একটা-দু’টো নয়। রাতের যশোর রোডে পালে পালে ঘুরে বেড়াচ্ছে গরু। সেই সঙ্গে গরু পাচারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নামা মানুষ বসে বা দাঁড়িয়ে রয়েছেন রাস্তা জুড়ে। সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছে যানবাহন। আর অসহায় ক্ষোভে পা দাপাচ্ছেন ঘরমুখী মানুষ।
বৃহস্পতিবার রাতে মানুষ আর গরুর এই অভিনব বিশৃঙ্খলায় প্রায় দেড় ঘণ্টা অবরুদ্ধ হয়ে থাকে যশোর রোড। ঘটনাটি ঘটে এয়ারপোর্ট থানা এলাকার বিটি কলেজের সামনে। অবরোধ ছড়িয়ে পড়ে দোলতলা পর্যন্ত। প্রায় রোজই লরি বোঝাই গরু পাচার হয় বাংলাদেশে। তা ঠেকাতেই এ দিন পথে নামে বিজেপি। রাত ১১টা নাগাদ গরু বোঝাই প্রায় ৬০টি লরি আটকে যশোর রোড অবরোধ করে তারা। রাজ্যের শাসক দলের একাংশও গরু পাচারে যুক্ত বলে অভিযোগ তোলেন উত্তর ২৪ পরগনা বিজেপি-র সম্পাদক তাপস মিত্র।
বিজেপি-র অভিযোগ, বনগাঁ সীমান্ত দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে গরু পাচার হয়ে চলেছে। প্রশাসনকে বারবার বলেও সুরাহা হয়নি। তাপসবাবুর অভিযোগ, বর্ধমানে বিস্ফোরণের পরে বনগাঁ দিয়ে পাচার কমেছে। কিন্তু বসিরহাটের ঘোজাডাঙা দিয়ে পাচার চলছে অবাধে। রাজ্যের শাসক দলের প্রশ্রয় থাকায় প্রশাসন ব্যবস্থা নেয় না। এই নিয়ে বিজেপি-র কর্মী-সমর্থকদের ক্ষোভ বাড়ছিল। সেটারই বিস্ফোরণ ঘটে এ দিন।
তাঁরা আগে থেকেই তৈরি ছিলেন বলে জানান তাপসবাবু। সেই অনুযায়ী এয়ারপোর্ট থানা এলাকার বিটি কলেজের সামনে দূর থেকে গরুর লরি আসতে দেখেই বিজেপি-র কর্মী-সমর্থকেরা পথে নামেন। একে একে প্রায় ৬০টি লরি থামানো হয়। প্রতিটিতে ২৫-৩০টি গরু। লরি থামতেই লরির ডালা খুলে দেন বিক্ষোভকারীরা। পালে পালে গরু দাপাদাপি শুরু করে রাস্তায়। যাত্রিবাহী যানবাহন দাঁড়িয়ে যায়। সেই সুযোগে গরুর লরির চালকেরাও ভিড়ে মিশে যান। তাঁদের আর শনাক্ত করা যায়নি বলে জানান তাপসবাবু।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দায় কার, তা নিয়ে চাপান-উতোর শুরু হয়ে যায় উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ, ব্যারাকপুর কমিশনারেট আর বিধাননগর কমিশনারেটের মধ্যে। তিন বাহিনীই বলতে থাকে, ঘটনাস্থল তাদের এক্তিয়ারে পড়ে না। পুলিশের এই দায় ঠেলাঠেলির মধ্যে দিশাহারা হয়ে পড়েন অফিসফেরত মানুষ।
বিজেপি-র তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, গরু পাচার বন্ধে প্রশাসনের শীর্ষ স্তরের আশ্বাস না-পাওয়া পর্যন্ত অবরোধ চলবে। কিছু পরে বিধাননগর কমিশনারেটের এডিসিপি সন্তোষ নিম্বলকর বলেন, “অবরোধ একটা হয়েছিল। এয়ারপোর্ট থানা এলাকায় কিছু ক্ষণের জন্য তার প্রভাব পড়ে।”
ভুক্তভোগীরা অবশ্য জানান, তাঁদের নাকাল হতে হয়েছে দীর্ঘ ক্ষণ। ছাড়া গরু শুধু রাস্তা দাপায়নি, সংলগ্ন এলাকায় ঢুকে পড়ে হাঙ্গামা বাধিয়ে দেয়। এএসপি ভাস্কর মুখোপাধ্যায় রাত ১২টা নাগাদ বলেন, “খবর পেয়েই বাহিনী পাঠিয়েছি। পরিস্থিতি সামলাতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” বারাসতের মহকুমাশাসক সুবীর চট্টোপাধ্যায়ও চলে আসেন।