পাঁচ মাসে পাঁচ বিধায়ক হারিয়েছে বিজেপি। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ
পুজো মিটলেই রাজ্যে চার কেন্দ্রে ভোট। ৩০ অক্টোবর খড়দহ, শান্তিপুর, দিনহাটা ও গোসাবায় উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ। রবিবার ভবানীপুর জয়ের পরে পরেই তৃণমূল প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সোমবার সকালেও চার আসনের প্রার্থীদের নাম ঠিক করে উঠতে পারেনি বিজেপি। আসলে বাকি দুই কেন্দ্র নিয়ে অত চিন্তা না থাকলেও বিজেপি শান্তিপুর ও দিনহাটায় প্রার্থী দেওয়া নিয়ে ভাবনাচিন্তা চালাচ্ছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে এই দুই আসনে দল জয় পাওয়ায় উপনির্বাচনেও লড়াই হবে বলে মনে করছে বিজেপি। দলের হিসাব মতো একটি আসনে জয় নিশ্চিত। তবে‘ঝাঁপানো’ হবে দু’টির জন্যই। কিন্তু সেখানে যদি জয় মেলে তবে সেই বিধায়করা মুকুল রায়ের মতো তৃণমূল শিবিরে চলে যাবে না তো! এই চিন্তা থেকেই বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্ব এমন প্রার্থী বাছতে চাইছেন, যাঁরা দলের প্রতি একান্ত অনুগত।
২ মে ফল ঘোষণা হয়েছিল। তার এক মাস কাটতে না কাটতেই প্রথম দলে ছেড়ে দেন কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক মুকুল রায়। মুকুলের পরে পরেই বিষ্ণুপুরের তন্ময় ঘোষ, বাগদার বিশ্বজিৎ দাস, কালিয়াগঞ্জের সৌমেন রায়, রায়গঞ্জের কৃষ্ণ কল্যাণী। পাঁচ মাসে পাঁচ জন। এই প্রবণতা এখনও চলবে বলেই শঙ্কা বিজেপি শিবিরে। কমপক্ষে ছ’জন বিধায়ক রয়েছেন দলের আতশকাচের তলায়। এমন পরিস্থিতিতে উপনির্বাচনের প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে চিন্তা গেরুয়া শিবিরে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবা এবং উত্তর ২৪ পরগনার খড়দহ আসনে বিধানসভা নির্বাচনে জয় পেয়েছিল তৃণমূল। গোসাবায় ব্যবধান ছিল ২৩,৬১৯ এবং খড়দহে ২৮,১৪০ ভোট। দুই জায়গায় জয়ী যথাক্রমে জয়ন্ত নস্কর ও কাজল সিংহের মৃত্যুতেই হচ্ছে উপনির্বাচন। তবে এই দুই কেন্দ্রে যে হেতু অনেকটা পিছিয়ে থেকে লড়াই, তাই অতটা গুরুত্ব দিচ্ছে না বিজেপি। গোসাবায় এপ্রিলের নির্বাচনে বিজেপি-র প্রার্থী হওয়া বরুণ প্রামাণিক গেরুয়া শিবিরে এসেছিলেন তৃণমূল থেকে। ভোটে হারের পরে পুরনো শিবিরে ফিরে গিয়েছেন তিনি। আবার খড়দহে পরাজিত প্রার্থী শীলভদ্র দত্তও বিজেপি-তে এসেছিলেন তৃণমূল থেকে। তিনি পুরনো শিবিরে এখনও না ফিরলেও বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে শীলভদ্র উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে চান না বলে দলকে জানিয়ে দিয়েছেন। এই দুই কেন্দ্রেও বিজেপি এমন প্রার্থী দিতে চাইছে যাঁরা জয়ের সম্ভাবনা না থাকা সত্ত্বেও লড়াইয়ের ময়দানে থাকবেন। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতার থেকে কাছাকাছি খড়দহ আসনকে তুলনামূলক ভাবে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে দল। এখানে দলের কোনও পরিচিত মুখকে প্রার্থী করা হতে পারে। প্রাথমিক পরিকল্পনায় এমনটাও স্থির হয়েছে যে, ভবানীপুরের মতো খড়দহেও দলের রাজ্য সহ-সভাপতি তথা ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহকে সামনে রেখে লড়বে দল।
তবে বিজেপি-র মূল চিন্তা শান্তিপুর ও দিনহাটা নিয়ে। কারণ, এই আসন দু’টিতে দলের দুই সাংসদ জগন্নাথ সরকার ও নিশীথ প্রামাণিক জিতেছিলেন। এর মধ্যে নিশীথ এখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। সাংসদ পদ ধরে রাখতে তাঁদের দু’জনেরবিধায়কের আসন ছেড়ে দেওয়াতেই এই দুই কেন্দ্রে উপনির্বাচন। কোচবিহারের দিনহাটায় বিধানসভা নির্বাচনে নিশীথ জিতেছিলেন মাত্র ৫৭ ভোটে। ফলে জেতা আসন হলেও উপনির্বাচনে বেশ কঠিন দিনহাটা। ক্ষমতাসীন তৃণমূলের সঙ্গে এখানে লড়াইয়ে থাকতে হলে বড় পরিমাণে ভোটদান দরকার। এপ্রিলে এই আসনে ভোটের হার ছিল ৮১.৫৪ শতাংশ। তাতেই কোনওক্রমে জয় মেলে বিজেপি-র। উপনির্বাচনে সাধারণ ভাবে কম ভোট পড়ে। ফলে লড়াইও কঠিন হবে বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে।
রইল বাকি শান্তিপুর। এই আসনে জগন্নাথ জিতেছিলেন ১৫,৮৭৮ ভোটে। কিন্তু উপনির্বাচনের অঙ্ক যে আলাদা সেটাও মাথায় রাখছেন বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্ব। এপ্রিলে ভোট পড়েছিল ৮৬.১৬ শতাংশ। উৎসবের মরসুমে উপনির্বাচনে ভোটের হার কেমন হবে সেই হিসেবও মাথায় রাখছে বিজেপি। তবে চারটি আসনের উপনির্বাচনের মধ্যে পুরনো অঙ্কের বিচারে গেরুয়া শিবিরের ভরসা এখানেই বেশি। কিন্তু প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করতে চিন্তায় রাজ্যের নেতারা।
৩০ অক্টোবর এই রাজ্যের চার আসনের সঙ্গে সঙ্গে গোটা দেশে মোট ৩০ আসনে হবে উপনির্বাচন। একই দিনে রয়েছে তিনটি লোকসভা আসনের ভোটগ্রহণও। রবিবার থেকেই বিজেপি সেই সব আসনের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই মহারাষ্ট্র, তেলঙ্গানা, মিজোরামের প্রার্থীদের নাম জানিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তবে সোমবার দুপুর পর্যন্ত বাংলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। রাজ্য ও জেলা নেতাদের পাশাপাশি দুই সাংসদ জগন্নাথ ও নিশীথের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিটি আসনের জন্য তিনটি করে নামের তালিকাও তৈরি হয়েছে। কিন্তু চূড়ান্ত হয়নি। পিছনে একটাই কারণ। জয় পেয়েও যেন ভয়ে না থাকতে হয়।