শ্যামবাজারে বিজেপির অবস্থান বিক্ষোভে শুভেন্দু অধিকারী। (ডান দিকে) রেড রোডে তৃণমূলের ধর্না মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী ও রণজিৎ নন্দী
কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রতিবাদে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন অম্বেডকর মূর্তির পাদদেশে ধর্না দিচ্ছেন, তখনই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগে শ্যামবাজারে পাল্টা ধর্না মঞ্চ থেকে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন বিজেপি নেতারা। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কথায়, “লাগামছাড়া দুর্নীতির কারণে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ২৭ নম্বর ধারা জারি করেছে। আর একটা টাকাও রাজ্য পাবে না।” পাল্টা মমতা বলেন, “তুমি যতই ২৭ নম্বর ধারা লাগাও। নির্বাচন এলে জনগণ ৪২০ লাগিয়ে দেবে।” পাশাপাশি বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে বিজেপির কটাক্ষ, ‘নিঃস্ব বাংলা’।
এ দিন ধর্না মঞ্চে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ পাশাপাশি বসেন। শুভেন্দু কিছুটা দেরিতে এলেও তাঁদের পাশেই বসেন। তাঁদের সঙ্গেই ছিলেন রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য।
ধর্না মঞ্চে সুকান্ত বলেন, “বাংলার আয় নেই। গোটা রাজ্য দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে। ধার বাকিতে চলছে।” তাঁর অভিযোগ, “যোগ্যদের চাকরি নেই। যুবকদের আয় নেই। কৃষকদের রোজগার নেই। আর রোজ রোজ কুন্তল ঘোষ, অয়ন শীল, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁদের বান্ধবীদের কথা শোনা যাচ্ছে। উনি (মুখ্যমন্ত্রী) আগে বলতেন বিশ্ব বাংলা। এখন নিঃস্ব বাংলা।”
মুখ্যমন্ত্রীর কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ প্রসঙ্গে সুকান্ত টেনে আনেন বাম আমলের কথা। তাঁর দাবি, “আগে শুনতাম বাম আমলে পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টি হত না কারণ কেন্দ্র মেঘ পাঠাত না। ঠিক তেমনই এখন তৃণমূল সব ক্ষেত্রেই কেন্দ্রের বঞ্চনা খোঁজে। তৃণমূল আমলে কিছুই বদলায়নি। শুধু পোশাক বদল হয়েছে। এখনও সেই কেন্দ্রীয় বঞ্চনার গল্প চলছে।” সেই সঙ্গে তিনি প্রশ্ন তোলেন ধর্নার খরচ নিয়েও। তিনি বলেন, “যতদূর জানি মুখ্যমন্ত্রীর ধর্না মঞ্চ তৈরি করেছে পূর্ত দফতর। অথচ উনি বলছেন দলের ধর্না। মঞ্চের পিছনে দলের চিহ্ন। সরকারি পয়সায় কী করে দলের কর্মসূচি করেন?”
এ দিনই শহিদ মিনার ময়দানে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা ছিল। সেখান থেকে তিনি কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে দিল্লি অচল করে দেওয়ার ঘোষণা করেন। তারই পাল্টা সুকান্ত বলেন, “ভাইপো বলেছেন দিল্লি যাবেন। কিন্তু সংসদে ওঁর উপস্থিতি ৩০% কম। উনি ভয়ে দিল্লি যেতে পারেন না, যদি ইডি ধরে! অনুব্রত (মণ্ডল) তো আগেই চলে গিয়েছেন। বাকিরাও যাবেন। দলের নাম বদলে দিতে হবে। কিছুদিন পরে তিহাড়মূল কংগ্রেস হতে পারে।” শুভেন্দুর বক্তব্য, “পিসিমনির সরকারের দিন শেষ হয়ে এসেছে।আপনারা দিন গোনা শুরু করে দিন।”
এদিন শুভেন্দুর আক্রমণের লক্ষ্য ছিল বাম-কংগ্রেসও। তিনি বলেন, “আমরা লড়াই করব, বিচার ব্যবস্থা এগিয়ে আসবে আর তোমরা মিছিল করবে?” তাঁর বক্তব্য, “৩৪ বছর শাসন করার পর খুব তো বলেছিলেন নো ভোট টু বিজেপি আর এখন যাঁরা লড়াই করছেন কংগ্রেসের কৌস্তুভ(বাগচী) ভাই, সিপিএমের সুজনবাবু(চক্রবর্তী), শতরূপ ভাই(ঘোষ), মিনাক্ষী বোন (মুখোপাধ্যায়) আপনারা বলুন নো ভোট টু তৃণমূল। জনগন বুঝে নেবে কাকে ভোট দেবেন।” পাল্টা সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘কেউ মনে না রেখে ভুলভাল বললে কী করা যাবে! বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে সিপিএম শুধু ‘নো ভোট টু বিজেপি’ বলেনি। আমরা বলেছিলাম, নো ভোট টু বিজেপি অ্যান্ড তৃণমূল। বিজেপি এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে সব শক্তিকে একত্রিত করার অবস্থানেই আমরা আছি। এখনও বলছি, নো ভোট টু তৃণমূল, নো ভোট টু বিজেপি।’’
ধর্না মঞ্চে দিলীপ বলেন, “আগে বলতাম চোর ধরো জেল ভরো। এখন বলতে হবে তিহাড় ভরো।” আলিপুরে দিয়ে আর চলবে না। মুখ্যমন্ত্রীর ধর্নাকে কটাক্ষ করে তাঁর দাবি, “চোর বাঁচাতে ধর্না।”