ভিড় নেই, সিঙ্গুরের সভায় বক্তব্য রাখছেন শুভেন্দু অধিকারী। ছবি: দীপঙ্কর দে।
চাষিদের পাশে দাঁড়াতে মঙ্গলবার থেকে কাল, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির অবস্থান কর্মসূচির প্রথম দিন কার্যত ‘ফ্লপ-শো’ দেখল সিঙ্গুর। যাঁদের জন্য আন্দোলন, সেই কৃষকদের দেখা মিলল না। নেতারা মঞ্চ থেকে নেমে গাড়ি ছোটাতেই অবস্থান-স্থলে হাতেগোনা পাঁচ জনকে বসে থাকতে দেখা গেল!
সভায় এসে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছেন, “চাষিদের বিনামূল্যে সার ও আলুবীজ দিতে হবে। রাজ্যে আত্মঘাতী তিন চাষির পরিবারকে ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ এবং চাকরি দিতে হবে। এই দাবি না মানলে সিঙ্গুর থেকে নবান্ন অভিযান হবে।”
দুপুরে একটি ছোট মিছিল করে গোপালনগরে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে অবস্থান-স্থলে আসেন আন্দোলনকারীরা। মঞ্চে শুভেন্দু ছাড়াও দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, তাঁর দুই পূর্বসূরী দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিংহেরা ছিলেন। অল্প কিছু কর্মী-সমর্থকের সামনে তাঁরা নবান্নের ১৪ তলা থেকে তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষমতাচ্যুত করার আওয়াজ তোলেন। মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে সুকান্ত বলেন, “উনি নাকি গোয়াকে পশ্চিমবঙ্গ বানাবেন! তা হলে তো এই রাজ্য থেকে যে সব শ্রমিক সেখানে কাজে গিয়েছিলেন, তাঁদের কাজ হারিয়ে পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে পশ্চিমবঙ্গে ফিরতে হবে।”
সিঙ্গুর জমি আন্দোলনের ধাত্রীভূমি। বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে রাজনৈতিক পালাবদলের সূচনাও হুগলির এই ভূখণ্ড থেকে। ফলে, বর্তমান বিরোধী দলের ‘সিঙ্গুর অভিযানে’ চাষিরা কতটা সাড়া দেন, সে দিকে তাকিয়ে ছিল রাজনৈতিক মহল। প্রথম দিন অন্তত সাড়া মেলেনি। ‘অগোছালো’ কর্মসূচির দায় পুলিশের উপরে চাপিয়েছেন রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু। তাঁর বক্তব্য, “পুলিশ লিখিত অনুমতি দেয়নি। আমরা তো ঝুঁকি নিতে পারি না। পুলিশ বহু ক্ষেত্রেই কথা দিয়েও শেষে আটকে দেয়।” হুগলি গ্রামীণ জেলার এসপি আমনদীপের বক্তব্য, সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার পরে পুলিশকে ওই কর্মসূচির কথা জানানো হয়। পুলিশ আপত্তি করেনি।
স্থানীয় বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বা প্রবীণ নেতা রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। রবীন্দ্রনাথবাবু সরাসরিই সাংবাদিকদের বলেন, “আমন্ত্রণ পাইনি। গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব কি না বলতে পারব না, তবে মনান্তর তো আছেই।”
বিজেপির আন্দোলনকে কটাক্ষ করে সিঙ্গুরে জমি আন্দোলনের অন্যতম মুখ তথা সিঙ্গুর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তৃণমূলের দুধকুমার ধাড়া বলেন, “বিজেপি জনবিচ্ছিন্ন দল। সিঙ্গুরের চাষিরা তাদের উপেক্ষা করে ফের তা বুঝিয়ে দিলেন।” ইতিহাস টেনে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘বিজেপির সিঙ্গুর অভিযান না হয় বোঝা গেল! সেখানে তৃণমূল নেত্রীর পাশাপাশি রাজনাথ সিংহের কুশপুত্তলিকাও কি দাহ করা হবে? সিঙ্গুরে টাটার কারখানার বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্নামঞ্চে রাজনাথও তো ছিলেন!’’
এ দিন সিঙ্গুর থেকে কলকাতায় ফিরে পুরভোটের দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে প্রচার করেন বিজেপি নেতারা। দিলীপ এ দিন সকালে ১৬ এবং সিঙ্গুর থেকে ফিরে ১৯, ২১ এবং ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে প্রচার করেন। শুভেন্দু প্রচার করেন ২৪ এবং ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থীদের সমর্থনে। রাহুল সভা করেন কলকাতার ২২ এবং ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে।