শুভেন্দু অধিকারী ও দিলীপ ঘোষ। — ফাইল চিত্র
নতুনদের দূরে রাখা চলবে না। নীলবাড়ি দখলের লক্ষ্যে সকলকে নিয়ে কাজ করতে হবে। রাজ্য বিজেপি-কে এমন নির্দেশ আগেই দিয়েছেন অমিত শাহ। ইতিমধ্যেই সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। রবিবারই কলকাতা জোনের পর্যবেক্ষক হিসেবে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ‘বিতর্ক’ এড়াতে শোভনের বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কেও কলকাতা জোনেরই সহ-আহ্বায়ক করা হয়েছে। অতঃপর শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে যাঁরা বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন, তাঁদেরও দায়িত্ব দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল।
সোমবার রাজারহাটের একটি হোটেলে রাজ্য বিজেপি-র শীর্ষনেতৃত্ব বৈঠকে বসছেন। সূত্রের খবর, সেখানে অন্যতম আলোচ্য গত ১৯ ডিসেম্বর মেদিনীপুরে অমিত শাহের সভায় যোগ দেওয়া শুভেন্দু-অনুসারীরা কে, কোথায়, কী ভাবে কাজ করবেন, তা ঠিক করা।
বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পরে এখন দলে ‘সক্রিয়’ শুভেন্দু। একের পর এক সমাবেশ এবং পদযাত্রা করছেন। তাঁর সঙ্গে যোগদানকারী বাকিদেরও ব্যবহার করতে চায় গেরুয়া শিবির। রাজ্যে বিজেপি-র এক নেতার কথায়, ‘‘শুভেন্দুর সঙ্গে আসা ৯ জন বিধায়ক, ১ সাংসদ এবং ১ প্রাক্তন সাংসদকেও ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মেদিনীপুরের সভায় বিভিন্ন দল থেকে আসা পদাধিকারী ও জনপ্রতিনিধিদেরও কাজে লাগানো হবে। কাকে, কোন দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই শুভেন্দুর মতামত শুনেছেন কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের নেতারা।’’
আরও পড়ুন: সিবিআইকে সহযোগিতা করার জন্য রাজীবকে বলেছে রাজ্য: সুব্রত
বিজেপি সূত্রে খবর, সোমবারের বৈঠকে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ছাড়াও উপস্থিত রয়েছেন সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়, কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। রয়েছেন সংগঠন সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তীও।
মেদিনীপুরে অমিতের সভা থেকে শুভেন্দুর সঙ্গে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূল, সিপিএম এবং কংগ্রেস থেকে আসা একঝাঁক নেতানেত্রী। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ওই সব নেতাকে যুবমোর্চা, সংখ্যালঘু মোর্চা, তফসিলি মোর্চা, মহিলা মোর্চার মতো শাখা সংগঠনে আনা হতে পারে বলে বিজেপি সূত্রে জানা যাচ্ছে। অনেকে জেলা কমিটিতেও জায়গা পেতে পারেন। ফলে শীঘ্রই রাজ্য বিজেপি-র বিভিন্ন কমিটিতে বেশ কিছু পরিবর্তন দেখা যেতে পারে। তবে নতুনরা সকলেই যে দায়িত্ব পাবেন বা কমিটিতে থাকবেন, তা নয়। রাজ্য বিজেপি-র এক নেতার কথায়, ‘‘নবাগতদের রাজনৈতিক ওজন এবং জনপ্রিয়তা দেখেই দায়িত্ব ঠিক করা হবে।’’
আরও পড়ুন: ভরসা পেলাম, আপনার উষ্ণতা ছুঁয়ে গেল, মমতাকে চিঠি অমর্ত্যর
সোমবারের বৈঠকে নবাগতদের নিরাপত্তা এবং বর্তমান সাংগঠনিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। নবাগতদের অনেকেরই ‘কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা’ প্রয়োজন বলে শুভেন্দু দলকে জানিয়েছেন। সূত্রের খবর, কোন কোন নেতাকে নিরাপত্তা দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে তার একটি তালিকাও নেতৃত্বকে দিয়েছেন শুভেন্দু। ইতিমধ্যেই তৃণমূল-ত্যাগী সাংসদ সুনীল মণ্ডলকে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে কলকাতায় বিজেপি-র সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসার পথে সুনীলের গাড়িতে তৃণমূল হামলা করেছিল বলে অভিযোগ। বিষয়টি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন কৈলাস।
আরও পড়ুন: ‘পাড়ায় পাড়ায় সমাধান’, দুয়ারে সরকারের পর নতুন কর্মসূচি রাজ্যের
বিধানসভা ভোটে লড়ার জন্য দল এই মুহূর্তে কোন অবস্থায় রয়েছে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্যে বেশ কয়েক দফায় ঘুরে যাওয়া কেন্দ্রীয় নেতারা রিপোর্ট দিয়েছেন। ওই রিপোর্টও নিয়েও সোমবারের এই বৈঠকে আলোচনা হতে পারে।
প্রসঙ্গত, বিধানসভা নির্বাচন জয়ের লক্ষ্যে ভিনরাজ্যের সাত নেতার উপরে দায়িত্ব দিয়েছেন অমিত। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন পাঁচ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা, সঞ্জীবকুমার বালিয়ান, গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত, মুকেশ মাণ্ডবিয়া এবং প্রসাদ সিংহ পটেল। এ ছাড়াও রয়েছেন উত্তর প্রদেশের উপ-মুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রসাদ মৌর্য, মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র। বিজেপি সূত্রে খবর, ওই সাতজনের উপর রাজ্যের ছ’টি করে মোট ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রের দায়িত্ব দিয়েছেন অমিত। সেই সব এলাকায় দলের প্রকৃত সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে সাত নেতা রিপোর্ট দিয়েছেন। সোমবার সেই রিপোর্টেরও পর্যালোচনা হতে পারে।