বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। —নিজস্ব চিত্র।
কেন্দ্রীয় সরকার প্রাপ্য টাকা দিচ্ছে না বাংলাকে। মূলত বাংলার ‘অপ্রাপ্তি’-কে সামনে রেখে রাজ্য জুড়ে রবিবার বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে শাসক তৃণমূল। আর সেই দিনেই কেন্দ্রের থেকে বাংলার ‘প্রাপ্তি’-কে তুলে ধরতে পূর্ব রেলের স্টেশনে স্টেশনে জড়ো হলেন বিজেপি নেতারা। রবিবার ভার্চুয়াল মাধ্যমে দেশের ৫০৮টি রেলস্টেশন আধুনিকীকরণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার মধ্যে কলকাতার শিয়ালদহ থেকে আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটা— সর্বত্র বিজেপির নেতা, সাংসদ, বিধায়কেরা হাজির রইলেন। সরকারি কর্মসূচি হলেও তা থেকে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টায় কোনও ত্রুটি রাখেনি গেরুয়া শিবির।
বাংলায় এমনটা অবশ্য নতুন নয়। হাওড়া থেকে নিউ জলপাইগুড়ি যাওয়ার বন্দে ভারত ট্রেনের সূচনার দিনেও ঠিক একই কাজ করেছে বিজেপি। উদ্বোধনের সকালে মাতৃবিয়োগের জন্য কলকাতায় আসতে পারেননি মোদী। তবে তিনি ভার্চুয়াল মাধ্যমে হাজির ছিলেন হাওড়া স্টেশনে। ওই ট্রেনটি দাঁড়ানোর কথা নয় এমন স্টেশনেও সে দিন স্টপেজ ছিল বন্দে ভারতের। কারণ, বিজেপি সাংসদ বিধায়কেরা চেয়েছিলেন তাঁদের এলাকার মধ্যে দিয়ে ট্রেনটি গেলে একটি বার যেন থামে। ভোটের প্রচারে বাংলার প্রাপ্তির অন্যতম নিদর্শন হিসাবে বন্দে ভারতকে তুলে ধরতে চেয়েছিল বিজেপি। এ বার লোকসভা নির্বাচনের মুখে বাংলার ৩৭টি স্টেশনের আধুনিকীকরণের অনুষ্ঠানকেও সেই ভাবে ব্যবহার করল গেরুয়া শিবির।
রাজ্যের যে স্টেশনগুলিকে আধুনিক রূপে সাজানো হবে, সেখানে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান দেখানোর ব্যবস্থা রেলই করেছিল। সেই সঙ্গে বিজেপিও উদ্যোগী হয়। আগে থেকেই রাজ্য বিজেপি ঠিক করে রেখেছিল, কোন নেতা বা জনপ্রতিনিধি কোন স্টেশনে হাজির থাকবেন। দলের রাজ্য সভাপতি তথা বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার ছিলেন শিয়ালদহ স্টেশনে। আবার বনগাঁ শাখার চাঁদপাড়া স্টেশনে হাজির ছিলেন স্থানীয় সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। একা তিনি নন, ওই স্টেশনে ছিলেন বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক স্বপন মজুমদার, বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়া, গাইঘাটার বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর, হরিণঘাটার বিধায়ক অসীম সরকার, কল্যাণীর বিধায়ক অম্বিকা রায়। রেলের প্রশংসা করে মন্ত্রী শান্তনু বলেন, ‘‘রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবজির কাছে আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম যাতে চাঁদপাড়া স্টেশনকে ‘অমৃত ভারত’ প্রকল্পের অধীনে আনা হয়। সেটা হওয়ায় আমরা আনন্দিত। চাঁদপাড়া স্টেশন আধুনিকীকরণের ফলে এলাকার মানুষ উপকৃত হবেন।’’
রাণাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকার নবদ্বীপ এবং শান্তিপুর স্টেশনে যান। নিজের লোকসভা এলাকার অন্তর্গত দু’টি স্টেশনেই কিছুটা করে সময় দেন। আবার আসানসোল স্টেশনে ছিলেন কুল্টির বিধায়ক অজয় পোদ্দার। তারকেশ্বর স্টেশনে যান দুই বিধায়ক পুড়শুড়ার বিমান ঘোষ এবং আরামবাগের মধুসূদন বাগ। মালদহ টাউন স্টেশনেও ছিলেন পুরনো মালদহের বিধায়ক গোপালচন্দ্র সাহা এবং ইংরেজবাজারের বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী। মালদহ উত্তরের সাংসদ খগেন মুর্মু ছিলেন সামসি স্টেশনে। তুফানগঞ্জে মালতি রাভা রায় এবং কুমারগঞ্জে মনোজ ওঁরাও উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহেই বাংলার সাংসদদের সঙ্গে বৈঠক করেন মোদী। সেখানেও মোদী নির্দেশ দেন, কোনও জাতীয় বিষয় নিয়ে ভোটারদের কাছে না গিয়ে স্থানীয় স্তরের কথা বলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এমনও নির্দেশ দেন বলে জানা যায় যে, কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কী কী সুবিধা মিলছে, কোথায় কী নতুন ট্রেন মিলেছে, কেন্দ্রীয় উদ্যোগে যা যা হয়েছে— সে সব নিয়েই লোকসভা নির্বাচনের প্রচার করতে হবে। রবিবার তৃণমূল কেন্দ্রীয় বঞ্চনার কথা নিয়ে গোটা রাজ্যে সরব হয়েছে। লোকসভা ভোটের প্রচারেও কেন্দ্রীয় বঞ্চনার কথা যে তৃণমূল বলবে, তা আগে দল স্পষ্ট করে দিয়েছে। অন্য দিকে, বিজেপির তরফে মিলল বার্তা, কেন্দ্রের থেকে প্রাপ্তিই হবে ভোটের অন্যতম অস্ত্র।