জ্বলছে: গণরোষে পুড়ল পুলিশের গাড়ি। চোপড়ার সোনাপুরে। নিজস্ব চিত্র
উত্তর দিনাজপুরে তৃণমূল-বিজেপির দড়ি টানাটানি অব্যাহত। দাড়িভিট থেকে শুরু হয়ে হেমতাবাদ বা রবিবারের চোপড়া— সব ক্ষেত্রেই কোনও একটি ঘটনাকে সামনে রেখে চলেছে দু’পক্ষের লড়াই।
জেলাবাসীর একাংশের বক্তব্য, দাড়িভিট কাণ্ডের পরে বিজেপির প্রভাব বাড়তে শুরু করে। যদিও লোকসভা ভোটে চোপড়া বিধানসভায় তৃণমূল এগিয়ে ছিল। তবে তত দিনে জেলা জুড়ে বিজেপি তাদের প্রভাব বিস্তার করেছে। দাড়িভিটে নিয়মিত যেতেন বিজেপির মহিলা নেত্রী দেবশ্রী চৌধুরী। তিনিই রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হন। আর চোপড়া যে লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত, সেই দার্জিলিং কেন্দ্রে জয়ী হন রাজু বিস্তা। রবিবার সেই রাজু বিস্তাই চোপড়ার ঘটনা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের কাছে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির অভিযোগ জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘তৃণমূলের মদতে অসামাজিক কাজকর্ম চলছে।’’
তৃণমূল সূত্রে পাল্টা বলা হচ্ছে, তারা এ বারে কোনও ভাবেই বিজেপিকে এক চুল জমি ছাড়তে নারাজ। তাই চোপড়ায় ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সেখানে পাঠানো হচ্ছে প্রতিনিধিদল। তেমনই করোনা সংক্রমিত এলাকায় খুব দ্রুত লকডাউনের ঘোষণা করা হবে বলে প্রশাসনিক সূত্রে খবর। অন্তত সাত দিনের লকডাউনের ঘোষণা করা হতে পারে। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার দুপুর ৩টেয় দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে চোপড়ায় যাচ্ছেন দলীয় প্রতিনিধিদল। মন্ত্রী গৌতম দেব ও গোলাম রব্বানির নেতৃত্বে দলের জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল, সাংসদ মৌসম নুর এবং বিধায়ক হামিদুল রহমান ওই কিশোরীর বাড়িতে যেতে পারেন।
আরও পড়ুন: কিশোরীকে খুনের নালিশে অগ্নিগর্ভ চোপড়া
গৌতম দেব বলেছেন, ‘‘খুবই দুঃখজনক ঘটনা। কেউ কেউ তা নিয়ে রাজনীতি করতে চাইছে। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এলাকায় যাব। মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে কথা বলব।’’
মেয়েটির পরিবার তাদের সমর্থক বলে দাবি করে রাস্তায় নেমেছে বিজেপি। মেয়েটির পরিবারের লোকেরাও নিজেদের বিজেপি সমর্থক বলে দাবি করেছেন। বিজেপিকে সমর্থন করা হত বলেই ওই কিশোরীকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে পরিবারের তরফে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ করেছেন ওই কিশোরীর দাদাও। জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি সুরজিৎ সেন বলেন, ‘‘এ রাজ্যে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা লেগেই রয়েছে। দোষীদের সমর্থন করছে তৃণমূল।’’ রবিবারের ঘটনার পরে বালুরঘাটের সাংসদ-সহ অন্য বিজেপি নেতারা ইসলামপুরে পৌঁছন। বিকেলে ইসলামপুরে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ শুরু করে বিজেপি।
অন্য দিকে, তৃণমূলের জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল অবশ্য বলছেন, ‘‘ওই কিশোরীর সম্পর্ক ছিল এক সহপাঠীর সঙ্গে। বিজেপি তা নিয়ে রাজনীতি করছে। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘যা জানতে পেরেছি, ওই কিশোরীর সঙ্গে একসঙ্গে পড়ত অভিযুক্ত। সেখান থেকে প্রেমঘটিত সম্পর্ক। তবে পুলিশ তদন্ত করছে।’’
তদন্তকারীদের একাংশ সূত্রে খবর, ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গিয়েছে, বিষক্রিয়ায় ওই কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। তবে কোনও জখমের কোনও প্রমাণ মেলেনি বলেই দাবি ওই রিপোর্টে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কয়েক জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় কয়েক জনকে আটক করা হয়েছে।’’