Vidhan Sabha Session

ওরা মমতাকে বলতে দেবে না, এটাই স্বাভাবিক: মাইক বন্ধ নিয়ে বিধানসভায় ববি, ওয়াক আউট বিজেপির

সোমবার বিধানসভায় নীতি আয়োগের ঘটনা এবং মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ নিয়ে নিন্দাপ্রস্তাব আনেন তৃণমূল বিধায়ক মানস ভুঁইয়া। এই আলোচনার উপর আলোচনা চান তাঁরা। যা শুনেই প্রতিবাদ করে ওঠে বিজেপি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৪ ১২:১৮
Share:

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার অধিবেশন চলছে। —ফাইল চিত্র।

নীতি আয়োগের বৈঠকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মাইক বন্ধ করে দেওয়ার’ প্রতিবাদে সোমবার বিধানসভায় নিন্দাপ্রস্তাব আনল তৃণমূল। নিন্দাপ্রস্তাবের উপর আলোচনা চান তৃণমূলের বিধায়কেরা। প্রতিবাদ জানিয়ে ওয়াক আউট করলেন বিজেপি বিধায়কেরা। বিধানসভার বাইরে বেরিয়ে তাঁরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। উঠছে শাসক বিরোধী স্লোগান। এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় বিধানসভার অধিবেশনে ওই বিষয়ে আলোচনা চলছে।

Advertisement

সোমবার বিধানসভায় নীতি আয়োগের ঘটনা এবং মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ নিয়ে নিন্দাপ্রস্তাব আনেন তৃণমূল বিধায়ক মানস ভুঁইয়া। যা শুনেই প্রতিবাদ করে ওঠেন বিজেপি বিধায়কেরা। বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটি পূর্বপরিকল্পিত মিথ্যাচার। এই প্রস্তাব আমরা মানি না। আসলে পিসি এবং ভাইপো মিলে দিল্লিতে সেটিং করতে গিয়েছিলেন। তা পারেননি বলেই বৈঠকের বাইরে এসে মিথ্যা বলেছেন।’’ শিখা আরও বলেন, ‘‘ওঁকে পাঁচ মিনিট বলার সময় দেওয়া হয়েছিল। উনি বলেছেন। এ নিয়ে ভিতরে কিছু বলেননি। বাইরে বেরিয়ে যা বলার বলেছেন।’’

এর পরেই বিজেপি বিধায়ক মনোজ ওরাওঁ বলে ওঠেন, ‘‘এই প্রস্তাব মানছি না, মানব না।’’ বিজেপি বিধায়কদের আচরণে বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন। বলেন, ‘‘এ সব কী হচ্ছে? আপনারা আলোচনা শুনুন।’’ স্পিকারের বক্তব্যের পর প্রতিবাদ জানিয়ে ওয়াক আউট করে বিজেপি। বাইরে গিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন বিজেপি বিধায়কেরা।

Advertisement

সোমবার এই আলোচনা এবং প্রতিবাদের মাঝেই বিধানসভায় আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তিনি স্পিকারের ঘরে রয়েছেন।

বিজেপি ওয়াক আউট করার পরেও আলোচনা চালিয়ে যান তৃণমূল বিধায়কেরা। ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘বাংলার মানুষ বরাবর মমতাকেই চেয়েছেন। নরেন্দ্র মোদীকে সমর্থন করেনি এই রাজ্য। নীতি আয়োগের বৈঠকে মমতাকে বলতে দেওয়া হবে না, সেটাই স্বাভাবিক। সত্যিটা বিজেপি শুনতে চাইছে না, তাই ওয়াক আউট। ওদের ২০০ কিংবা ৪০০ পারের স্লোগান মুখ থুবড়ে পড়েছে।’’ ফিরহাদ আরও বলেন, ‘‘আসলে কেন্দ্রীয় সরকার চায়, এই দেশ হোক শুধু কর্পোরেট সংস্থাগুলির জন্য। মমতা তার প্রতিবাদ করেছেন। মোদী ‘মন কি বাত’-এ শুধু নিজের মনের কথা বলেন। আরও কারও কথা শুনতে চান না। এ ভাবে তিনি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কলুষিত করছেন।’’

বিধানসভার বাইরে বিক্ষোভ বিজেপি বিধায়কদের। —নিজস্ব চিত্র।

শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গত তিন বছরে বিজেপি বেশির ভাগ সময়েই বিধানসভার বাইরে কাটিয়েছে। কোন কথা অধিবেশনে বলতে হবে, কোনটা বলতে হবে না, তা ওরা জানে না।’’

মানস ভুঁইয়া বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী কোনও অসত্য কথা বলেননি। উনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, তাই বাংলার কথা বলেছেন। শিখাদেবী নিজের কথা জানিয়ে এখান থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু নীতি আয়োগের চেয়ারম্যান কি এখনও মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ করেছেন? মোদী নিজে কি করেছেন?’’ মাইক বন্ধ করে দেওয়ার রেওয়াজ নীতি আয়োগে আগে ছিল না বলেও জানান তিনি। বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যা করেছেন, তা মানুষের স্বার্থে। তিনি আগে প্ল্যানিং কমিশনে কথা বলে বাংলার দাবি আদায় করে আনতেন। এখন তা হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় সরকার স্বৈরাচারী। সারা ভারত এর জন্য ছি ছি করছে।’’

বিধানসভার বাইরে গিয়ে বিজেপি বিধায়কেরা শিলিগুড়ির বিধায়ক তথা দলের মুখ্য সচেতক শঙ্কর ঘোষের নেতৃত্বে স্লোগান দেন। মুখ্যমন্ত্রীকে ‘মিথ্যাচারী’ বলে স্লোগান ওঠে বিধানসভা চত্বর থেকে। শঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘‘নীতি আয়োগের বৈঠকে ওঁকে বলতে দেওয়া হয়েছিল। সময় শেষ হয়ে গিয়েছিল। তত ক্ষণ উনি বলেছেন। বেরিয়ে অন্য কথা বলছেন। বৈঠকে উনি যাবেন কি যাবেন না, পেন্ডুলামের মতো দুলছিলেন। সংসদীয় গণতন্ত্রকে উনি কলুষিত করেছেন।’’

উল্লেখ্য, শনিবার দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে নীতি আয়োগের বৈঠক হয় প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে। সেখানে বিরোধী শিবিরের তরফে একমাত্র বাংলার মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। মাঝপথে বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে আসেন মমতা। জানান, তিনি বৈঠক বয়কট করেছেন। কারণ, তাঁকে কথা বলার পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়নি। পাঁচ মিনিট বলার পর তাঁর মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। সঙ্গে এ-ও জানান, অসমের মুখ্যমন্ত্রী, গোয়া কিংবা ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রীকে অনেক ক্ষণ বলার সময় দেওয়া হয়েছিল। তাঁর বেলাতেই পাঁচ মিনিট পর মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রতিবাদে আর কখনও নীতি আয়োগের বৈঠকে যাবেন না বলে জানান মমতা। কেন্দ্রের তরফে মমতার এই অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পিআইবি জানিয়েছে, এই দাবি বিপথে চালিত করা। কারণ, মমতার মাইক বন্ধ করা হয়নি। তাঁর বলার সময় অতিক্রান্ত, ঘড়িতে শুধু তা দেখানো হয়েছিল। সতর্ক করতে কোনও বেলও বাজানো হয়নি। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনও মমতার মন্তব্যের বিরোধিতা করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement