বিজেপি কর্মী দেবদাস মণ্ডলের (ইনসেটে) শোকগ্রস্ত পরিবার। ফাইল চিত্র।
তাঁর চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। বছর পঁচাত্তরের বৃদ্ধের চোখ দুটো এখন শুধুই খুঁজে বেড়াচ্ছে তাঁর ছেলেকে। ভাঙ্গিপাড়ার এই বাড়ির সামনে পৌঁছতেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন বৃদ্ধ। ইনি ভাঙ্গিপাড়ার নিখোঁজ বিজেপি কর্মী দেবদাস মণ্ডলের বাবা। পরিবারের অভিযোগ, তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা দেবদাসকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করে ভেড়িতে পুঁতে দিয়েছে।
শনিবার সন্দেশখালির হাটগাছিয়ার এই ভাঙ্গিপাড়াতেই তৃণমূল-বিজেপির সংঘর্ষে খুন হন তিন বিজেপি কর্মী— প্রদীপ মণ্ডল, সুকান্ত মণ্ডল ও তপন মণ্ডল। যদিও পুলিশের দাবি, দুই বিজেপি কর্মীর মৃত্যু হয়েছে।অন্য দিকে, বিজেপির তরফে দাবি করা হয়েছে, মোট পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে।
প্রদীপ, সুকান্ত ও দেবদাস একই পরিবারের সদস্য। প্রদীপ ও সুকান্তর দেহ মিললেও দেবদাসের কোনও হদিশ পাওয়া যায়নি। দেবদাসের বাবা বাসুদেব মণ্ডলের অভিযোগ, তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা তাঁদের উপর বোমা, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। তাঁকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কোপায়। যদিও প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন তিনি। কিন্তু তাঁর একমাত্র ছেলে দেবদাস সেই হামলার পর থেকে নিখোঁজ। বাসুদেবের আরও অভিযোগ, তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা তাঁর ছেলেকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করেছে।
সন্দেশখালির হাটগাছিয়ার ভাঙ্গিপাড়ার এই অঞ্চলে বেশির ভাগ লোকই মাছ চাষের সঙ্গে যুক্ত। দেবদাসও এই ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। নিম্নবিত্ত এই পরিবারটি দেবদাসের আয়ের উপরই নির্ভরশীল। তাঁর দুই সন্তান রয়েছে। ন’বছরের একটি ছেলে ও সাত বছরের একটি মেয়ে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী এই দেবদাস নিখোঁজ হয়ে যাওয়ায় গোটা পরিবার বিধ্বস্ত। শোকের আবহ নেমে এসেছে গোটা বাড়িটাতে। থেকে থেকেই দেবদাসের স্ত্রীর কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে ঘর থেকে।
আরও পড়ুন: শাসক দলের সঙ্গে বিজেপি-র সংঘর্ষে রণক্ষেত্র সন্দেশখালি, নিহত ৪, নিখোঁজ বহু
ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে অসহায় বাবা পুলিশের কাছে ছুটে গিয়েছিলেন। পুলিশের কাছে তাঁর একটাই আকুতি ছিল, “স্যর আমার ছেলের দেহটা খুঁজে দিন।” অভিযোগ, পুলিশ উল্টে তাঁকে ধমক দিয়ে বলে, ‘ভেড়ির কাদা জলে নামতে পারব না, নিজেই ছেলের দেহ খুঁজে নিন!’
পুলিশের এই জবাবে হতভম্ব এবং হতাশ বাসুদেব মণ্ডল-সহ গ্রামবাসীরা। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশের সামনেই তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা হামলা চালায়। কিন্তু তারা কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি হামলা ঠেকাতে। দুষ্কৃতীরা তাণ্ডব চালিয়ে খুন করল বিজেপি কর্মীদের, অথচ পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করল। গ্রামবাসীদের প্রশ্ন, ‘‘পুলিশ যদি এ ভাবে জবাব দেয়, তা হলে নিরাপত্তার জন্য কাদের উপর ভরসা করব!’’