বরুণ চক্রবর্তী। —ফাইল চিত্র।
দলকে জেতাতে পারেননি, কিন্তু প্রথম বার টি-টোয়েন্টিতে পাঁচ উইকেট তুলে নিয়েছেন বরুণ চক্রবর্তী। তিন বছর আগে ছ’টি ম্যাচে নিয়েছিলেন মাত্র দু’উইকেট। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনটি ম্যাচ খেলে কোনও উইকেট পাননি। সেই বরুণই এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৫টি উইকেটের মালিক। ম্যাচ খেলেছেন ১১টি। অর্থাৎ, শেষ পাঁচ ম্যাচে কেকেআরের স্পিনার নিয়েছেন ১৩টি উইকেট। তাই রবিবার ভারত হারলেও বরুণের পাঁচ উইকেটে মুখে হাসি কেকেআরের। কী ভাবে বদলে গেলেন বরুণ?
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রত্যাবর্তন হয় বরুণের। প্রথম ম্যাচেই নেন তিন উইকেট। পরের ম্যাচে দু’টি। শেষ ম্যাচে যদিও উইকেট পাননি বরুণ। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথম ম্যাচে তিনি নেন তিন উইকেট। রবিবার নেন পাঁচ উইকেট। তাঁর বোলিংয়ে যে পরিবর্তন হয়েছে তা নিজেও জানিয়েছেন বরুণ। তিনি বলেন, “আমি আগে সাইড স্পিন করতাম। কিন্তু এখন তা বদলেছি। এখন আমি ওভার স্পিন করি। আমার বলের ধরন বদলেছে। আমার নিয়ন্ত্রণ এখন আগের থেকে অনেক ভাল। তাই আমার বল খেলতে ব্যাটারের সমস্যা হয়।”
ওভার স্পিন কী?
ওভার স্পিন এমন এক ধরনের বোলিং, যেখানে বল বেশি পাক খায়। হাতের তালু ব্যবহার করে বল ছাড়া হয়। যে কারণে বোলারের হাত থেকে বল বেরনোর পর, তা অন্য বলের চেয়ে বেশি গতিতে উইকেটে পড়ে। পাশাপাশি তালু ব্যবহার করায় বল পিচে পড়ে বাড়তি লাফায়। গতি, বাউন্স এবং স্পিনের মিশেল থাকে ওভার স্পিনে। যা ব্যাটারকে কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলে। ভারতের হয়ে ১৯৯১ সালে এশিয়া কাপ খেলা স্পিনার শরদিন্দু মুখোপাধ্যায় বললেন, “ওভার স্পিন দু’ধরনের হয়। এক, যে হেতু বলে ঘূর্ণি বেশি থাকে, তাই বলটা পিচে ড্রপ করে সোজা যায়। দুই, হাতের তালু দিয়ে বল করার জন্য বেশি বাউন্স পাওয়া যায়। বরুণের ক্ষেত্রে দ্বিতীয়টা প্রযোজ্য। ও লেগ স্পিনার হওয়ার কারণে বাউন্সটা পায়। সেটাকে কাজে লাগায়।”
বরুণের পরিবর্তন
এক দিনে এই পরিবর্তন হয়নি। তার জন্য দু’বছর সময় লেগেছে বরুণের। দীর্ঘ অনুশীলেনর ফল পেয়েছেন তিনি। আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলা স্পিনার বলেন, “দেখে মনে হয় এ আর এমন কী বদল। কিন্তু সেটা করতেই আমার দু’বছরের বেশি সময় লেগেছে। শুরুতে তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগ ও আইপিএলে নতুন ভাবে বল করা অনুশীলন করেছি। এখন রপ্ত হয়ে গিয়েছে।” যদিও রবিবার বরুণের উইকেট পাওয়ার ক্ষেত্রে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারদের ভুল দেখছেন বাংলার প্রাক্তন স্পিনার শরদিন্দু। তিনি বললেন, “দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারেরা বলের লাইন বুঝতে ভুল করেছে। ওরা লেগ স্পিন খেলতে পারছে না। সেই কারণে আড়া শট মারতে গিয়ে আউট হয়েছে। এক মাত্র ডেভিড মিলার সোজা ব্যাটে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়েছে। ও স্পিনের জন্য খেলতে গিয়েছিল।”
বরুণের ভবিষ্যৎ
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ভাল খেলা বরুণকে এক দিনের দলে চাইছেন দীনেশ কার্তিক। আগামী বছর এই প্রতিযোগিতা রয়েছে। সেখানে বরুণকে খেলানো উচিত বলে মনে করছেন কেকেআরের প্রাক্তন অধিনায়ক। দক্ষিণ আফ্রিকায় পাঁচ উইকেট নেওয়া বরুণ সম্পর্কে কার্তিক বলেন, “বরুণকে যদি ভারত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে না নেয় তা হলে খুব বড় ভুল করবে। দুর্দান্ত বোলার হয়ে উঠেছে ও।” কিন্তু এখনও এক দিনের ক্রিকেটে অভিষেক হয়নি বরুণের। তাই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তাঁকে নেওয়া হবে কি না তা এখনই স্পষ্ট নয়। বাংলার প্রাক্তন স্পিনার সৌরাশিস লাহিড়ী বললেন, “বরুণকে আইপিএল দেখে এক দিনের ক্রিকেটে নেওয়া উচিত হবে না। যদি ভারত মনে করে ওকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলাবে, তা হলে বিজয় হজারে ট্রফিতে খেলা উচিত ওর। ২০ ওভারের ক্রিকেট আর ৫০ ওভারের ক্রিকেট এক নয়।”