Sandeshkhali Incident

রাজভবনে মিছিল, হুঁশিয়ারি শুভেন্দুর, মুখ খুললেন বোস

ঘটনার পরে শাসক দলের সাংগঠনিক পদক্ষেপ করতে কেন দেড় মাস লেগে গেল, সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গ্রেফতারও করা হয়েছে উত্তমকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:২৭
Share:

সন্দেশখালির ঘটনায় রাজ্যপাল ও রাজ্য প্রশাসনের উপরে চাপ বাড়াল বিজেপি। —ফাইল চিত্র।

এক দিকে এলাকায় প্রবল জনরোষ। সেই সময়েই সন্দেশখালির ঘটনায় রাজ্যপাল ও রাজ্য প্রশাসনের উপরে চাপ বাড়াল বিজেপি। বিধানসভা থেকে শনিবার দুপুরে রাজভবন পর্যন্ত বিধায়কের নিয়ে মিছিল করে গিয়ে সেখানে ধর্নায় বসলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্যপালকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদক্ষেপ করার কার্যত ‘সময়সীমা’ বেঁধে দিয়ে বিরোধী দলনেতার ঘোষণা, কাজ না হলে সোমবারই বিজেপি বিধায়কদের নিয়ে তাঁরা সন্দেশখালি যাবেন। ঘটনাচক্রে, শুভেন্দুর ওই হুঁশিয়ারির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাতে বিবৃতি দিয়ে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস বলেছেন, সন্দেশখালিতে ‘গুন্ডারাজ’ চলছে। সরকারের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সূত্রের খবর, শাসক বনাম বিরোধী টানাপড়েনের মধ্যেই আজ, রবিবার সন্দেশখালি যেতে পারে যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়-সহ সিপিএমের প্রতিনিধিদল। শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের পাল্টা দাবি, বিশৃঙ্খলা ছড়ানোর পরিকল্পনা করছেন বিরোধীরাই।

Advertisement

সন্দেশখালিকে কেন্দ্র করে এ দিন রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ এগিয়েছে দ্রুত। শুভেন্দুরা যখন রাজভবন অভিযান করছেন, প্রায় সেই সময়েই সন্দেশখালির ঘটনায় মূল অভিযুক্ত শেখ শাহজাহানের অন্যতম সঙ্গী উত্তম সর্দারকে ৬ বছরের জন্য নিলম্বিত (সাসপেন্ড) করার কথা ঘোষণা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। রেশন মামলায় সন্দেশখালির দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশিতে গিয়ে হামলার মুখে পড়েছিল ইডি। সেই ঘটনার সূত্র ধরেই গত কয়েক দিন ধরে এলাকায় যে অশান্তি চলছে, তার জেরে শাহজাহানের শাগরেদ, সন্দেশখালি ব্লক তৃণমূলের সভাপতি তথা জেলা পরিষদের সদস্য উত্তমের বিরুদ্ধে এ দিন শাস্তিমূলক পদক্ষেপের ঘোষণা করেছেন উত্তর ২৪ পরগনার নেতা ও রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। তিনি জানিয়েছেন, আর এক অভিযুক্ত স্থানীয় নেতা শিবু হাজরার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কেও খোঁজখবর করছে দল। প্রসঙ্গত, গত কয়েক দিন ধরে সন্দেশখালিতে বিক্ষোভে বারবারই উত্তম ও শিবুর বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছেন স্থানীয় মানুষ।

ঘটনার পরে শাসক দলের সাংগঠনিক পদক্ষেপ করতে কেন দেড় মাস লেগে গেল, সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গ্রেফতারও করা হয়েছে উত্তমকে। যার প্রেক্ষিতে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল সাসপেন্ড করার পরে পুলিশ উত্তমকে গ্রেফতার করল। তার মানে তৃণমূলের পরিচয় থাকলে গ্রেফতার করতে অসুবিধা ছিল! ওই পরিচয়টাই আইনের পদক্ষেপের পথে রক্ষাকবচ ছিল! শিবু হাজরা এবং মূল অভিযুক্ত শাহজাহানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা কবে হবে?’’ বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ অবশ্য বলেছেন, ‘‘ভোটের মুখে অশান্তি পাকানোর চেষ্টায় আছে বিরোধীরা। রাজ্যের বাজেটের পরে তৃণমূলকে ঘিরে যে উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছে, তাতেই দিশাহারা হয়ে গিয়েছে বিরোধীরা!’’

Advertisement

রাতে রাজ্যপাল অবশ্য বলেছেন, “খুব খারাপ ঘটনা ঘটছে সন্দেশখালিতে। নারীদের হেনস্থা করা হয়েছে, মারধর করা হয়েছে। গুন্ডারাজ চলছে ওখানে! যখন গুন্ডারা আইন হাতে তুলে নেয়, সেটা নাগরিক সমাজের পক্ষে বিপদসঙ্কেত। এটা দ্রুত বন্ধ করার দায়িত্ব সরকারের। সরকারের উচিত শক্ত হাতে, সদর্থক ভাবে পদক্ষেপ করা। আসুন, সবাই মিলে এটার বিরুদ্ধে লড়াই করি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘সরকারের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছি। ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওখানে ইডি আধিকারিকদের বাধা দেওয়া হয়েছে। বাংলা শান্তির জায়গা। আমাদের সবাইকে এক হয়ে বাংলার কিছু জায়গায় চলা এই অর্থহীন খেলাটাকে শেষ করতে হবে।”

কোমর বেঁধে নেমেছে বিরোধীরাও। বিধানসভার অধিবেশনে এ দিন বারবারই সন্দেশখালির ঘটনার উল্লেখ করেছেন বিজেপি বিধায়কেরা। বাজেট-বিতর্কে বক্তৃতা সেরে বিধানসভা থেকে দলীয় বিধায়কদের মিছিল নিয়ে রাজভবনে চলে আসেন শুভেন্দু। রাজ্যপাল অবশ্য ছিলেন না রাজভবনে। রাজ্যপালের অনুপস্থিতিতে রাজভবনের ভিতরে সিঁড়িতে বসে দীর্ঘ ক্ষণ স্লোগান দিয়েছেন তাঁরা। বাম আমলের নন্দীগ্রামের সঙ্গে এখনকার সন্দেশখালির তুলনা টেনে শুভেন্দুর অভিযোগ, এলাকা দখলের জন্য পুলিশ ও তৃণমূলের বাহিনী হাত মিলিয়েছে। নন্দীগ্রামে সিপিএম যা করেছিল। বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘আমরা রাজ্যপালকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সন্দেশখালি যেতে অনুরোধ করছি। রাজ্যপাল যদি পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারেন, তা হলে ১৪৪ ধারা থাকলেও সোমবার বিধায়কদের নিয়ে আমরা যাব।’’ সন্দেশখালির মহিলারা যে ‘অত্যাচারে’র অভিযোগ করছেন, তার উল্লেখ করে বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালের দাবি, ‘জনজাগরণ’ শুরু হয়েছে। মহিলাদের ওই অভিযোগের কাহিনি নিয়ে সরব হয়েছেন বিজেপির জাতীয় ও রাজ্য স্তরের গোটা নেতৃত্ব। উত্তর কলকাতায় স্বামী বিবেকানন্দের বাড়ি থেকে সন্ধ্যায় হাতিবাগান পর্যন্ত মশাল মিছিল হয়েছে বিজেপি যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি ইন্দ্রনীল খাঁ-র নেতৃত্বে।

শুভেন্দুদের হুঁশিয়ারি প্রসঙ্গে মন্ত্রী পার্থ অবশ্য বলেছেন, ‘‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সন্দেশখালিতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। ওঁরা সেখানে যাবেন বলছেন মানে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে চাইছেন।’’ বিজেপির একটি প্রতিনিধিদলকে এ দিনই সন্দেশখালি থানা এলাকার বাইরে আটকে দেওয়া হয়েছে। বিরোধী দলনেতার রাজভবনে যাওয়ার প্রসঙ্গে রাজ্যের আর এক মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘তাঁর (শুভেন্দু) সঙ্গে রাজ্যপালের মধুর না অম্ল-মধুর সম্পর্ক, জানি না! রাজ্যপাল বিরোধী দলনেতার নির্দেশ মানবেন কি মানবেন না, সেটা তিনি বুঝবেন!’’ আর বাজেট আলোচনায় সন্দেশখালি প্রসঙ্গ ওঠা নিয়ে চন্দ্রিমার বক্তব্য, ‘‘এটা বিচারাধীন। মামলা যেমন হয়েছে, সে ভাবে পদক্ষেপ হবে। কোনও অপরাধীকে আমরা আড়াল করব, আমাদের দলের মানসিকতাও তেমন নয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement