Dehradun

Murder: দেহরাদূনের খাদে উদ্ধার দুর্গাপুরের তরুণীর দগ্ধ দেহ, ধৃত ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’, নজরে আরও দুই

দেহরাদূনে মেয়ের সঙ্গে মায়ের শেষ বার কথা হয়েছিল গত ২৮ এপ্রিল। তার পরেও ফোন করা হয়েছে। সেই সব ফোন ধরত মেয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, এক পরিচিত যুবক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২১ ০৭:২৭
Share:

নিবেদিতা মুখোপাধ্যায় ও অঙ্কিত চৌধুরী

দেহরাদূনে মেয়ের সঙ্গে মায়ের শেষ বার কথা হয়েছিল গত ২৮ এপ্রিল। তার পরে বার বার ফোন করা হয়েছে। সেই সব ফোন ধরত মেয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, এক পরিচিত যুবক। পরিবারের অভিযোগ, দুর্গাপুরের কাছে অণ্ডালের মেয়ে নিবেদিতা মুখোপাধ্যায় রাগ করে চলে গিয়েছেন, তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে কেঁদেকেটে মাস দেড়েকেরও বেশি তাঁদের কার্যত বোকা বানিয়ে রেখেছিল ওই যুবক।

Advertisement

কিছু একটা অঘটন যে ঘটেছে, ১৫ জুন নিবেদিতার জন্মদিনের পরেই তাঁর স্বজনেরা তার আঁচ পান। সড়কপথে দেহরাদূনে পৌঁছন তাঁরা। তার পরেই পুলিশের সাহায্যে রহস্যভেদ। ২৫ বছরের তরুণীকে খুন করে দেহ জ্বালিয়ে মসূরীর কাছে কিমারির পাহাড়ি খাদে ফেলে দেওয়া হয় বলে জানতে পেরেছে উত্তরাখণ্ডের পুলিশ। খুনের অভিযোগে সেই বন্ধু অঙ্কিত চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

দেহরাদূনের রাজপুর থানার ইনস্পেক্টর তথা এই খুনের মামলার তদন্তকারী অফিসার রাকেশ শাহ বুধবার বলেন, “নিবেদিতার সঙ্গে ঝগড়ার জেরেই অঙ্কিত তাঁকে ছাদ থেকে ঠেলে ফেলে দেয়। প্রমাণ লোপাট করতেই দেহটি পেট্রল ঢেলে জ্বালিয়ে খাদে ফেলে দেওয়া হয়।” দেহরাদূনের এসএসপি যোগেন্দ্র সিংহ রাওয়ত শোকার্ত ও উদ্বিগ্ন পরিবারটির সঙ্গে কথা বলেই তদন্তের নির্দেশ দেন। খাদে দেহ ফেলার সময়ে অঙ্কিতের সঙ্গে থাকা এক বন্ধু এবং তার বাবাকে এখনও খুঁজছে পুলিশ।

Advertisement

৩১ বছরের যুবক অঙ্কিত আদতে উত্তরপ্রদেশের সহারনপুরের বাসিন্দা। দেহরাদূনে ইমারতি দ্রব্য সরবরাহের কাজ করত সে। নিবেদিতার দিদি অন্তরা মুখোপাধ্যায় জানান, তাঁর বোন দিল্লিতে বিউটি পার্লারে কাজ করতে গিয়েছিলেন দু’বছর আগে। রুশ ভাষা শিখে দেহরাদূনে দোভাষী ও অনুবাদের কাজ করতে যান গত বছর। “অঙ্কিতের সঙ্গে ওর ভালবাসার সম্পর্ক, একসঙ্গে থাকা— সব কিছুই আমরা জানতাম। দেওয়ালিতে অঙ্কিতের বাড়ি থেকে বোন ভিডিয়ো কলও করেছে। ছেলেটি এত বড় ক্ষতি করবে, বুঝিনি,” বলেন অন্তরা।

অন্তরার বক্তব্য, তাঁর মাকে মিথ্যে বলে কান্নাকাটি করে ভুল বোঝানোর পাশাপাশি নিবেদিতার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকেও নজরদারি চালাত অঙ্কিত। কিছু দিন যাবৎ অঙ্কিতকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না। নিবেদিতার জন্মদিনে অন্তরাই তাঁদের মাসতুতো বোনের প্রোফাইল থেকে নিবেদিতাকে মেসেজ করেন। তার পরে সেই বোনকে ফোন করে অঙ্কিত। তখনই প্রথম অঙ্কিত জানায়, নিবেদিতা ছাদ থেকে পড়ে মারা গিয়েছেন। পুলিশের বক্তব্য, ঠান্ডা মাথার অপরাধী অঙ্কিত মিথ্যে বলে প্রমাণ লোপাটের মতলবেই নিবেদিতার পরিবারকে ঠেকিয়ে রাখতে চেয়েছিল।

২৩ জুন অন্তরা, নিবেদিতার বাবা ইসিএলের আধিকারিক হলধরবাবু এবং কয়েক জন আত্মীয় দেহরাদূনে পৌঁছন। এসএসপি সব শুনে তদন্তের নির্দেশ দেন। সহারনপুর থেকে অঙ্কিতকে ধরে আনে পুলিশ। ২৬ জুন বিকেলে মসূরীর পাহাড়ি খাদ থেকে নিবেদিতার দেহাংশ উদ্ধারের সময় তাঁর স্বজনেরাও সেখানে ছিলেন। তত দিনে দেহ কার্যত কঙ্কালসার হয়ে গিয়েছিল। পুলিশের দাবি, রাজপুরের ভাড়াবাড়ির চারতলার ছাদ থেকে নিবেদিতাকে ফেলে খুন করা এবং পরে দেহ জ্বালিয়ে খাদে ফেলার বিষয়টি কবুল করেছে অঙ্কিত।

হরিদ্বারের গঙ্গায় নিবেদিতার অস্থি ভাসিয়ে বুধবারেই ফিরে এসেছেন তাঁর স্বজনেরা। তাঁরা এখন বাঁকুড়ার মেজিয়ায় দুর্লভপুরে নিবেদিতার মামার বাড়িতে। দেহরাদূনে পুলিশের সহৃদয়তা ও সহযোগিতায় তাঁরা মুগ্ধ। তবে কোভিড পরিস্থিতিতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নিবেদিতার পরিজনের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে পারেনি পুলিশ। অন্তরা বলেন, “বোনের খুনি শাস্তি পাক, এটুকুই চাই। পুলিশ ডিএনএ-র নমুনা দিতে বললে ফের দেহরাদূন যাব।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement