১৭ সেপ্টেম্বর ৭১-এ পা দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র
সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্মমাস। জন্মেছিলেন ১৯৫০ সালে। সেই হিসাবে ১৭ সেপ্টেম্বর ৭১-এ পা দেবেন তিনি। এই ৭১ সংখ্যাকেও গুরুত্ব দিয়ে জন্মদিন থেকে শুরু করে সেপ্টেম্বর মাসের বাকি দিনগুলির সঙ্গে অক্টোবরের প্রথম কয়েকটা দিনও দেশজুড়ে চলবে মোদী-পক্ষ পালন। বিজেপি-তে এটা নতুন নয়। মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেই এটা শুরু হয়। ফি বছর গেরুয়া শিবির মোদীর জন্মদিন থেকে সাত দিন ‘সেবা সপ্তাহ’ পালন করে। এ বার আর সপ্তাহ নয়, চলবে এক পক্ষ কালেরও বেশি সময় ধরে। তাই সময় শেষের বাধা অতিক্রম করতে কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে ‘সেবা ও সমপর্ণ অভিযান’।
শুরুর দিনটা তো ঠিকই আছে। কিন্তু শেষের দিনটা রাজ্য অনুযায়ী ছাড় দেওয়া হয়েছে বলে বিজেপি সূত্রে খবর। আসলে অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই গোটা দেশে উৎসবের মরসুম শুরু হয়ে যাবে। আগামী ৬ অক্টোবর মহালয়া। বাংলায় দেবীপক্ষের সূচনা ৭ অক্টোবর। পুজোর আমেজ চলে আসবে। তাই রাজ্য বিজেপি-র পরিকল্পনা ৮ তারিখেই শেষ করা হবে কর্মসূচি। যদিও এখনও বিস্তারিত পরিকল্পনা তৈরি হয়নি।
তবে শুধু বাংলা তো নয়, এই কর্মসূচি গোটা দেশের। ২০২৩ সালে মোদী ৭২-এ পা দেওয়ার আগেই রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড-সহ সাত রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। সেই রাজ্যের মধ্যে রয়েছে গুজরাতও। বিজেপি সূত্রে খবর, কোভিড পরিস্থিতির মোকাবিলায় ‘বিনামূল্যে ভ্যাকসিন’ এবং ‘গরিব কল্যাণ যোজনা’ হবে এই কর্মসূচিতে প্রচারের মূল দুই বিষয়। বাংলায় অবশ্য আরও একটু এগিয়ে ভাবছেন রাজ্যের নেতারা। কেন্দ্রের যে প্রকল্পগুলি রাজ্য সরকার নিজের দাবি করে বলে বিজেপি-র অভিযোগ, সেগুলি সম্পর্কে গেরুয়া শিবিরের বক্তব্যও তুলে ধরা হবে এই অভিযান পর্বে।
বাংলায় ইতিমধ্যেই তৈরি ‘মোদী-ব্যাগ’। নিজস্ব চিত্র
কী ভাবে বিজেপি ‘মোদী-পক্ষ’ পালন করবে তার একটা রূপরেখাও তৈরি করেছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সেই মতো রাজ্যের কাছে নির্দেশাবলীও এসে গিয়েছে। ঠিক হয়েছে, ‘গরিব কল্যাণ যোজনা’র প্রচারে মোদীর ছবি লাগানো ১৪ কোটি ব্যাগ দেশে উপহার হিসেবে বিলি করা হবে। করোনাকালে কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া মাথাপিছু ৫ কেজি রেশন দেওয়ার কথাও সেই সময়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলতে হবে। গরিব মানুষের জন্য মোদী কী কী করেছেন তার ভিডিয়ো তৈরি করেও নেট মাধ্যমে ছড়াতে হবে। এটা করবে দলের আইটি সেল। সব রাজ্য মিলিয়ে ৫কোটি চিঠি পাঠানো হবে মোদীর ঠিকানায়। প্রতিটি পোস্টকার্ডে ‘ধন্যবাদ মোদীজি’ লেখা থাকবে।
মোদী যে হেতু ৭১ বছরে পা দিচ্ছেন, তাই দেশের ৭১টি জায়গায় নদীর পাড় বেছে নিয়ে সেখানে ঘটা করে স্বচ্ছতা অভিযান চলবে। দেশের সব নাগরিককে করোনার টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে মোদী কী উদ্যোগ নিয়েছেন তার ভিডিয়ো তৈরি করা হবে। বিভিন্ন জায়গায় কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প সম্পর্কে বলতে আলোচনাসভা থেকে ছোট জনসভা করা হবে। জেলা অনুসারে স্থানীয় ভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টজনদের ওই সভায় যুক্ত করতে হবে। বিশিষ্টজনদের দিয়ে সংবাদমাধ্যমে মোদী ও তাঁর ‘কর্মকাণ্ড’ নিয়ে নিবন্ধ প্রকাশ করতে হবে। করোনাকালে অভিভাবকহীন হয়ে পড়া শিশুদের তালিকা তৈরির কাজও এই সময়ে করতে হবে বিজেপি নেতা-কর্মীদের।
রাজ্য বিজেপি সূত্রে খবর, এই কর্মসূচিতে যাতে মূল দলের পাশাপাশি সব সংগঠন অংশ নেয় তার নির্দেশও এসেছে। বলা হয়েছে, প্রতিটি শাখা সংগঠন আলাদা আলাদা কর্মসূচিও নিতে পারে। জানা গিয়েছে, বাংলায় এই সময়টায় ‘কৃষক ও জওয়ান সম্মান’ কর্মসূচিও নেওয়া হবে। তাতে কৃষকদের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার পাশাপাশি যে সব জায়গায় অতীতে কোনও সেনাকর্মী শহিদ হয়েছেন তাঁদের পরিবারের হাতে স্মারকসম্মান তুলে দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি রাজ্যে রাজনৈতিক সঙ্ঘাতে মৃতদের পরিবারের কাছেও যাওয়া হবে। একই সঙ্গে বৃদ্ধাশ্রম থেকে অনাথাশ্রামে দলের নেতা, কর্মীদের পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
বিজেপি সূত্রে এ-ও জানা গিয়েছে যে, মোদী সাম্প্রতিক কালে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে যে সব স্মারক উপহার পেয়েছেন তার নিলামের ব্যবস্থা করা হতে পারে। তবে সেটা হলে কেন্দ্রীয় ভাবে আয়োজন হবে। মোদীর জন্মদিন পালনের এই সময়ের মধ্যেই ২৫ সেপ্টেম্বর বিজেপি-র অন্যতম ‘আদর্শ-পুরুষ’ দীনদয়াল উপাধ্যায় ও ২ অক্টোবর মহাত্মা গাঁধীর জন্মদিন রয়েছে। সেই দু’টি দিনেও সব রাজ্যে ‘সেবামূলক’ কর্মসূচি নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।