সুকান্ত মজুমদার। —ফাইল চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘নমো’ অ্যাপের প্রতিযোগিতায় রাতারাতি এক নম্বরে সুকান্ত মজুমদার! রবিবার পর্যন্তও তিনি প্রথম পাঁচের দৌঁড়ে ছিলেন না। কিন্তু সোমবার সপ্তাহ শুরুর দিনেই একেবারে সকলের উপরে পৌঁছে গিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। সেই এক নম্বর হওয়ার দৌড় এতটাই বেশি, যে সুকান্ত জানুয়ারি মাসের প্রতিযোগিতাতেও এক লাফে প্রথম পাঁচের মধ্যে চলে এসেছেন। সোমবার সকাল পর্যন্ত তিনি প্রতিযোগিতায় পৌঁছে গিয়েছেন চার নম্বরে।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, গত শনিবার আনন্দবাজার অনলাইন ‘নমোর কাছে যেতে টাস্ক! এগিয়ে অর্জুন-পুত্র পবন, নিশীথকেও টপকে গেলেন, দৌড়েই নেই সুকান্ত-শুভেন্দু’ শীর্ষক যে খবর জানিয়েছিল, তার পরেই দলের মধ্যে ‘নমো’ ব্যবহারে প্রতিযোগিতা গতি পেয়েছে। সকলেই নিয়মিত ‘টাস্ক’ পূরণ করে এগিয়ে যেতে চাইছেন। যে লড়াইয়ে সোমবার সকলের আগে রাজ্য সভাপতি।
১৪ জানুয়ারিতে শেষ-হওয়া সপ্তাহের লড়াইয়ে বিজেপির নেতা, সাংসদ, বিধায়কদের মধ্যে সবচেয়ে আগে ছিলেন সাংসদ অর্জুন সিংহের পুত্র তথা ভাটপাড়ার বিধায়ক পবনকুমার সিংহ। কিন্তু নতুন সপ্তাহ শুরু হতে না হতেই সুকান্ত ১ নম্বরে! তাঁর পয়েন্ট এতটাই বেশি, যে ধারেকাছে কেউ নেই। সুকান্ত পেয়েছেন ২৯৭৮ পয়েন্ট। দ্বিতীয় স্থানে খড়্গপুর সদরের অভিনেতা-বিধায়কের পয়েন্ট ৩০০ পয়েন্ট! গত সপ্তাহে চতুর্থ স্থানে থাকলেও এ বার আর তালিকায় নেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ প্রামাণিকের নাম। নেই পবনও।
সাপ্তাহিক তালিকায় পারলেও মাসিক প্রতিযোগিতায় অবশ্য পবনকে এখনও টপকাতে পারেননি সুকান্ত। ৬৫৫৭ পয়েন্ট পেয়ে তৃতীয় স্থানে আছেন পবন। তবে অনেক পিছন থেকে ছুটে এসে চার নম্বর জায়গা নিয়ে নিয়েছেন সুকান্ত। হাতে ৩৯২০ পয়েন্ট। চতুর্থ জায়গাটি নিশীথ ধরে রেখেছেন ৩৩৯৫ পয়েন্ট পেয়ে। তবে জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রথম স্থানে বিজেপি নেতা রাজেন্দ্রপ্রসাদ মণ্ডল। পয়েন্ট ৮২৭৩। তাঁকে সুকান্ত ছুঁতে পারবেন কি না, সেটা জানা যাবে মাস শেষ হলে।
সুকান্তের অবশ্য, তিনি আদৌ প্রথম হওয়ার জন্য ছুটছেন না। সাংগঠনিক বৈঠকের জন্য মুর্শিদাবাদ জেলায় রয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। সেখান থেকেই তিনি বলেন, ‘‘আমি একটা কথা মেনে চলি। ‘আপনি আচরি ধর্ম অপরে শিখাও’। কথাটা সংগঠনের ক্ষেত্রে খুব জরুরি। তাই আমি যেমন বুথ স্তরের কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করি, তেমনই ‘নমো’ অ্যাপও নিয়মিত ভাবে ব্যবহার করি। এটা দলের নির্দেশ। আর সবচেয়ে উপরে দল।’’ তিনি যে প্রথম স্থানে রয়েছেন, তা শুনে সুকান্ত বলেন, ‘‘তাই নাকি! আমি খেয়াল করিনি। আমি চাই, কোনও বুথ স্তরের নেতা প্রথম হোন। তবে আমি আমার কাজ করে যাব। আনন্দ পাব বাকিরাও নিয়ম মেনে আমায় হারিয়ে দিলে। কোনও বুথের নেতা যদি মোদীজির সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান, তা হলে সেটা খুব ভাল হবে।’’
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেই মোদী এই ‘নমো’ অ্যাপ চালু করেছিলেন। সেখানে তাঁর জমানায় কী কী কাজ হয়েছে সে সব দেখা যায়। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি দিনের বক্তব্য, সরকারি প্রকল্পের পরিসংখ্যান, আগামীর ভাবনা সবই থাকে। এর পরেও প্রতি দিন সেই অ্যাপে নেতা-কর্মীদের জন্য কিছু ‘টাস্ক’ থাকে। বিভিন্ন খবর পোস্ট করা থেকে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া বা অন্যদের এই অ্যাপ ব্যবহারে উৎসাহিত করার সাপ্তাহিক ও মাসিক প্রতিযোগিতাও থাকে। এর জন্য অ্যাপেই পয়েন্ট পাওয়া যায়। সেই পয়েন্টের ভিত্তিতে যিনি প্রথম হন, তাঁর মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পুরস্কার থাকে। এ ছাড়াও দ্বিতীয়, তৃতীয়দের জন্য নানা পুরস্কার দেন প্রধানমন্ত্রী। কাউকে তাঁর সই করা বই, কাউকে ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানের সংকলন। কেউ পান মোদীর থেকে ‘বিকশিত ভারতের দূত’ সার্টিফিকেট।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি যে ‘নমো’ অ্যাপকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাইছে, তা আগেই স্পষ্ট করা হয়েছে দলের নেতা-কর্মীদের কাছে। এমনকি, প্রার্থী বাছাইয়ের জন্যও নমো অ্যাপের মাধ্যমে কর্মীদের মতামত নেওয়া হচ্ছে। প্রচারে কোন কোন বিষয়ে জোর দিতে হবে। বক্তৃতায় কী বলতে হবে, কী বলতে হবে না— সবই রয়েছে ওই অ্যাপে। জাতীয় স্তরে এর জন্য একটি কমিটিও তৈরি হয়েছে। তার জাতীয় আহ্বায়ক করা হয়েছে কুলদীপ সিংহ চহালকে। গত সপ্তাহেই তিনি কলকাতায় এসে বৈঠক করেছেন রাজ্য নেতাদের সঙ্গে। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, খুব তাড়াতাড়ি এর জন্য রাজ্য ও জেলা স্তরের কমিটি তৈরির নির্দেশ এসেছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে।