BL Santhosh

BJP: বৈঠকে বিপ্লব চলবে না, রাজ্য বিজেপি নেতাদের কড়া বার্তা অসন্তুষ্ট সন্তোষের

জাতীয় গ্রন্থাগারের ভাষা ভবনের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সন্তোষ সরাসরি নেতাদের প্রকাশ্যে মুখ খোলার নিন্দা করেছেন। চুপ থাকার মন্ত্রও শিখিয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২১ ১৩:০০
Share:

গত সোমবার কলকাতায় এসে নতুন রাজ্য কমিটির নেতাদের নিয়ে বৈঠকে সংযমের পাঠ দিয়ে গিয়েছেন সন্তোষ।

রাজ্য কমিটিতে মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নেই অভিযোগ তুলে সম্প্রতি পাঁচ বিজেপি বিধায়ক বি‌দ্রোহ দেখিয়েছেন। তাঁরা দলীয় হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন। সেই পদক্ষেপ দলকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। তারই মধ্যে জেলা সভাপতি পছন্দ না হওয়ায় একই পদ্ধতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাঁকুড়ার বিধায়করা। তারও আগে সদ্যসমাপ্ত কলকাতা পুরসভা নির্বাচনের সময়ে বারংবার দলবিরোধী বক্তব্য পেশ করে গেরুয়া শিবিরের অস্বস্তি বাড়িয়েছেন রাজ্যসভার সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। আবার সাম্প্রতিক কালে খানিকটা সামলে গেলেও অতীতে বহুবার দলের অস্বস্তি বাড়িয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের শাসনের মুখে পড়েছেন প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
এমন আবহে কলকাতায় এসে সেই সব ঘটনাকে একত্রিত করে সতর্কবার্তা দিয়ে গেলেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতা বিএল সন্তোষ (যিনি দলের অন্দরে ‘বিএলএস’ বলে পরিচিত)। রাজ্য ও জেলা নেতাদের সন্তোষ একযোগে বলে দিয়েছেন, আলোচনায় অংশ নেওয়া যাবে। কিন্তু কথায় কথায় সমালোচনা করা যাবে না। একই সঙ্গে সতর্কতার সুরেই চুপ থাকার মন্ত্রও শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন তিনি।

Advertisement

বিজেপি-তে সাংগঠনিক ভাবে সভাপতির পরেই গুরুত্বপূর্ণ পদ সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন)। সেই দায়িত্বে-থাকা সন্তোষ বিজেপি-র নতুন রাজ্য কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর দিনই দিল্লিতে নিজের বাড়িতে ডেকেছিলেন রাজ্যের তিন শীর্ষনেতাকে। গত বৃহস্পতিবার সেই বৈঠকে হাজির ছিলেন যথাক্রমে প্রাক্তন ও বর্তমান রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং সুকান্ত মজু‌মদার‌। ছিলেন রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী। বিজেপি সূত্রে খবর, সেই বৈঠকেই সন্তোষ রাজ্য নেতাদের বুঝিয়ে দেন, এ বার পশ্চিমবঙ্গে নতুন পথে সংগঠন তৈরির পরিকল্পনা করছেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তরুণদের দলে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি সংগঠনে শৃঙ্খলারক্ষাকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হবে। যে কোনও বিষয়ে মুখ খোলা বন্ধ রেখে নেতাদের ‘সংযমী’ হতে হবে। সেই বৈঠকের পরে গত সোমবার কলকাতায় এসে নতুন রাজ্য কমিটির নেতাদের নিয়ে বৈঠকে সংযমের পাঠ দিয়ে গিয়েছেন সন্তোষ।

বিজেপি সূত্রের খবর, জাতীয় গ্রন্থাগারের ভাষা ভবনের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সন্তোষ সরাসরি নেতাদের মুখ খোলার নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘রাজ্যের বৈঠকে প্রয়োজনের বেশি কথা বলা ঠিক নয়। জেলার বৈঠকে, মণ্ডল বৈঠকে আলোচনার সময় কেউ কথা বলেন না। অথচ সমালোচনা করতে ছাড়েন না! এটা ঠিক নয়।’’ সেখানেই থামেননি সন্তোষ। তিনি বলেন, ‘‘আমরা দীর্ঘ সময় বাংলায় থাকার জন্য এসেছি। কেউ ভাবতে পারেন আমি পাঁচ বছরের জন্য বিধায়ক, আমি তিন বছরের জন্য রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছি। কিন্তু আমরা অনেক লম্বা সময়ের জন্য থাকতে এসেছি। কারও যদি বয়স হয়ে যায়, তবে তিনি অবসর নিতে পারেন। কিন্তু তার পরে তাঁদের উত্তরাধিকারীরা এখানে রয়ে যাবেন।’’

Advertisement

এই প্রসঙ্গেই সন্তোষ আরও বলেন, ‘‘সংযম চাই। বৈঠকের মধ্যে অনেক কথা বলে দিতেই পারি। কিন্তু বলব না। সঠিক জায়গায় গিয়ে বলব। সামনের মানুষটা ভুল করলেও সঙ্গে সঙ্গে বিরোধিতা করার দরকার নেই। থামতে জানতে হবে। কথা বলে বড় হওয়া যায় না। চুপ থেকেই বড় হওয়া যায়।’’ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর উদাহরণ দিতে গিয়ে তাঁর থেমে থেমে বক্তৃতা করার প্রসঙ্গ টেনে সন্তোষ বলেন, ‘‘দুই বাক্যের মধ্যে নীরব থাকার সময়টা বাক্যের থেকে বেশি শক্তিশালী। বাজপেয়ীজির নীরবতার সময়টা নিয়ে অনেক ব্যাখ্যা হত। অনেক মানে বার করা হত।"

‌শাসনের পাশাপাশি আগামী দিনে বাংলায় গেরুয়া শিবির কোন পথে রাজনীতি করবে, তার দিশাও দিয়েছেন সন্তোষ‌। রাজ্য নেতৃত্বকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তৃণমূলকে ক্ষমতাচ্যূত করার রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের বাইরেও বিজেপি-র অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে শুধু তৃণমূল চ্যালেঞ্জ নয়। আরও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তৃণমূল একটা রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ। সেটা তো কখনও না কখনও শেষ হবেই। আর শেষ হওয়ার দিকেই এগোচ্ছে তৃণমূল।’’ ওই বৈঠকে উপস্থিত এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘‘সন্তোষজি বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, সংযমের সঙ্গে সংগঠনকেও মজবুত করতে হবে।

ইংরেজি প্রবাদ উল্লেখ করে তৃণমূল সম্পর্কে সন্তোষ বলেন, ‘‘বেশি বাড় ভাল নয়, পরিণতি খারাপ হবে। তাই অল্পদিনের কথা না ভেবে দীর্ঘস্থায়ী চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে।’’ ওই বিষয়ে দলকে কোন পথে হাঁটতে হবে, তাও বলে দেন সন্তোষ। শুধু বলেন না, ওই বৈঠকে উপস্থিত বিজেপি নেতাদের দিয়ে বলিয়ে নেন নিজের কথা। সন্তোষ বলেন, "চরমপন্থাকে গণতন্ত্র গ্রহণ করে না। কিছুদিনের জন্য সাফল্য মিলতে পারে কিন্তু একটা সময় তা বাতিল হয়ে যায়। জনতার কল্যাণসাধণের মধ্যমপথই গণতন্ত্রের পথ। আমরা দক্ষিণপন্থী নই। হিটলার দক্ষিণপন্থী ছিলেন। আমরা জাতীয়তাবাদী। এটাই মধ্যম পথ। বামও নয়, দক্ষিণও নয়।"

তবে সন্তোষের সোমবারের বক্তব্যের মধ্যে দলীয় নেতাদের সংযম প্রসঙ্গই এখন রাজ্য বিজেপি-তে চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। সকলেই বুঝতে পেরেছেন, কথায় কথায় দলীয় সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা বা ব‌েঁফাস কথাবার্তা নেতৃত্ব পছন্দ করছেন না। অনেকে মনে করছেন, সন্তোষের কলকাতা সফরের মূল সুরটাই ছিল, ক্ষুব্ধদের সতর্ক করা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement