—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে দলীয় নেতাদের মুখ খুলতে বারণ করেছিলেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবসে ও’দেশে রবীন্দ্রনাথের মূর্তি ভাঙার প্রসঙ্গ তুলে কার্যত বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়েই সরব থাকলেন বিজেপি নেতারা।
বিধাননগরে বিজেপির নয়া কার্যালয়ে বুধবার রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের আয়োজন করেছিল রাজ্য বিজেপির সাংস্কৃতিক শাখা। সেখানে উপস্থিত হয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “গত আড়াই দিন ধরে বাংলাদেশে কবিগুরুর মূর্তি ভাঙা হচ্ছে। এই মূর্খ, অর্বাচীন, বর্বর, উগ্র মৌলবাদের সমর্থক, পশুবৃত্তিসম এক দল মানুষ আজকেও মূর্তি ভেঙছে, বিকৃত করছে। আমরা অপেক্ষা করে আছি তথাকথিত রবীন্দ্রপ্রেমী যাঁরা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভাতাজীবী হয়েছেন, তাঁরা কবে রবীন্দ্রসদন থেকে একটি মোমবাতি নিয়ে পদযাত্রা শুরু করবেন!’’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতির শাখার আহ্বায়ক রুদ্রনীল ঘোষ, কলকাতা পুরসভার পুর-প্রতিনিধি সজল ঘোষ, আইনজীবী-নেতা কৌস্তভ বাগচী প্রমুখ।
বাংলাদেশের হিংসা নিয়ে এ দিনও বিস্তর মন্তব্য করেছেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। দুর্গাপুরে তিনি বলেছেন, ‘‘সমাজবিরোধীরা কারও নয়। তা না হলে তারা কী ভাবে সংসদ ভবন বা প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি লুট করতে পারে? সব তো দেশেরই জিনিস। এই লোকেরা এখানে সিএএ (সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন) পাশ হওয়ার পরে আগুন লাগিয়েছিল। বাড়ি-ঘর লুট করেছিল। দোকানপাট, স্টেশন জ্বালিয়েছিল। এই লোকেরাই ও’দেশ থেকে এখানে ঢুকেছে। এরা ২০২১ সালের নির্বাচনের পরে বিজেপি কর্মীদের বাড়িতে আক্রমণ করেছিল। আগুন লাগিয়েছিল, বাড়ি ভেঙে ছিল, মহিলাদের উপরে অত্যাচার করেছিল। আর এরা এখন তৃণমূল দলকেও দখল করে নিচ্ছে!” দু’পারের দুই ‘দিদি’কে টেনে মন্তব্যও করেছেন দিলীপ। সদ্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করে আসা শুভেন্দুও অভিযোগ করেছেন, ‘‘গণভবনে যে লুটেরাদের দৃশ্য দেখছি, সেই দৃশ্য ’২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির পরাজয়ের পরে পশ্চিমবঙ্গে দেখেছিলাম।’’
তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ পাল্টা বলেছেন, ‘‘দায়িত্বজ্ঞানহীন বাচালতা! বাংলাদেশে স্পর্শকাতর সময় চলছে। আমরা সকলে চাইছি, বাংলাদেশ স্বাভাবিক ছন্দে ফিরুক। তার মধ্যে যদি এই ধরনের প্ররোচনামূলক বক্তব্য চলতে থাকে এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে যদি কোনও কড়া বার্তা না আসে, তা হলে মনে করতে হবে, বিজেপি বাংলাদেশের এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাটি নিয়ে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন করতে চাইছে।’’
বাংলাদেশে রবীন্দ্র মূর্তি ভাঙার প্রতিবাদে কলকাতার অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসের সামনে এ দিন প্রতিবাদ এবং রবীন্দ্র মূর্তিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছে বিজেপি-প্রভাবিত ‘কালচারাল অ্যান্ড লিটারেসি ফোরাম’। পাশাপাশি, বাংলাদেশের ঘটনার প্রতিবাদে এ দিন সন্ধ্যায় যাদবপুর বাসস্ট্যান্ডে মানববন্ধন করেছেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। বাংলাদেশের ঘটনায় স্বৈরাচারী সরকারের পতনে অদম্য ছাত্র আন্দোলনের অবদানের জন্য সাধুবাদ জানিয়েও সংখ্যালঘুর উপরে বিভিন্ন মৌলবাদী গোষ্ঠীর হিংসা-আক্রমণ, ধর্মীয় মেরুকরণের মাধ্যমে চলমান আন্দোলনকে ধর্মীয় রূপ দিয়ে দিগ্ভ্রান্ত করার প্রচেষ্টাকে ধিক্কার জানিয়েছে বামপন্থী, মানবাধিকার-সহ নানা সংগঠন।