সংসদের একটি স্ট্য়ান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান পদ থেকে তৃণমূলকে সরানোয় খুশি বিজেপি বিধায়করা। ফাইল চিত্র
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বদলা কি সংসদে নিল বিজেপি? মঙ্গলবার সংসদের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান পদ ঘোষণার পরে এমনই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সাংসদ সংখ্যার নিরিখে সংসদে তৃতীয় বৃহত্তম দল হওয়া সত্ত্বেও সংসদীয় স্থায়ী কমিটির একটিও চেয়ারম্যান পদ পেল না তৃণমূল। মঙ্গলবার নতুন স্থায়ী কমিটি ঘোষণা হতেই কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারকে নিশানা করেন তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। শুধু তৃণমূলই নয়, সংসদে বৃহত্তম বিরোধী দল হওয়া সত্ত্বেও দু’টি গুরুত্বপূর্ণ স্থায়ী কমিটি কংগ্রেসের হাতছাড়া হওয়ায় কেন্দ্রকে আক্রমণ করেন তিনি। এক সময়ে রেল, বিমান পরিবহণ, সড়ক, জাহাজ ও সংস্কৃতি বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান পদ ছিল সংসদে দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দল তৃণমূলের। এরপর একে একে সব ক’টি কমিটির চেয়ারম্যান পদ থেকেই অপসারিত হয়েছেন তৃণমূল সাংসদরা। একমাত্র টিকে ছিলেন তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। খাদ্য এবং গণবণ্টন সংক্রান্ত সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। মঙ্গলবার রাতের রদবদলে সেটিও হাতছাড়া হল বাংলার শাসকদলের। নতুন কমিটিতে সুদীপ জায়গা পেয়েছেন ঠিকই। কিন্তু চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত হয়েছেন বাংলার থেকেই নির্বাচিত হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। আর এই সিদ্ধান্তে বেজায় খুশি পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি বিধায়করা।
আর বিজেপির এমন রাজনীতিকেই ‘ঘৃণ্য’ বলে আক্রমণ করেছে তৃণমূল। ডেরেক টুইটারে লিখেছেন, ‘‘নতুন স্থায়ী সংসদীয় কমিটি ঘোষিত হয়েছে। সংসদে তৃণমূল তৃতীয় বৃহত্তম দল এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দল হওয়া সত্ত্বেও কোনও সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান পদ দেওয়া হল না। প্রধান বিরোধী দলও দু’টি গুরুত্বপূর্ণ কমিটির শীর্ষ পদ হারিয়েছে। এটাই নতুন ভারতের নির্মম বাস্তবতা।’’ বিজেপির এমন রাজনীতিকে বাংলার ‘বদলা’ হিসেবেই দেখছেন রাজনীতির কারবারিরা।তবে বিজেপি বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ মাইতি এমন ‘বদলা’র রাজনীতির অভিযোগের কথা মানতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘প্রথমত, ওঁদের এই প্রশ্ন তোলার কোনও যৌক্তিকতা নেই। কারণ ওঁরা কিছুই মানেন না। পবিত্র বিধানসভার ইতিহাসকে বিনষ্ট করেছেন। বিধানসভায় পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান পদ বিরোধী দলের পাওয়া উচিত। কিন্তু সেখানে বিজেপি থেকে ভাঙিয়ে নিয়ে যাওয়া বিধায়কদের বসিয়ে অসাংবিধানিক কাজ করেছে রাজ্য সরকার।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সংসদের কমিটিতে তৃণমূল সাংসদকে সরিয়ে তো কোনও দলবদলুকে বসানো হয়নি। বসানো হয়েছে একজন নির্বাচিত সাংসদকে। সে ক্ষেত্রে কোনও অসংবিধানিক কাজ হয়েছে বলে আমি মনে করি না। আর যাঁরা সংবিধান মানেন না, তাঁদের মুখে শিষ্টাচারের কথা মানায় না। কারণ বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস যখন বিধানসভার বিরোধী দল ছিল, তখনও তৃণমূল একই কাজ করেছিল।’’
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বিজেপি বিরোধী দল হয়ে আসার পর তাঁরা পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি (পিএসি)-সহ ১৪টি কমিটির চেয়ারম্যান পদ দেওয়ার দাবি জানায় স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। কিন্তু তাঁদের জন্য বরাদ্দ হয় ছয়টি কমিটি। সঙ্গে পিএসি কমিটির চেয়ারম্যান পদটি দিয়ে দেওয়া হয় বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যাওয়া কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক মুকুল রায়কে। প্রতিবাদ জানিয়ে বিধানসভার কোনও কমিটির চেয়ারম্যান পদ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এ বছর মুকুল ওই পদ থেকে ইস্তফা দিলে আরও এক বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যাওয়া বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণীকে দেওয়া হয়েছে পিএসির চেয়ারম্যান পদ। সংসদে তৃণমূল সাংসদ একটি মাত্র স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান পদ খোয়ানোকে তাই এর বদলা হিসেবেই দেখছেন রাজনীতির কারবারিরা।
বিজেপির এক প্রভাবশালী বিধায়কের কথায়, ‘‘বিধানসভায় তৃণমূল আমাদের সঙ্গে যা যা করছে, তা আমরা আমাদের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু তৃণমূল যে অভিযোগ করছে তা ভিত্তিহীন, ওরা নির্মম ভারতের কথা বলছেন। আসলে বাংলাতেই যে নির্মম সরকার চলছে, তা বাংলা নয় সারা ভারত জানে।’’