(বাঁ দিকে থেকে) অমিত শাহ, নরেন্দ্র মোদী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আগে তৃণমূল। পরে বিজেপি। পদ্মশিবির এমনই চাইছে। বিষয়: লোকসভা ভোটের প্রার্থীদের তালিকা। কেন্দ্রের শাসকদল চাইছে, আগে বাংলার শাসকদল লোকসভায় তাদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করুক। তা দেখে নিয়েই তারা নিজেদের প্রার্থীদের নাম ঠিক করবে।
লোকসভা নির্বাচন আসন্ন। সেই নির্বাচনে নিজেদের মতো করে প্রস্তুতি শুরু করেছে সব রাজনৈতিক দল। প্রস্তুতিতে এমনিতে সবচেয়ে এগিয়ে আছে দেশের শাসক বিজেপি। লোকসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গের উপর ‘বিশেষ নজর’ রয়েছে গেরুয়া শিবিরের। এ রাজ্যের ৪২টি আসনেই লড়াই করবে তারা। দলের অন্যতম শীর্ষনেতা অমিত শাহ ইতিমধ্যেই বাংলা থেকে ৩৫টি আসনের লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছেন। সেই লক্ষ্য পূরণ করতে বিবিধ পন্থা নিচ্ছে বিজেপি। কেন্দ্রের শাসকদল সূত্রের খবর, তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা দেখেই দলীয় প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে চাইছেন বিজেপি নেতৃত্ব। সম্প্রতি বাংলার এক প্রথমসারির নেতার কাছে তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন শাহ।
লোকসভা ভোটের আগে পশ্চিমবঙ্গে সফর বাড়িয়েছেন তিনি। গত ২৪ নভেম্বর ধর্মতলায় সভা করে যাওয়ার পর আবার চলতি মাসের ২৮ এবং ২৯ তারিখে পশ্চিমবঙ্গ সফরে আসার কথা তাঁর। রাজ্যে এসে বাহ্যিক ভাবে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে খোঁজ নিচ্ছেন শাহ। পাশাপাশি, বেসরকারি সমীক্ষক সংস্থাকে দিয়েও পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি কেন্দ্র সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। সে সব সমীক্ষার রিপোর্ট হাতে পেয়ে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরে নিজেদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার করতে চাইছেন শাহ।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ১৮টি আসন জিতেছিল বিজেপি। তবে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে আসানসোলের বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় তৃণমূলে যোগদান করেন। আবার ২০২২ সালের মে মাসে ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহ ফিরে যান তাঁর পুরনো দল তৃণমূলে। বর্তমানে রাজ্যে বিজেপির ১৬ জন সাংসদ রয়েছেন। তাই খাতায়কলমে বিজেপিকে অন্তত ২৬ জন নতুন প্রার্থী করতে হবে। তবে ১৬ জন সাংসদের মধ্যে কাজের বিচারে কয়েকজন বিজেপি নেতৃত্বের আতশকাচের তলায় রয়েছেন। তাঁদের বদল করা ওই ধরনের কোনও সিদ্ধান্ত তৃণমূলের প্রার্থীদের নাম দেখেই নিতে চান বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
গত লোকসভা নির্বাচনে বিষ্ণুপুরের তৃণমূল সাংসদ সৌমিত্র খাঁ বিজেপিতে যোগ দিয়ে ওই লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছিলেন। তৃণমূল থেকে বহিষ্কারের পর বোলপুরের সাংসদ অনুপম হাজরা বিজেপির প্রার্থী হয়েছিলেন যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে। সৌমিত্র জেতেন। অনুপম দ্বিতীয় হন। জয়ী সৌমিত্রকে বিষ্ণুপুরে টিকিট দেওয়া হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। কিন্তু অনুপম সম্প্রতি দলীয় নেতৃত্ব সম্পর্কে যে সব মন্তব্য করেছেন, তাতে তাঁকে আর টিকিট দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে অনেকেই সংশয়ে। কাঁথির তৃণমূল সাংসদ শিশির অধিকারী ও তমলুকের তৃণমূল সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারীর সঙ্গে দলের কোনও যোগাযোগ নেই। ঘনিষ্ঠমহলে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন, তাঁর পিতা শিশির আর ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাইছেন না। সেখানেও বিজেপিকে নতুন প্রার্থী দিতে হবে। তবে অনেকে মনে করছেন, শুভেন্দুর ভাই দিব্যেন্দু তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়ে তমলুক থেকেই আবার প্রার্থী হতে পারেন। কিন্তু তার আগে বিজেপি দেখে নিতে চাইবে, তমলুকে তৃণমূল কাকে মনোনয়ন দেয়। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময় পূর্ব মেদিনীপুরে এগরার জনসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর শাহের মঞ্চে তৃণমূল সাংসদ শিশির হাজির হলেও দিব্যেন্দুকে সরাসরি বিজেপির মঞ্চে এখনও দেখা যায়নি। তবে ২০২২ সালে দলীয় হুইপ ‘অমান্য’ করে তিনি উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বাবা শিশিরকে সঙ্গে নিয়ে এনডিএ-র প্রার্থী জগদীপ ধনখড়কে ভোট দিয়েছিলেন। ফলে অনেকেই মনে করছেন, তাঁর তমলুকে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট। কিন্তু তা সত্ত্বেও তৃণমূলের প্রার্থীদের তালিকা দেখেই নিজেদের অঙ্ক কষতে চাইছে বিজেপি।