ছয় আসনের কোনওটি নিয়েই নিশ্চিন্ত নন সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারীরা। — ফাইল চিত্র।
ভোটগ্রহণ বুধবার। তবে প্রধান বিরোধী দল ‘নিশ্চিত’ থাকতে পারছে না মাদারিহাট নিয়েও। উপনির্বাচনে বাকি পাঁচ কেন্দ্রের মতো সেখানেও ‘লড়াই হবে’ আত্মবিশ্বাসই সম্বল বিজেপির।
বুধবার যে ছ’টি আসনে উপনির্বাচন হবে, তার মধ্যে মাদারিহাটে ২০১৬ এবং ২০২১ সালে জিতেছিল বিজেপি। দু’বারই জেতেন মনোজ টিগ্গা। বিজেপির আরও কয়েক জন বিধায়ক গত লোকসভা নির্বাচনে লড়লেও জিতেছিলেন একমাত্র টিগ্গাই। তাঁর জয়ের কারণেই উপনির্বাচন মাদারিহাটে। ছ’টি আসনে লড়াই নিয়ে বিজেপি কতটা আশাবাদী? প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে রাজ্য সভাপতির বক্তব্যে। সুকান্ত মজুমদারের কথায়, ‘‘সাধারণ নির্বাচনেই তৃণমূলের সন্ত্রাস ভারতবিখ্যাত। আর উপনির্বাচনে তো গোটাটাই পুলিশ চালাচ্ছে। গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে দিলে মানুষ তৃণমূলকে সরিয়ে দেবে জেনেই ওরা ভোট করতে দেবে না।’’
গত বিধানসভা নির্বাচনের পরে রাজ্যে অনেক আসনেই উপনির্বাচন হয়েছে। তবে কোনওটিতেই প্রধান বিরোধী দল বিজেপি জিততে পারেনি। মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘিতে তৃণমূল পরাজিত হলেও বিজেপি হয়েছিল তৃতীয়। জিতেছিল বাম-কংগ্রেস জোট। সেই জোটের প্রার্থী বায়রন বিশ্বাস অবশ্য এখন তৃণমূল শিবিরে। বিজেপি একের পর এক জেতা আসন খুইয়েছে গত তিন বছরে। বিধায়ক সংখ্যা ৭৭ থেকে কমে হয়ে গিয়েছে ৬৮। আসন্ন উপনির্বাচনে মাদারিহাট হাতছাড়া হয়ে গেলে সেই সংখ্যা আরও একটি কমবে।
তবে মাদারিহাট বিজেপির কাছে বরাবরই ‘লক্ষ্মীমন্ত’ আসন। পর পর দু’বার বিধানসভা নির্বাচনে জেতাই নয়, ২০১৯ এবং ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফল ধরলেও এগিয়ে ছিল পদ্মশিবির। গত জুন মাসের ফলাফলেও বিজেপি এগিয়ে ছিল ১১ হাজারের বেশি ভোটে। কিন্তু বিধানসভা উপনির্বাচনে কী হবে? বিজেপি প্রচারে খামতি রাখেনি। টিগ্গা বলছেন, ‘‘স্বাভাবিক ভোট হলে আমরা আরও বেশি ব্যবধানে জয় পাব।’’ তবে অত সহজে যে জয় আসবে না, তা বলছেন বিজেপি নেতারা। টিগ্গা জমি কামড়ে পড়ে রয়েছেন ভোট ঘোষণার দিন থেকেই। কিন্তু তাঁকে ঘিরে নানা প্রশ্ন রয়েছে। টিগ্গা শিবির এবং এলাকারও অনেকে মনে করেন, মনোনয়ন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ‘ইচ্ছায়’ হলেও জন বার্লাকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য টিগ্গাই ‘দায়ী’। এখন বার্লার সঙ্গে বিজেপির দূরত্বও তৈরি হয়েছে টিগ্গার জন্য।
মাদারিহাট ছাড়া উপনির্বাচনের বাকি কেন্দ্রগুলির কোনওটিতেই বিজেপি ২০২৪ সালে লোকসভা ভোটের নিরিখে ভাল ফল করেনি। তবু বাঁকুড়ার তালড্যাংরা নিয়ে দলের অনেকে ‘ভাল লড়াই’-এর আশা করছেন। কারণ, ওই জেলায় একটি লোকসভা আসন বিজেপির দখলে। তবে যে লোকসভা আসনের অন্তর্ভুক্ত তালড্যাংরা, সেই বাঁকুড়ায় হেরে গিয়েছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকার। ওই বিধানসভা থেকে তিনি পিছিয়ে ছিলেন প্রায় সাড়ে সাত হাজার ভোটে। সুভাষ এই উপনির্বাচনে সময় দিয়েছেন তালড্যাংরায়। জেলার অন্য লোকসভা আসন বিষ্ণুপুরের দু’বারের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ-ও সময় দিয়েছেন। আলাদা করে রাজ্য দলের পক্ষে এখানকার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রাক্তন সাংসদ তথা রাজ্যের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক লকেট চট্টোপাধ্যায়কে। রাখা হয়েছে দলের দুই বিধায়ক নীলাদ্রিশেখর দানা এবং লক্ষ্মণ ঘড়ুইকেও। ওই আসনের পদ্মপ্রার্থী অনন্যা রায় চক্রবর্তীর শেষ দিনের প্রচারে মিছিল করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী স্বয়ং। তার ভিত্তিতেই রাজ্য নেতারা বলছেন, ‘ভাল লড়াই’ দেবে দল।
শুভেন্দু তো বটেই, সুকান্ত এবং প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ছ’টি আসনেই প্রচারে গিয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে একদা দিলীপের জেতা মেদিনীপুর লোকসভার অধীনে মেদিনীপুর বিধানসভা কেন্দ্রও। গত লোকসভা আসনে এই আসন তৃণমূলের জুন মালিয়া জিতলেও মেদিনীপুর বিধানসভায় ব্যবধান ছিল মাত্রই ২,১৭০ ভোটের। তবে কোচবিহারের সিতাইয়ে বিজেপি পিছিয়ে ছিল ২৮ হাজারের বেশি ভোটে। একই ভাবে উত্তর ২৪ পরগনার দুই আসন নৈহাটি এবং হাড়োয়ায় লড়াই থেকে দূরে ছিল বিজেপি। নৈহাটির ব্যবধান ছিল সাড়ে ১৫ হাজার। হাড়োয়ায় ১ লাখ ১১ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। তালড্যাংরার মতো মেদিনীপুরেও ‘ভাল লড়াই’-এর আত্মবিশ্বাস থাকলেও বাকি তিনটিতে তা নেই বিজেপির। দলের লক্ষ্য একটাই— তৃণমূল ছ’য়ে ছয় করলেও সর্বত্র যেন দ্বিতীয় স্থানটা থাকে। প্রধান বিরোধী দলের ‘মর্যাদা’ যেন নিশ্চিত থাকে।