রাজ্যে তৃণমূলকে জমি ছাড়তে নারাজ বিজেপি

চার দিনের দিল্লি সফরে এসে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে জনসংযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে দলের কৌশল একটুও বদলাচ্ছেন না বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। আজ জম্মুতে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল শাসক। আর আমরা বিরোধী।” তাঁর বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের মন্ত্রীদের সঙ্গে এক বার কেন, একশো বার দেখা করতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও তাঁর বৈঠক হতে পারে। কিন্তু তা বলে পশ্চিমবঙ্গে আমাদের লড়াই লঘু করার কোনও প্রশ্নই উঠছে না।”

Advertisement

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:০৮
Share:

চার দিনের দিল্লি সফরে এসে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে জনসংযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে দলের কৌশল একটুও বদলাচ্ছেন না বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

Advertisement

আজ জম্মুতে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল শাসক। আর আমরা বিরোধী।” তাঁর বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের মন্ত্রীদের সঙ্গে এক বার কেন, একশো বার দেখা করতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও তাঁর বৈঠক হতে পারে। কিন্তু তা বলে পশ্চিমবঙ্গে আমাদের লড়াই লঘু করার কোনও প্রশ্নই উঠছে না।” দলের নেতাদেরও আজ তিনি এই নির্দেশ দেন। অমিত শাহের ঘনিষ্ঠ নেতা ও তাঁর টিমের সচিব শ্রীকান্ত শর্মার বক্তব্য, “পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন জয় করাই আমাদের পাখির চোখ।”

বিজেপির শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, দিল্লিতে এসে মমতা লালকৃষ্ণ আডবাণী, অরুণ জেটলি, রাজনাথ সিংহদের সঙ্গে জনসংযোগ করে গেলেও তাতে চিড়ে ভিজছে না। বিজেপি নেতাদের মতে, মমতা দিল্লি এসেছিলেন সনিয়া গাঁধীর ডাকে সাড়া দিয়ে কংগ্রেসের ধর্মনিরপেক্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে। যাতে জাতীয় রাজনীতিতেও নিজের ধর্মনিরপেক্ষ মুখটি তুলে ধরতে পারেন। কিন্তু বিজেপি নেতাদের সঙ্গে দেখা করে নিজেই সেই কৌশলে জল ঢেলে দিয়েছেন তিনি। মমতা এনডিএ-তে যদি সরাসরি যোগ দিতেন, তাহলে ভিন্ন কথা ছিল। কিন্তু সেটি না হলে তিনি বিজেপির বিরোধী।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বে থাকা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ বলেন, “মমতা যত বারই দিল্লি এসেছেন, ফ্লপ শো করে গিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময়েও দিল্লিতে তাঁর মুখ পুড়েছিল। পরে রামলীলা ময়দানেও একই ধাক্কা খেয়েছেন।” সিদ্ধার্থনাথের কথায়, “তৃণমূল নেত্রী এ বারেও দিল্লি এসে বিজেপি-বিরোধী অবস্থান নিতে গিয়েও শূন্য হাতে ফিরে গেলেন। নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, ২০১৬ সালের নির্বাচনে আমাদের পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসতে হবে।”

প্রশ্ন হল, এ বারের দিল্লি সফরে নিজের ধর্মনিরপেক্ষতার মুখটি মেলে ধরতে এসে কেন মমতা বিজেপি নেতাদের সঙ্গে দেখা করে নিজেরই গ্রহণযোগ্যতার সঙ্গে আপস করলেন?

বিজেপি নেতারা জানাচ্ছেন, মমতার এই পদক্ষেপের কারণ আতঙ্ক। সারদা কেলেঙ্কারি থেকে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের মতো ঘটনায় চাপের মুখে মমতা। তাই বিজেপি নেতাদের সঙ্গে দেখা করে তিনি বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে নালিশও জানিয়েছেন। অভিযোগ করেছেন, রাজ্য নেতৃত্ব ও কেন্দ্রের পক্ষ থেকে দায়িত্বে থাকা নেতারা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিকে সাম্প্রদায়িক করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বিজেপি সূত্রের মতে, রাজনাথ সিংহ থেকে অরুণ জেটলি- কেউই তাঁর অভিযোগকে খুব একটা আমল দিতে চাননি। সরকারি বিষয়ে রাজ্যকে সব রকম সাহায্য করতে রাজি আছে কেন্দ্র। কিন্তু দলের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা যে নাক গলাচ্ছেন না, এবং সেটি আগাগোড়াই অমিত শাহের নিয়ন্ত্রণে- মমতাকে সেই বিষয়টি বুঝিয়ে দিয়েছেন রাজনাথ-জেটলিরা। বিভিন্ন ঘটনার তদন্তেও যে কেন্দ্রীয় সরকার কোনও হস্তক্ষেপ করবে না- পরোক্ষে তা-ও বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে তৃণমূল নেত্রীকে।

মমতার সঙ্গে দিল্লিতে বৈঠকের পরেই তাই বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহকে নির্দেশ পাঠানো হয়, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে অবস্থানের কোনও পরিবর্তন করছে না। ফলে, গতকাল ও আজ রাহুল সিংহ দু’দফায় সাংবাদিক বৈঠক করে মমতাকে আরও তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন। বুঝিয়ে দিয়েছেন, দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে মমতা যে অভিযোগ করেছেন, তা ভিত্তিহীন। বিজেপি আদৌ পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করছে না। বরং সংখ্যালঘুরাই দলে দলে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন। রাহুলবাবু বুঝিয়েছেন, তাঁরা মমতাকে কোনও ব্যক্তিগত আক্রমণও করেননি। বরং প্রাক্তন তৃণমূল নেতা আসিফ খানই যখন মমতাকে ‘ডাকাতদের রানি’ অ্যাখ্যা দিচ্ছেন, তখন বিজেপি সে ব্যাপারে প্রশ্ন তুলছে মাত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement