বাঙালিকে অন্য চোখে দেখতে শিখিয়েছিলেন

তাঁর নিজের উচ্চতা ছিল ৪ ফুট ১১ ইঞ্চি। সে তো তাঁর নিজস্ব। কিন্তু, বাঙালিকে যে উচ্চতায় তুলে নিয়ে গিয়েছেন তিনি, সেটা মাপার মতো যন্ত্র বোধহয় এখনও আবিষ্কার করতে পারিনি আমরা।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৬ ০০:৩১
Share:

তাঁর নিজের উচ্চতা ছিল ৪ ফুট ১১ ইঞ্চি। সে তো তাঁর নিজস্ব। কিন্তু, বাঙালিকে যে উচ্চতায় তুলে নিয়ে গিয়েছেন তিনি, সেটা মাপার মতো যন্ত্র বোধহয় এখনও আবিষ্কার করতে পারিনি আমরা।

Advertisement

মনোহর আইচ চলে গেলেন। সর্ব অর্থেই অনন্য এক বঙ্গজ বিশ্বশ্রী। কেন অনন্য? কোন পটভূমিতে তৈরি হচ্ছিলেন তিনি? কোমল নদীমাতৃকতায় লালিত এক পরিসর, যেখানে জীবন শুধু মাছে-ভাতে-দুধে-কলায় নির্ভর, জীবনচর্যা কর্ম ও শরীরচর্চা বিমুখ। অথবা রেনেসাঁর ছটা সর্ববিস্তারী, যেখানে মনন এবং মস্তিষ্কের চর্চাই জীবনের একমাত্র ধর্ম বলে মনে করছে বাঙালি (ঠাকুরবাড়ির কুস্তির আখড়া সেখানে নিছকই ব্যতিক্রম)। শরীর এক মন্দির, স্বাস্থ্য এক স্বপ্ন— এই ভাবনায় বাঙালিকে যাঁরা প্রথম ভাবাতে শুরু করলেন, তাঁদের অন্যতম মনোহর আইচ।

পেশীর অসাধারণ সৌষ্ঠবেও যে ছন্দ আছে, স্বাস্থ্যের উদ্বেল প্রকাশে যে উৎসব আছে, শরীরচর্চায় যে জীবনের গান রয়েছে, এই কথাটা বাঙালির সামনে প্রকাশ করেছিলেন ৪ ফুট ১১ ইঞ্চির এই বঙ্গসন্তান। মননচর্চী বাঙালি শরীরের দিকেও যে সম্ভ্রমের দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল তারও কারণ ছিলেন তিনি। বাঙালির স্বাস্থ্যের চর্চায় এখনও হয়ত বৃহৎ কোনও বিপ্লব হয়নি। কিন্তু তবু ম্যালেরিয়াদীর্ণ, প্লীহাক্লিষ্ট, আমাশয়ক্লান্ত বাঙালিকে অন্তত একটা স্বপ্ন দেখাতে পেরেছিলেন যিনি, সেই মনোহর আইচ রবিবার চলে গেলেন।

Advertisement

বস্তুত, খর্ব এক বঙ্গসন্তান তাঁর জাতির গৌরবময় অতীত এবং সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের মধ্যে সেতু বন্ধনের কাজ করেছেন। সমুদ্রের উতরোল প্রতিকূলতা পেরিয়ে বিজয় সিংহের লঙ্কা জয় এবং বহুযুগ পেরিয়ে বসন্ত সিংহের এভারেস্ট স্পর্শ— এই দুইয়ের মধ্যে একটাই সেতু, ৪ ফুট ১১ ইঞ্চির। মনোহর আইচ, আপনাকে প্রণাম।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement