Pranab Mukherjee

মাকে বড় সমীহ করতেন: দেহরক্ষী

Advertisement

সন্দীপ পাল

নাকাশিপাড়া শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৫:৪৭
Share:

প্রণব মুখোপাধ্যায়।

সাহেব যে আর নেই, তা কোনও মতেই মেনে নিতে পারছেন না। সাহেব মানে, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। সোমবার তাঁর মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকেই মনখারাপ শ্যামল ত্রিবেদীর। মনে পড়ে যাচ্ছে, প্রণববাবুর সঙ্গে কাটানো দীর্ঘ সময়ের কথা। পুরনো ছবিগুলো হাতে নিয়েই বসে রয়েছেন সর্ব ক্ষণ। দীর্ঘ প্রায় পনেরো বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গে এলেই প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দেহরক্ষী হয়ে থাকতেন বেথুয়াডহরি নিবাসী তথা রাজ্য পুলিশ কর্মরত শ্যামল ত্রিবেদী।

Advertisement

মঙ্গলবার দুপুরে তাঁর বাড়ি গিয়ে দেখা গেল, নীচের বৈঠকখানায় পুরনো ছবিগুলো নিয়ে একাই বসে রয়েছেন তিনি। এক-একটা করে উল্টেপাল্টে দেখছেন। মাঝেমধ্যে হাতরাচ্ছেন পুরনো ফাইলপত্তর।

কথা শুরু করতেই বলে ওঠেন শ্যামল, ‘‘মেনে নিতে পাচ্ছি না সাহেব নেই। ওঁকে যে ভাবে দেখেছি, তাতে এই ভাবে চলে যাবেন, ভাবতেই পারছি না।’’ জানালেন, প্রণববাবু শরীরের যত্ন নিতেন। তবে, সুগারের সমস্যা থাকলেও বড় রসগোল্লা দেখলে লোভ সামলাতে পারতেন না তাঁর সাহেব। একটুকরো হলেও ছিঁড়ে খেতেন। দেশ-বিদেশে চার দিকে ঘুরে বেড়ালেও বাংলায় ঢুকলেই বাঙালি খাবার আলু-পোস্ত বা পোস্তর বড়া খেতে খুব পছন্দ করতেন।

Advertisement

২০১৭ সালেই রাষ্ট্রপতি পদ ছাড়ার পরেই শেষ দেখা শ্যামলের সঙ্গে। তার পর আর দেখা হয়নি। তবে ফোনে যোগাযোগ রাখতেন। গত ৮ অগস্ট করোনা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরেও প্রণববাবুর ছেলে অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলে ফোনে খবর নিয়েছেন শ্যামল।

কথা-প্রসঙ্গে উঠে আসে ২০১১ সালে বেথুয়াডহরিতে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির অ্যাক্সিডেন্টের কথা। সে সময়ে শ্যামলই প্রণববাবুকে গাড়ি থেকে কোলে করে বার করে বেথুয়াডহরি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে কৃষ্ণনগরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

শ্যামল জানান, অ্যাক্সিডেন্টের প্রায় বছর ঘুরতেই আবার বেথুয়াডহরিতে আসেন প্রণব। এর পর অনেক বার সেখানে এসেছিলেন তিনি। তবে শেষ বারের মতো এসেছিলেন রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর, বিল্বগ্রামে পূর্বপুরুষের ভিটেবাড়ি দেখতে। সেই সময়ে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়েছিলেন নাকাশিপাড়ায়।

শ্যামল জানাচ্ছেন, পরিবারের গল্প বলতে গেলেই মায়ের কথা বলতেন প্রণব। শ্যামল বলেন, ‘‘তিনি গল্পের মধ্যেই বলে উঠতেন— ‘ছোট থেকেই মাকে খুব ভয় পেতাম।’ আর সাহেবের স্মৃতিশক্তি ছিল প্রখর, ছোটবেলার গল্প বলতে গিয়ে কোনও দিন ভাবতে দেখিনি। ডান্ডা-গুলি খেলা থেকে ছোটবেলার দুষ্টুমি সবই শোনাতেন।’’

২০১৬ সালে রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন বিল্বগ্রামে এসে মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রণব নিজেকে সেখানকার ভূমিপুত্র হিসাবে পরিচয়ও দেন। সোমবার তাঁর মৃত্যুসংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরেই বিল্বগ্রাম এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ওই এলাকার বাসিন্দা তথা বর্তমান তৃণমূলের নেতা কণিষ্ক চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘গ্রামের সাধারণ মানুষের সঙ্গে খুব সহজেই মিশে যেতে দেখেছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement