২০১৯ সালে দলের টিকিটে জেতা সাংসদদের নিয়ে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে ছিল বিজেপি। —ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব হারানোর পরে বাবুল সুপ্রিয় যে ভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন, তাতে বিজেপি শিবিরের অনেকেই আঁচ করেছিলেন, আসানসোলের সাংসদ দলবদল করতে পারেন । কিন্তু ভাবনা ছিল, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে আগে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তিনি। কিন্তু ভবানীপুরের উপনির্বাচনের আগে মাঝ পথে সাত বছরের সাংসদ দল ছাড়বেন এমন সম্ভাবনার কথা কেউ ভাবেননি। শনিবার তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে তৃণমূলের উত্তরীয় পরা বাবুলের ছবি দেখে রাজ্য বিজেপি-র অনেক নেতাই প্রথমটায় বিশ্বাস করতে পারেননি।
কিন্তু ধাতস্থ হওয়ার পরে তৈরি হয়েছে আরও অনেক জনপ্রিতিনিধিকে নিয়ে সন্দেহ আর আশঙ্কা। ভবানীপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখোমুখি লড়াইকে বড় করেই দেখছে রাজ্য বিজেপি। সেখানে বাবুলকেও চেয়েছিলেন রাজ্য নেতৃত্ব। যদিও বাবুল পত্রপাঠ ‘না’ বলে দেন। তবে ওই আসনে বিজেপি প্রার্থী করেছে বাবুল-ঘনিষ্ঠ হিসাবেই গেরুয়া শিবিরে পরিচিত প্রিয়ঙ্কা তিবরেওয়ালকে। বাবুলের আইনজীবী হিসেবেই প্রথম বিজেপি দফতরে যাতায়াত ছিল প্রিয়ঙ্কার। পরে তিনি বিজেপি-তে যোগ দেন। শনিবার বাবুলের দলবদলের পরে অবশ্য প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে কথা বলা যায়নি। আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে একাধিক বার টেলিফোন করা হলেও তিনি প্রচারে ব্যস্ত থাকায় কথা বলতে পারেননি।
বিধানসভা নির্বাচনের ফলে বড় ধাক্কা খেয়েছিল বিজেপি। ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখা গেরুয়া শিবির যখন মুষড়ে পড়েছে তখনই তৃণমূলে ফেরেন কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক তথা বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়। এর পর পরই সন্দেহের আবহ তৈরি হয় বিজেপি-তে। সেটা অনেকটা সত্যি করে ইতিমধ্যেই একে একে আরও তিন বিধায়ক চলে গিয়েছেন বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে। বিষ্ণুপুরের তন্ময় ঘোষ, বাগদার বিশ্বজিৎ দাস, কালিয়াগঞ্জের সৌমেন রায়। আরও অনেকে যেতে পারেন বলে আশঙ্কার পরিবেশ রয়েছে বিজেপি-তে। আতশকাচের তলায় রয়েছেন আরও আধ ডজন বিধায়ক। বিজেপি-র হিসাব মতো রাজ্য থেকে রাজ্যসভায় দু’জন সাংসদ পাঠাতে গেল কমপক্ষে ৬৯ জন বিধায়ক দরকার। কিন্তু যে ভাবে বিজেপি-র বিধায়করা লাইন দিয়ে শাসক তৃণমূলে যেতে (বা ফিরতে) শুরু করেছেন, তাতে সেই সংখ্যা থাকা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে পদ্মশিবিরে।
বর্ধমান পূর্বের সাংসদ সুনীল মণ্ডল বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি-তে এলেও তিনি এখন আর গেরুয়া শিবিরের কেউ নন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু ২০১৯ সালে দলের টিকিটে জেতা সাংসদদের নিয়ে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে ছিল বিজেপি। সেই স্বস্তি আর রইল না বাবুলের ফুল বদলে। এখন আরও অনেক সাংসদও আতশকাচের তলায় চলে আসবেন বলেই মনে করছেন রাজ্য বিজেপি-র নেতারা। তাঁদেরই এক জন বলেন, ‘‘বাংলার সাংসদদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছেন বাবুলই। দু’বারই জিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েছেন। তিনিও যে চলে গেলেন এটা সত্যিই ভাবার বিষয়।’’ দলের পক্ষে অবশ্য প্রকাশ্যে বলা হচ্ছে, বিজেপি ব্যক্তি নির্ভর দল নয়। তাই কে গেল, কে এল তা নিয়ে কিছু যায় আসে না। দলের পক্ষে বাবুলকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ তকমাও দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে গেরুয়া শিবিরের অনেকেই মনে করছেন, দলে এমন ‘বিশ্বাসঘাতক’ আরও থাকাটা অস্বাভাবিক নয়।