শুধু ২মে-এর মিছিলই নয়, আন্দোলনের রেশ যাতে গোটা রাজ্যেই ছড়িয়ে পড়ে তার জন্য ১১ মে পর্যন্ত টানা কর্মসূচি নিয়েছে বিজেপি। মাঝে তিনদিন ৪, ৫ ও ৬ মে রাজ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর থাকায় কোনও আন্দোলন কর্মসূচি নেই।
রবিবার মেদিনীপুরে প্রস্তুতি বৈঠক বিজেপির। —নিজস্ব চিত্র।
অমিত শাহ কলকাতায় আসছেন ৪ মে। তার আগে কলকাতায় ২ মে মহামিছিলের ডাক দিয়েছে বিজেপি। তারও আগে রাজনৈতিক সঙ্ঘর্ষে দলের নিহত কর্মীদের পরিজনকে নিয়ে রাষ্ট্রপতি ভবন যাত্রা ২৮ এপ্রিল। অমিত রাজ্য ছেড়ে যাওয়ার পরেও একগুচ্ছ কর্মসূচি। সব মিলিয়ে এই বৈশাখেই দীর্ঘদিন পরে পথে নামার প্রস্তুতি চলছে বিজেপির। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছে দরবার থেকে অমিতের সফর ও অন্যান্য কর্মসূচি সফল করতে মরিয়া রাজ্য বিজেপি নেতারা। জেলায় জেলায় ঘুরে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন স্বয়ং রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। সেই সঙ্গে অন্যান্য নেতারাও শুরু করেছেন সফর।
২০২১ সালের ২ মে। বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা হয়েছিল। নীলবাড়ি দখলের স্বপ্ন দেখা বিজেপিকে ৭৭ আসন পেয়েই খুশি হতে হয়েছিল। এর পর থেকে বারবার ভাঙনের ছবি দেখেছে গেরুয়া শিবির। একের পর এক নেতা দল ছেড়েছেন। উপনির্বাচনে জেতা আসন রানাঘাট, দিনহাটা হাতছাড়া হয়েছে। মুকুল রায়-সহ পাঁচ বিধায়ক চলে গিয়েছেন তৃণমূলে। পুরভোটে গোটা রাজ্যেই পর্যুদস্ত হতে হয়েছে। আর সর্বশেষ দু’বারের জেতা আসানসোলে রেকর্ড পরিমাণ ভোটে হার। অন্য দিকে, গত এক বছরে কোনও আন্দোলনই গড়ে তুলতে পারেনি বিজেপি। করোনা পরিস্থিতির জন্য জমায়েতের উপরে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পরেও সে ভাবে কোনও বড় মিছিল বা সমাবেশ হয়নি কলকাতায়। পুরসভা ও রাজ্য নির্বাচনী দফতরের ঘেরাও কর্মসূচি নিলেও তেমন সাফল্য মেলেনি। এ বার তাই কোমর বেঁধে নেমেছে গেরুয়া শিবির।
রাজ্য বিজেপি-র মূল নজর ২ মে কলকাতায় মিছিল সফল করা। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাকে ওই দিন কর্মী, সমর্থক নিয়ে আসার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। বড় সমাবেশের লক্ষ্যে কলকাতা ছাড়াও হাওড়া, হুগলি এবং দুই ২৪ পরগনাকে বেশি কর্মী আনার লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। একই ভাবে জোর দেওয়া হচ্ছে দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাকুঁড়া, পুরুলিয়ার উপরে। দলের সব সাংসদ, বিধায়ককে নিজের নিজের এলাকা থেকে বড় সংখ্যায় সমর্থক নিয়ে হাজির থাকতে বলা হয়েছে।
শুধু ২মে-এর মিছিলই নয়, আন্দোলনের রেশ যাতে গোটা রাজ্যেই ছড়িয়ে পড়ে তার জন্য ১১ মে পর্যন্ত টানা কর্মসূচি নিয়েছে বিজেপি। মাঝে তিনদিন ৪, ৫ ও ৬ মে রাজ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর থাকায় কোনও আন্দোলন কর্মসূচি নেই। ইতিমধ্যেই বাকি কর্মসূচি ঘোষণা করে দিয়েছেন সুকান্ত। জানিয়েছেন, ৩ মে কর্মসূচিতে রয়েছে জনপ্রতিনিধিদের অনশন। ওই দিন বিজেপির দক্ষিণবঙ্গের সব জনপ্রতিনিধিকে কলকাতার গাঁধী মূর্তির পাদদেশে হাজির থাকতে বলা হয়েছে। সেখানে তাঁরা এক বেলা অনশনের পরে কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় ‘শহিদ সাহায্য নিধি’ সংগ্রহ করবেন। বিজেপি-র বক্তব্য, ভোট-পরবর্তী হিংসায় নিহত দলের কর্মী ও সমর্থকদের পরিবারকে সাহায্যের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা হবে।
এর পর ৭ মে ভোট-পরবর্তী হিংসায় নিহতদের পরিবারের কাছে পৌঁছবেন বিজেপি নেতারা। ‘শহিদ’ পরিবারের সদস্যদের জন্য নববর্ষের উপহার হিসেবে জামা-কাপড় এবং আর্থিক সাহায্য নিয়ে যাবেন দলের নেতারা। এই কর্মসূচিতেও সব জনপ্রতিনিধিদের অংশ নিতে বলা হয়েছে। এর পর ৮ ও ৯ মে ব্লকস্তরে মিছিল করবে বিজেপি। ১০ মে ‘শহিদ’ পরিবারের সদস্যদের কলকাতায় এনে ‘সত্যাগ্রহ’ কর্মসূচি পালন করবে বিজেপি। ওই দিন বিকেলে নিহত কর্মীদের আত্মীয়দের নিয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের কাছে যাবেন বিজেপি নেতারা। পরের দিন ১১ মে প্রত্যেক জেলায় একটি করে মিছিলেরও পরিকল্পনা নিয়েছে বিজেপি।
সুকান্ত রাজ্য সভাপতি হওয়ার পরে এই প্রথম এত কর্মসূচি। এপ্রিলে নবান্ন অভিযানের পরিকল্পনা থাকলেও পরে তা থেকে পিছু হটে গেরুয়া শিবির। এখন একসঙ্গে এত কর্মসূচি সম্পর্কে সুকান্তর বক্তব্য, ‘‘আমরা বসে ছিলাম না। কর্মীদের পাশে ছিলাম গোটা এক বছর। সেই সঙ্গে দলীয় নিয়ম অনুযায়ী কিছু সাংগঠনিক রদবদলও চলছিল। সব স্তরে কমিটি গঠন প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। অন্য দিকে গত এক বছরে তৃণমূল কী কী করেছে সেটাও রাজ্যের মানুষ জানেন। রাজ্যজুড়ে সন্ত্রাসের পরিবেশ। খুন, ধর্ষণ লেগেই চলেছে। এই পরিস্থিতিতে থেকে বাংলাকে পরিত্রাণ দিতে সর্বস্তরে যাব আমরা।’’ অন্য দিকে, বিজেপিকে লক্ষ্য করে তৃণমূলের আক্রমণ অব্যাহত। দলের নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘বিজেপি আগে নিজেদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামলাক। এখনই তো সুকান্ত-বিজেপি, দিলীপ-বিজেপি ভাগ হয়ে রয়েছে। রাজ্যের মানুষের সঙ্গে বিন্দুমাত্র যোগাযোগই নেই বিজেপি নেতাদের।’’