West Bengal News

‘স্বনামধন্য সংগঠক’ বলে খোঁচা, রথযাত্রার প্রস্তুতি বৈঠকে বিজেপির কোন্দল ফের প্রকাশ্যে

জয় বলেন, ‘‘বিজেপি-তে যদি কেউ সৎ ভাবে পরিশ্রম করে, নরেন্দ্র মোদীজি বা অমিত শাহজির চোখ সেটা এড়ায় না।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৮ ১৯:২৬
Share:

সুব্রত চট্টোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করলেন জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি

দল বাড়ছে যে গতিতে, তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি গতিতে বাড়ছে দলের ভিতরের টানাপড়েন। রাজ্য বিজেপি সম্পর্কে এই তত্ত্ব এখন সুবিদিত বাংলার রাজনৈতিক শিবিরে। রথযাত্রার প্রস্তুতি বৈঠকেও সেই টানাপড়েন স্পষ্ট হয়ে উঠল মঙ্গলবার। বৈঠকে রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের নাম করে কটাক্ষ ছুড়লেন দলের জাতীয় কার্যকারিণীর সদস্য জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। ভেসে এল পাল্টা কটাক্ষও।

Advertisement

দলের সবক’টি শাখা সংগঠনকে রথযাত্রা বা ‘গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা’র প্রস্তুতিতে নামিয়েছে বিজেপি। দল এবং শাখা সংগঠনগুলির বিভিন্ন স্তরের কমিটি একের পর এক বৈঠকে বসে প্রস্তুতি সংক্রান্ত আলোচনা সেরে নিচ্ছে, নিজেদের দায়িত্ব বুঝে নিচ্ছে। রাজ্য স্তরের নেতারা প্রায় রোজই বাংলার কোনও না কোনও প্রান্তে বৈঠকে থাকছেন।

মঙ্গলবার মৌলালি যুব কেন্দ্রে রাজ্য কার্যকারিণী বৈঠক ছিল বিজেপির অসংগঠিত ও কৃষি-শ্রমিক উন্নয়ন মোর্চার (পাকসু মোর্চা)। দলের জাতীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে। ছিলেন জাতীয় কার্যকারিণী সদস্য জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বৈঠকে ভাষণ দিতে গিয়ে জয় বলেন, ‘‘বিজেপি-তে যদি কেউ সৎ ভাবে পরিশ্রম করে, নরেন্দ্র মোদীজি বা অমিত শাহজির চোখ সেটা এড়ায় না।’’ তবে এই ‘চোখ না এড়ানোর’ যে আখ্যান জয় তুলে ধরেন নিজের ভাষণে, তাতে সুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের প্রতি কটাক্ষ ছিল স্পষ্ট ও তীব্র।

Advertisement

কী বলেছেন জয় বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন? তিনি বলেছেন, ‘‘২০১৪-র পরে অনেকে বিজেপি-তে এসেছেন, তাঁরা সব নানা পদে চলে গিয়েছেন— সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক, অমুক-তমুক। আমি একটা ছোট্ট রাজ্য কমিটির সদস্য হিসেবে পড়ে ছিলাম।... যখন পুরুলিয়ায় অমিত শাহজির সভা হয়, আমাদের স্বনামধন্য সংগঠক সুব্রত চট্টোপাধ্যায়কে আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, আমি কি যেতে পারি? বলেছিলেন, হ্যাঁ, তুমি নিশ্চয়ই যাবে, তুমি মঞ্চে বসবে।... আমি যখন মূল মঞ্চে উঠতে যাচ্ছিলাম, কেউ বা কারা আমাকে হাত ধরে নামিয়ে দিলেন। নামিয়ে দিয়ে বললেন, ওই মঞ্চটা আপনার, এই মঞ্চটা নয়।’’

আরও পড়ুন: ছটের মঞ্চ থেকেও সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে আক্রমণ মমতার

সুব্রত চট্টোপাধ্যায়কে যে ভাবে ‘স্বনামধন্য সংগঠক’ বলে এ দিন আখ্যা দেন জয়, তাতে শ্লেষের সুর ছিল স্পষ্ট। পুরুলিয়ায় অমিত শাহের সভায় মূল মঞ্চে উঠতে না পারায় তিনি যে অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন, তাও জয়ের কথায় স্পষ্ট হয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘‘আমি দেখলাম, আমার পরে যাঁরা (বিজেপিতে) এসেছেন, তাঁরা ওই মঞ্চটা দাপাচ্ছেন আর আমাকে গিয়ে পাশের মঞ্চে বসতে হল। আমি খুব দুঃখ পেয়েছিলাম, বিশ্বাস করুন, আমি ভেবেছিলাম রাজনীতি ছেড়ে দেব।’’

এই পর্যন্ত বলেই অবশ্য থেমে যাননি বিজেপির জাতীয় কার্যকারিণীর সদস্য। রাজ্য বিজেপির সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদকের দিকে কটাক্ষ ছুড়লেও, দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের প্রতি জয়ের কণ্ঠে ছিল ভূয়সী প্রশংসা। তিনি বলেন, ‘‘২৬ জুলাই আমার জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। ২৬ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে ফোন এল যে, আমাকে জাতীয় কার্যকারিণীর সদস্য হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে।… যাঁরা আমাকে বাধা দিচ্ছিলেন, তাঁদের মুখে ঝামা ঘষে আমি রাজ্য কমিটির সদস্য থেকে জাতীয় কার্যকারিণীর সদস্য হয়ে গেলাম, ক্লাস ওয়ান থেকে সরাসরি ক্লাস টেনে উঠে গেলাম।’’ তিনি দলের জন্য সৎ ভাবে পরিশ্রম করেছেন এবং সৎ ভাবে পরিশ্রম করা কর্মীদের নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ ঠিক চিনে নেন— সভায় মন্তব্য অভিনেতা থেকে রাজনীতিক হয়ে ওঠা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

আরও পড়ুন: সেরার দৌড়ে পশ্চিমবঙ্গ, ছুটিতে ধারেকাছে নেই প্রায় কেউই!

মৌলালি যুব কেন্দ্রের বৈঠকে যাঁরা এ দিন ছিলেন, তাঁরা কেউ জয়ের মন্তব্যের কোনও বিরোধিতা করেননি। তবে অন্য দিক থেকে প্রতিক্রিয়া এসেছে। রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের অসন্তোষ বেশ স্পষ্ট করেই প্রকাশ করে দিয়েছেন। জয় বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক কী বলেছেন, তা তিনি জানেন না, তাই মন্তব্য করতে পারবেন না— প্রথমে এমনই জানান রাজু। তবে একই সঙ্গে জয়ের নাম না করে খোঁচাও দিয়ে দেন তিনি। রাজু বলেন, ‘‘কে, কোথায়, কার নামে, কী বলছেন জানি না। কিন্তু রাজনীতি করতে হলে একটু পরিণতও হতে হয়। রাজনীতিটা অপরিণত লোকজনের জায়গা নয়।’’

এই পাল্টা আক্রমণের কোনও জবাব অবশ্য জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে পাওয়া যায়নি। মৌলালি যুব কেন্দ্রের ভিতরে তিনি কী বলেছিলেন, তা নিয়ে বাইরে আর কোনও মন্তব্য জয় করতে চাননি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement