মুকুল রায় ও শুভেন্দু অধিকারী ফাইল চিত্র
বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-র টিকিটে ৭৭ জনজয় পেলেও এখন সেই সংখ্যা কমে ৭৪। দুই সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক ও জগন্নাথ সরকার বিধায়ক পদ ছেড়ে দিয়েছেন। সেটা ছাড়াও বড় ধাক্কা দিয়েছেন মুকুল রায়। ১১ জুন সপুত্র তৃণমূলে ফিরেছেন তিনি। তাতে খাতায়কলমে না হলেও ৭৪ হয়ে গিয়েছে বিজেপি বিধায়কের সংখ্যা। এ বার সেই সংখ্যা ৭৩ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা বিজেপি-তে। কারণ, ধারাবাহিক ভাবে দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়ে চলা বাগদার বিজেপি বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসকে সোমবার বিধানসভায় দেখা যায় তৃণমূলের মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষের ঘরে। আর তাতেই বিশ্বজিৎ-বিজেপি দূরত্বের জল্পনা আরও জোরালো হল।
সোমবার বিধানসভার অধিবেশন থাকলেও তাতে যোগ দেননি বাগদার বিজেপি বিধায়ক। তার বদলে নির্মলের ঘরে দীর্ঘক্ষণ থাকতে দেখা যায় বিশ্বজিৎকে। খোশমেজাজে আড্ডা দেন তৃণমূল বিধায়কদের সঙ্গে। তবে কি খুব শীঘ্রই তাঁকে শাসক-শিবিরে দেখা যাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘আমি বিধায়ক। জনপ্রতিনিধিদের কোনও দল হয় না। একজন বিধায়ক হিসেবে আমি যেখানে খুশি যেতে পারি এবং যার সঙ্গে খুশি কথা বলতেই পারি।’’
তৃণমূলের টিকিটে জিতেও বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন বিশ্বজিৎ দাস। ফাইল চিত্র
শুধু তৃণমূলের মুখ্য সচেতকের ঘরে যাওয়াই নয়,সোমবার বিশ্বজিৎ যা বলেছেন তা শুনেও বিজেপি শিবির মনে করছে, বাগদার বিধায়ক খুব তাড়াতাড়ি তৃণমূলে চলে যেতে পারেন। বিধানসভায় বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিন শুক্রবার দলের সব বিধায়ককে হাজির থাকার হুইপ দিয়েছিল বিপেজি পরিষদীয় দল। যদিও সে দিন ৭০ জন বিধায়ক এসেছিলেন। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, দার্জিলিং, পুরুলিয়া এবং কুল্টির বিধায়ক বিভিন্ন কারণে আসতে পারছেন না বলে তাঁরা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু ব্যতিক্রম ছিলেন বিশ্বজিৎ। তিনি কেন আসছেন না সেটা দল বা শুভেন্দুকে জানাননি। শনিবার রাজ্য বিজেপি-র তরফে হওয়া বিধায়কদের প্রশিক্ষণ শিবিরেও দেখা যায়নি বিশ্বজিৎকে। সোমবার রাজ্য বিজেপি ভুয়ো ভ্যাকসিন-কাণ্ডের প্রতিবাদে কলকাতা পুরসভা অভিযান করে। সেই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে বিশ্বজিৎ দাবি করেন, তিনি এমন কোনও কর্মসূচির কথা জানেনই না।
বিশ্বজিতের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক অবশ্য অনেক পুরনো। ২০১১ ও ২০১৬ সালে পরপর দু’বার তিনি তৃণমূলের টিকিটেই বনগাঁ উত্তর আসন থেকে বিধায়ক হন। পরে বিজেপি-তে যোগ দেন। এর পরে গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে আগে তিনি তৃণমূলে ফিরতে পারেন বলে জল্পনা তৈরি হয়। গত বিধানসভার শেষ অধিবেশনে গেরুয়া শিবিরের বিশ্বজিৎকে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রণাম করছেন। এর পরেই জল্পনা তৈরি হয় তাঁকে নিয়ে। পরে রাজ্য নেতারা তো বটেই, কেন্দ্রীয় নেতারাও বিশ্বজিতের সঙ্গে কথা বলেন। ভোটের মুখে বিশ্বজিৎকে বোঝানোর ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন মুকুল। এখন সেই মুকুল তৃণমূলে। শাসকদলে যোগ দেওয়ার পরে মুকুল আরও অনেককে নিয়ে যাবেন বলে দাবি করেছিলেন। কয়েকজন বিধায়ককে ফোনও করেছিলেন বলে জানা যায়। তার ভিত্তিতেই বিশ্বজিৎকে নিয়ে বিজেপি শিবিরে আশঙ্কা রয়েছে। সোমবার যা আরও বেড়ে গেল।