘণ্টাখানেক পরে ঘটনাস্থল থেকে ১০০ মিটার দূরে পুকুরের পাশে একটি খড়ের পালুইয়ের মধ্যে চাটাই মোড়া কানিখুড়ো শেখ (২৫) ও আলুমুদ্দিনকে খুঁজে পায় পুলিশ। রাতেই কাটোয়া বাঁধমুড়ো গ্রামের বাসিন্দা কানিখুড়োকে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের পুলিশ মর্গে পাঠানো হয়। আহত আলিমুদ্দিন শেখ ওরফে মিঠুনকেও হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তিনিও বাঁধমুড়ো গ্রামেরই বাসিন্দা, তবে সম্প্রতি কেশিয়ায় থাকতেন। পুলিশ জানিয়েছে, ওই দু’জনের নামেই কাটোয়া থানায় একাধিক দুষ্কর্মের অভিযোগ রয়েছে। জিল্লু রহমানের এক আত্মীয়কেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। তবে ওই বাড়ির আট সদস্যের কারও খোঁজ এখনও মেলেনি।
বর্ধমানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) প্রশান্ত চৌধুরী বলেন, “বোমা বাঁধার সময়েই বিস্ফোরণ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে। বিষয়টি বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছি।” ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে বেশ কয়েকটি বোমা ও বোমা তৈরির মশলাও।
জিল্লু রহমানের দোতলা বাড়িটিতে তাঁর সঙ্গে তিন ছেলে, তিন পুত্রবধূ ও এক নাতি বাস করতেন। এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিতও ছিলেন তিনি। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পড়শি ইয়োনুস মোল্লার সঙ্গে দুই বিঘা জমি নিয়ে ১৯৬২ সাল থেকেই বিবাদ চলছিল জিল্লুর। সম্প্রতি হাইকোর্টের রায় দেয়, গাঁফুলিয়া গ্রামের সেচ খালের পাশের ওই জমিটি ইয়োনুস মোল্লার কাছেই থাকবে। রবিবার ইয়োনুস সাহেবে কাটোয়া থানায় অভিযোগ করেন, গত শুক্রবার জিল্লু রহমান মোল্লা তাঁকে হমকি দিয়ে বলেছিল, ‘এ বার ওই জমির দখল আমরা নেবই। কেউ আটকাতে পারবে না।’ তাঁর দাবি, ওই জমির দখল নিতেই পেশাদারদের দিয়ে বাড়িতে বোম বাঁধাচ্ছিলেন জিল্লু। পুলিশও তদন্তে জানতে পেরেছে, জিল্লু রহমান মোল্লা অন্তত চার জন ‘সাহায্যকারী’কে দখল পেলে জমির একাংশের ভাগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। গ্রামবাসীদের অবশ্য দাবি, ওই বাড়িতে এলাকার দষ্কৃতীদের আনাগোনা ছিল। বাড়িতে বোমা বেঁধে বিক্রি করা হতো বলেও তাঁদের একাংশের অভিযোগ। যদিও পুলিশের দাবি, এ রকম কোনও তথ্য তদন্তে পাননি তাঁরা। রবিবার সকালেও অভিযুক্তদের খোঁজে গাঁফুলিয়ে গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। তখন জিল্লু রহমানের এক আত্মীয়া ধান সেদ্ধ করার কড়াইয়ের ভিতর চাদর ঢাকা দিয়ে লুকিয়ে ছিলেন বলে পুলিশের দাবি। পুলিশ তাঁকে আটকও করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য।
সিপিএমের বর্ধমান জেলা কমিটির সদস্য অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “তৃণমূলের কর্মী ওই জিল্লু রহমান মোল্লার নেতৃত্বেই আমাদের ওই এলাকার এক নেতার কাছে তোলা চেয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছিল।’’ বোমা ফেটে যে মারা গিয়েছে সেও তৃণমূলের লোক বলেও দাবি করেছেন অঞ্জনবাবু। তবে জেলা তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক মণ্ডল আজিজুলের দাবি, “ওরা তৃণমূলের সমর্থক বলে সিপিএমের লোকেরাই বাড়িতে হামলা চালিয়েছে।”