বিমানবন্দরে এল কুলগামে নিহত শ্রমিকদের মৃতদেহ। নিজস্ব চিত্র
কথা ছিল গ্রামে ফিরবেন শুক্রবার। কিন্তু বৃহস্পতিবার ভোরের আলো ফুটতেই প্রিয়জনের কাছে শেষবারের মত এলেন তাঁরা। বাহালপুরে পৌঁছল কাশ্মীরে জঙ্গিদের গুলিতে নিহত পাঁচ শ্রমিকের কফিনবন্দি নিথর দেহ। আজ গ্রামেই তাঁদের শেষকৃত্য।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ শ্রীনগর থেকে দিল্লি হয়ে কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছয় তিনজনের মরদেহ। ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টা ছুঁইছুঁই, তখন আসে অন্য দু'জনের দেহ। পাঁচটি দেহকেই আইনি প্রক্রিয়া সেরে বিমানবন্দরের বাইরে আনা হয়।
দেহগুলি যাতে যত দ্রুত সম্ভব বহালপুর পৌঁছে যায় তা সুনিশ্চিত করতে প্রশাসনের তরফেও যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল । বিমানবন্দরের বাইরে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিল পাঁচটি শববাহী গাড়ি। ফুল দিয়ে সাজানো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িগুলির গায়ে লেখা মুখ্যমন্ত্রীর লেখা শোকবার্তা-‘নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডে আমরা গভীরভাবে শোকাহত ও মর্মাহত’। রয়েছে পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর বার্তাও। বাহালপুরে পৌঁছনোর পর পাশাপাশি রাখা হয় পাঁচজনের নিথর দেহ। তাঁদের শেষ বারের মতো দেখার অপেক্ষায় ছিল মর্মাহত বাহালপুর।
আরও পড়ুন: আপেলবাগানে জঙ্গিদের দেখাই কি কাল হল ওঁদের! ভাত আনতে গিয়ে বেঁচে গেলেন টিপু
মঙ্গলবার রাত্রি ১১টা নাগাদ বিমানবন্দরে পৌঁছে যান রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আনা হয় কলকাতা পুলিশ ও বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের পুলিশকর্মীদের। এই হত্যার নিন্দা করে ইতিমধ্যেই নিহতদের পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন মমতা। নিহতদের পরিবারের হাতে সেই টাকা পৌঁছে দেবেন ফিরহাদ হাকিমই। এদিন তিনি বলেন, ‘‘এই নিহত শ্রমিকদের পরিবারের কান্নার মুখোমুখি হতে হবে আমায়। তাঁরা নিশ্চয়ই প্রশ্ন করবেন, ভারতে থেকে ভারতীয়রা কতদিন মারা যাবে? কেন্দ্রীয় সরকার বলবে, সব ঠিক আছে। কিন্তু কাশ্মীর, অসম সর্বত্র বাংলার ছেলে মারা যাচ্ছে। কতদিন বাঙালি প্রাণ দেবে। আমরা মর্মাহত। এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চাই।’’ নিহত শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তিনি আলাদা করে কথা বলেন। আশ্বাস দেন পাশে থাকার। ফিরহাদের কথায়, কাশ্মীরে কাজ করতে যাওয়া ভিন রাজ্যের শ্রমিকদের নিরাপত্তার দায়িত্ব কেন্দ্রের। কেন্দ্রকেই এর জবাব দিতে হবে।
আরও পড়ুন: বছরের পর বছর পেট ভরায় কাশ্মীর, এই প্রথম লাশ পাঠাল বাহালনগরে
ওই পাঁচ জনের সঙ্গে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন জহিরুদ্দিন। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় শ্রীনগরের হাসপাতালেই রাখা হয়েছে তাঁকে। তবে ওই শ্রমিক দলের সঙ্গে থাকলেও খাবার আনতে গিয়েছিলেন বলে প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন বসিরুল সরকার। তাঁকেও কলকাতায় আনা হয়েছে। ঘটনার অভিঘাতে তিনি এখনও সন্ত্রস্ত। স্বাভাবিক ভাবে কথা বলার অবস্থাও নেই তাঁর। বিমানবন্দরে পৌঁছতেই বিশেষ অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে তড়িঘড়ি এসএসকেম হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানেই ট্রমাকেয়ার ইউনিটে তাঁকে রাখা হয়েছে।