আসানসোলে বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। নিজস্ব চিত্র
অভিযোগ, ফেসবুকে ‘বিভ্রান্তিমূলক পোস্ট’ করা। সে অভিযোগেই গ্রেফতার হন ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার রাজ্য সম্পাদক বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়। তাঁর গ্রেফতারের প্রতিবাদ করতে গিয়ে কিছুক্ষণের জন্য গ্রেফতার হন সংগঠনের রাজ্য সভাপতি তথা বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ-সহ কয়েকজন। পরে সৌমিত্রবাবু-সহ অন্যদের অবশ্য ছেড়ে দেওয়া হয়। এই জোড়া ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিজেপি এবং যুব মোর্চার বিক্ষোভ-অবরোধের জেরে করে ঘটনাস্থল আসানসোল-সহ রাজ্যের নানা প্রান্ত তেতে উঠল শনিবার।
আসানসোল পুরসভার সাইনবোর্ড সংক্রান্ত ‘বিভ্রান্তিমূলক পোস্ট’টি করার অভিযোগে বাপ্পাবাবুকে হিরাপুরের পুরানহাটে তাঁর বাড়ি থেকেই শুক্রবার রাতে গ্রেফতার করে পুলিশ। রাতেই ঘটনার কথা জানাজানি হয়। শনিবার ভোর থেকে বিজেপি এবং যুব মোর্চার সদস্য, সমর্থকেরা সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে চলে আসেন আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনারের দফতরের সামনে জমায়েত, অবস্থান শুরু করেন। সকাল ৭টা নাগাদ চলে আসেন সৌমিত্রবাবুও। এর পরেই আন্দোলনের সুর চড়তে থাকে বলে জানা যায়।
ঘটনায় খানিক হতচকিত হয়ে পড়েন কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের একাংশ। কিছু ক্ষণের মধ্যে কমিশনারেটের শীর্ষকর্তারা-সহ বিরাট পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। ভিড় বাড়ে বিজেপি কর্মী, সমর্থকদেরও। জিটি রোডের পাশেই অবস্থান চলতে থাকায় এক সময়ে রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে যেতে শুরু করে। পুলিশ বারবার আর্জি জানালেও অবস্থান ওঠেনি। রাস্তায় যান চলাচল এক সময়ে প্রায় স্তব্ধ হয়ে যায়।
এ দিকে, সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ পুলিশ ‘জোর’ করে অবস্থান তোলার চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় পুলিশকর্মীদের। সাংসদ সৌমিত্রবাবু-সহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে আসানসোল দক্ষিণ থানায় আনা হয়। সৌমিত্রবাবুর গ্রেফতারের খবর পেয়ে আসানসোলের নানা এলাকা থেকে আরও বিজেপি কর্মী, সমর্থক চলে আসেন থানার সামনে।
দুপুর ১২টা নাগাদ ব্যক্তিগত বন্ডে ছেড়ে দেওয়া হয় সৌমিত্রবাবু-সহ অন্যদের। এর পরেই তাঁরা আসানসোল আদালত চত্বরে যান। ইতিমধ্যে বাপ্পাবাবুকেও আদালতে তোলে পুলিশ। সেখানে দলীয় নেতা-কর্মীরা বাপ্পাবাবুর পাশে থাকার বার্তা দেন। পুরানহাটে বাপ্পাবাবুর বাড়িতেও যান সৌমিত্রবাবু। তিনি জানান, কাল, সোমবার থেকে রাজ্য জুড়ে লাগাতার আন্দোলন হবে।
এ দিকে, বাপ্পাবাবু আদালতে যাওয়ার সময়ে সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে অভিযোগ করেন, ‘‘আমার ওই পোস্টের মাধ্যমে জানতে চেয়েছি, বাংলা, ইংরেজি, হিন্দির পরে উর্দু ছাড়া, অন্য আর কোনও ভারতীয় ভাষায় কেন পুরসভার নাম লেখা হল না?’’ যদিও এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া মেলেনি তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি তথা আসানসোল পুরসভার মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারির। তবে তিনি বলেন, ‘‘বিভ্রান্তিকর পোস্ট করায় জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে। তাই ওই বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুই বলেন, ‘‘তৃণমূল দলটা রাজ্যবাসীকে সমস্ত বিষয়ে বিভ্রান্ত করছে। ওদের মুখে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগ করাটা সাজে না।’’ আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার সুকেশকুমার জৈনের প্রতিক্রিয়া, ‘‘পুলিশ আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করেছে।’’