পঞ্চায়েত ভোটের কয়েক মাস আগে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বদলির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। — ফাইল চিত্র।
ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতের ভিত্তিতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বদলির প্রক্রিয়া শুরু করতে চলেছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। পঞ্চায়েত ভোটের কয়েক মাস আগে একই সঙ্গে ৬০৫ জন শিক্ষক এবং শিক্ষিকার বদলির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) সুপারিশের ভিত্তিতে এই বদলি করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছিল। ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতের ভিত্তিতে এই বদলিকে বলা হয় ‘সারপ্লাস ট্রান্সফার’। এই নিয়মে কোনও স্কুলে ছাত্রের তুলনায় শিক্ষক বেশি হলে, শিক্ষকের প্রয়োজন রয়েছে এমন স্কুলে তাঁকে বদলি করা যেতে পারে।
সেই নিয়ম মেনেই ওই ৬০৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার বদলি হয়েছে বলে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছিল। কিন্তু পাল্টা রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনগুলি অভিযোগ করে, সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে প্রকাশ্যে নিজেদের মতামত জানানোয় শাস্তিমূলক ভাবে ওই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বদলি করা হয়েছে। এর পর শিক্ষা দফতর থেকে মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে জানানো হয়, বদলির তালিকাটি পর্যালোচনা করা হবে। যত দিন না পর্যালোচনার কাজ শেষ হচ্ছে, তত দিন বদলির আদেশ দেওয়া যাবে না। গত ১৪ অগস্ট শিক্ষা দফতর মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে জানিয়েছে, তালিকায় থাকা ১১২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার বদলির পর্যালোচনা করেছে তারা। তাই ১১২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে বাদ রেখে বাকিদের বদলির সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে পদক্ষেপ নিতে পারে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। তাঁদের বদলির নির্দেশ দিতে আর কোনও বাধা নেই বলেও জানানো হয়।
ওই ১১২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে বাদ রেখে বাকি ৪৯৩ জনের বদলির সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে উদ্যোগ শুরু হয়েছে বলে খবর। কিন্তু পাল্টা অভিযোগ উঠছে, পর্যালোচনার পরেও এমন অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা তালিকায় রয়ে গিয়েছেন, যাঁদের বদলির কোনও যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির নেতা স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘এখনও এমন অনেকেই বদলির তালিকায় রয়েছেন, যাঁদের নিজের বাড়ি থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে বদলি করা হয়েছে। সেখানে অসুস্থ শিক্ষক-শিক্ষিকারাও যেমন রয়েছেন। তেমনই ছোট বাচ্চা রয়েছে, এমন শিক্ষিকাদের কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদ বা সাগরের মতো জায়গায় বদলি করা হয়েছে।’’
তবে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির কার্যকরী সভাপতি বিজন সরকার পাল্টা বলেছেন, ‘‘কোনও কোনও স্কুলে দেখা যায়, শিক্ষকের থেকে ছাত্রের সংখ্যা কম। তখন প্রয়োজন মনে করে অন্য স্কুলে যেখানে শিক্ষকের প্রয়োজন আছে সেখানে পাঠানো যেতেই পারে। কারণ আমরা শিক্ষক হয়েছি তো ছাত্রছাত্রীদের জন্যই। আর এই নির্দেশ তো আদালতের নির্দেশের পর কার্যকর করা হচ্ছে, সরকার তো কোনও সিদ্ধান্ত জোর করে চাপিয়ে দিচ্ছে না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘যাঁদের সত্যি সত্যিই অসুবিধা রয়েছে, প্রয়োজনে তাঁদের বিষয়গুলি আবারও বিবেচনা করা হোক। কিন্তু সরকারি সিদ্ধান্ত মানব না, এমন মতের সঙ্গে আমরা সহমত নই। সরকারি চাকরিতে বদলি কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। তাই ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে শিক্ষকদেরও নিজেদের সিদ্ধান্ত ভেবে দেখার অনুরোধ জানাব।’’