সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজোয় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎ প্রকাশ নড্ডা। নিজস্ব চিত্র।
আর জি কর-কাণ্ডের আবহে দুর্গা পুজোর মধ্যে কলকাতায় এসে ‘হুমকি-প্রথা’ থেকে শুরু করে চিকিৎসকদের আন্দোলন নিয়ে সরব হলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎ প্রকাশ নড্ডা। তৃণমূল কংগ্রেসের অবশ্য পাল্টা অভিযোগ, বিজেপির আমলেই গোটা দেশে ‘জঙ্গলরাজ’ চলছে।
বাংলাকে ‘ধ্রুপদী ভাষা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের আয়োজন করেছিল রাজ্য বিজেপি। রাজারহাটের একটি হোটেলে কিছু বিশিষ্ট নাগরিকের উপস্থিতিতে নড্ডার মাধ্যমে সেই ‘ধন্যবাদ জ্ঞাপন’ করা হয়েছে বৃহস্পতিবার। সেই মঞ্চ থেকেই সাম্প্রতিক ঘটনাবলি নিয়ে তৃণমূলকে কার্যত ‘তুলোধোনা’ করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। নড্ডা বলেন, ‘‘এক সময়ে বলা হত, বাংলা আজ যা ভাবে, গোটা দেশ আগামী কাল তা-ই ভাবে। আর আজ বাংলার সংস্কৃতি কোথায় পৌঁছেছে? আইনের শাসন নেই। বাংলায় জঙ্গলরাজ চলছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেকে মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করেন। অথচ তাঁর আমলে রাজ্যে মহিলারা সুরক্ষিত নয়।” তাঁর দাবি, “মহিলাদের বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হিংসা, নারী পাচার, নারীদের উপরে অত্যাচার—সব কিছুতেই পশ্চিমবঙ্গ এক নম্বরে। আর জি কর থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঘটনা, তারই প্রমাণ।”
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, “হুমকি-প্রথাই তৃণমূলের সংস্কৃতি। এর বিরুদ্ধে চিকিৎসকেরা লড়াই করছেন। আমরা সর্বতো ভাবে এই আন্দোলনের পাশে রয়েছি।’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘চিকিৎসকেরা কী দাবি করেছিলেন? তাঁরা চেয়েছিলেন কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা। আর জি করের ঘটনার পরে সুপ্রিম কোর্ট সেই বিষয়টা নিশ্চিত করতে নির্দেশিকা দিয়েছে। আমরা তার সঙ্গে তিনটি আবেদন যোগ করেছি। এই নিয়ে রাজ্যকে রিপোর্ট দিতে হবে। চিকিৎসকদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমার দৃঢ় অবস্থান নিচ্ছি।” পাল্টা তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেছেন, “বিজেপির আমলে উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, মণিপুরে কী চলছে? নড্ডার সাংসদ ব্রিজভূষণ দেশের সোনার মেয়েদের শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটিয়েছেন। দু-একটা ব্যতিক্রমী ঘটনা ছাড়া বাংলা নারীদের জন্য নিরাপদতম।’’
আর জি কর-আবহে এই বছর পুজো উদ্বোধনে ‘আড়ম্বর’ এড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য বিজেপি। সেই মতো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কোনও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব না-এলেও পুজোর মধ্যে উপস্থিত হয়েছিলেন নড্ডা। কলকাতা বিমানবন্দরে সপ্তমীর সকালে নামেন নড্ডা। তাঁর গোটা সফরের সঙ্গী ছিলেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পাল, লকেট চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো, প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ প্রমুখ। সেখান থেকে নড্ডা বেলুড় মঠে গিয়ে বিশেষ পুজো-পাঠে যোগ দেন। এর পরে তিনি পৌঁছন কলকাতা পুরসভার ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি পুর-প্রতিনিধি সজল ঘোষের সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজোয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিজেপি নেতা তাপস রায়, উত্তর কলকাতা সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষ প্রমুখ। সেখানে নড্ডা বলেন, “মা দুর্গা আমাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে, ন্যায় প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের শক্তি দেন। তাঁর আশীর্বাদ নিয়েই আগামী দিনে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই তীব্রতর হবে।”