মুকুটমণি অধিকারী (বাঁ দিকে)। স্বস্তিকা ভুবনেশ্বরী (ডান দিকে) —ফাইল চিত্র।
বিজেপি বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারীর বিয়ের মাত্র ১১ দিনের মাথায় স্বস্তিকা ভুবনেশ্বরী গিয়েছেন থানায়। বিধায়ক স্বামীর বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতন, ভয় দেখানো-সহ একাধিক অভিযোগ করেছেন। এ বার মুখ খুললেন আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে।
রানাঘাট দক্ষিণের বিধায়ক মুকুটমণির বিরুদ্ধে কলকাতার তিলজলা থানায় অভিযোগ দায়েরের পর একাধিক বার তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে আনন্দবাজার অনলাইন। কিন্তু তিনি ‘বেপাত্তা’। এর মধ্যে তাঁর স্ত্রী স্বস্তিকা ভুবনেশ্বরীর সঙ্গে যোগাযোগ করে আনন্দবাজার অনলাইন। বিয়ের পর এক পক্ষ যেতে না যেতে কেন দাম্পত্যে ভাঙন? স্বামী ও স্ত্রীর রাজনৈতিক বিশ্বাস আলাদা হওয়াই কি কারণ? সরাসরি সেই অভিযোগ না করলেও, তেমনটা যে হতে পারে, বলছেন গত লোকসভা নির্বাচনে হাওড়ার উলুবেড়িয়া আসনের কংগ্রেস প্রার্থী সোমা রানিশ্রী রায়ের কন্যা স্বস্তিকা। তবে স্বস্তিকার দাবি, তাঁর মায়ের রাজনৈতিক পরিচয় অনেক আগে থেকেই জানতেন বিজেপি বিধায়ক স্বামী।
বিয়ের শংসাপত্র বলছে, বিজেপি বিধায়ক মুকুটমণি রেজিস্ট্রি করেছেন গত ২৮ মে। স্ত্রী স্বস্তিকা ভুবনেশ্বরী তিলজলা থানায় বধূ নির্যাতন-সহ বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন গত ৭ জুন। সেই খবর জানাজানি হয় রবিবার সন্ধ্যায়। আইনের ছাত্রী স্বস্তিকার সঙ্গে মুকুটমণির চেনাজানা বিয়ের আগে থেকেই। গত ১৩ মার্চ আইনি বিবাহের জন্য আবেদন করেন তাঁরা। ২ পরিবারের উপস্থিতিতে বিয়ে হয়। আনন্দবাজার অনলাইনকে স্বস্তিকা জানিয়েছেন, বিয়ের আগে মুকুটমণির সঙ্গে অনেক সময় রাজনীতি নিয়েও কথাবার্তা হয়েছে। সেই মুকুটমণিই তাঁকে বিয়ের পরে বলেছেন, তিনি যে কংগ্রেস বাড়ির মেয়ে সেটা নাকি জানতেনই না মুকুটমণি।
এসএসকেএমের চিকিৎসক থাকার মধ্যেই ২০১৯ সালে রানাঘাট লোকসভা আসনে বিজেপি প্রার্থী করে মুকুটমণিকে। সেই সময়ে তিনি ইস্তফা দিলেও তা গ্রহণ করেনি স্বাস্থ্য দফতর। ফলে বিজেপিকে প্রার্থী বদল করতে হয়। ওই আসন থেকে জিতে সাংসদ হন জগন্নাথ সরকার। বিজেপি মনে করে জগন্নাথের জয়ে মতুয়া সম্প্রদায়ের নেতা মুকুটমণির ভূমিকা ছিল। লোকসভা নির্বাচন মেটার পরে পরেই হাসপাতালের চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি রাজনীতিতে যোগ দেন মুকুটমণি। বিজেপি নদিয়া জেলার সম্পাদক করে মুকুটমণিকে। একই সঙ্গে তিনি মতুয়া মহাসঙ্ঘের জেলা ও রাজ্যের পদ পান। বিজেপি পরে তাঁকে দলের উদ্বাস্তু শাখার সহ-আহ্বায়ক করে। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে রানাঘাট দক্ষিণে তাঁকে প্রার্থী করা হয়। ১৬,৫১৫ ভোটে জয় পান মুকুটমণি। তবে যে লোকসভা ভোটে মুকুটমণির লড়াই করা হয়নি, ওই ভোটেই অন্য একটি কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছিলেন তাঁর শাশুড়ি সোমা রানিশ্রী।
স্বস্তিকার বাবা ছিলেন ব্যবসায়ী। স্বস্তিকা জানান, বাবার মৃত্যুর পর তিনি কলকাতায় মায়ের সঙ্গে থাকেন। বছরে ২-৩ বার বিদেশভ্রমণ করেন তাঁরা। স্বস্তিকার কথায়, ‘‘২০২২ সালের জুলাইয়ে আমাদের বিদেশভ্রমণের কিছু ছবি এক পরিচিতের মাধ্যমে মুকুটমণির বাবা দেখেন। পুত্রবধূ হিসাবে তিনি আমায় পছন্দ করেন।’’ এর পর গত বছরের নভেম্বরে মুকুটমণির সঙ্গে তাঁর মুখোমুখি আলাপ হয় বলে জানিয়েছেন স্বস্তিকা। তিনি বলেন, ‘‘তখনই বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন মুকুটমণি। তবে নানা কারণে বিয়ে পিছিয়েছে।” শেষ পর্যন্ত মে মাসে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করেন দু’জনে। স্বস্তিকার দাবি, দু’জনে ঠিক করেছিলেন শীতের মরসুমে বিয়ের সামাজিক অনুষ্ঠান হবে। কিন্তু রেজিস্ট্রির পরেই শুরু হয় গোলমাল। তাঁর কথায়, ‘‘বিয়ের পর দিন থেকেই মুকুটমণির পরিবারের তরফে নানা রকম হুমকি দেওয়া হয়।’’ স্বস্তিকার দাবি, ২৮ মে রেজিস্ট্রির পর থেকে তাঁর সঙ্গে মুকুটমণির আর কোনও যোগাযোগ হয়নি। স্বস্তিকার আরও অভিযোগ, “মুকুটমণি নাকি এখন বলছেন, আমি কংগ্রেস বাড়ির মেয়ে জানলে বিয়েই করতেন না। বিয়ে হয়ে যাওয়ার কথা গোপন রাখার জন্যও চাপ দেন।”
কিন্তু তিনি যে কংগ্রেস পরিবারের মেয়ে, সে কথা যে মুকুটমণি আগে থেকে জানতেন না এমনটা মানতে রাজি নন স্বস্তিকা। তিনি বলেন, ‘‘রাহুল গান্ধীর সাংসদপদ খারিজের সময় আমায় খোঁচা দিত মুকুটমণি। বলত, তোমার প্রিয় নেতার তো সাংসদপদ খারিজ হয়ে গেল।’’ স্বস্তিকার অভিযোগ শোনার পর আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে সোমবার রাতেও মুকুটমণির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তাঁর ফোন বেজে গিয়েছে।
আইনের ছাত্রী স্বস্তিকা চতুর্থ সেমেস্টারের পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করেছেন। তাঁর কথায়, “বিয়ের এক বছরের মধ্যে তো বিবাহবিচ্ছেদের আবেদনও করা যাবে না, সেটা জানি। তবে বিয়ের এক দিনের মধ্যেই যে এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়ব, তা ভাবতেও পারিনি।’’