—প্রতীকী ছবি।
কোনও বুথ সভাপতি ফোন ধরার পরেই সেই যে লাইন কেটে যাচ্ছে, আর নম্বর লাগছে না! কারও ফোন অন্য কেউ ধরে বলছেন, বুথ সভাপতি ফোন রেখে বেরিয়েছেন। কেউ আবার ফোন পেয়ে সটান জানিয়ে দিচ্ছেন, বুথ সভাপতি নিজে ছাড়া কমিটিতে দ্বিতীয় আর কেউ নেই!
সদ্য পঞ্চায়েত ভোটে যারা রাজ্যে প্রায় ১১ হাজার আসন পেয়েছে, আগামী লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় যারা তিরিশের বেশি আসন জেতার স্বপ্ন দেখছে, সেই বিজেপির বুথ স্তর থেকে উঠে আসছে এমনই সব গল্প! দলের গত তিনটি ‘বুথ সশক্তিকরণ কর্মসূচি’তে যে তথ্য ‘সরল’ অ্যাপে নথিভুক্ত হয়েছে, তার সত্যতা যাচাই করতে রীতিমতো চোখ কপালে উঠছে বিজেপি নেতাদের। লোকসভা নির্বাচনের আগে দলের বুথকে শক্তিশালী করতেই এই কর্মসূচি নিয়েছিল রাজ্য বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গে তিন দফায় এই কর্মসূচি হয়েছে। রাজ্য নেতাদের দাবি অনুযায়ী, প্রায় ৬০% বুথে কমিটি গড়া গিয়েছে। কিন্তু জেলাভিত্তিক রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, মেরে কেটে ৪০-৪৫% বুথে পৌঁছনো সম্ভব হয়েছে। একটা সময়ে বাধ্য হয়ে রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতারাও এই কর্মসূচিতে নেমেছিলেন। সেই সব তথ্য ‘সরল’ অ্যাপের মাধ্যমে নথিভুক্তও করা হয়েছিল। বিজেপি সূত্রের খবর, অ্যাপে দেওয়া তথ্য আর বাস্তবের ফারাক এখন ধরতে শুরু করেছেন দলেরই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর শততম ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান বিজেপি সব বুথে সম্প্রচার করার ডাক দিলেও বাংলায় অনেক ক্ষেত্রেই সেই কর্মসূচি হয়েছিল বিধানসভা ভিত্তিক। পরবর্তী সময়ে নরেন্দ্র মোদী মধ্যপ্রদেশ থেকে ‘আমার বুথ, সব চেয়ে মজবুত বুথ’ নামে একটি কর্মসূচিতে ভার্চুয়ালি যোগ দেন। সেখানেও পশ্চিমবঙ্গ থেকে ২৫ হাজার বুথের অংশগ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে সেই অংশগ্রহণ লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছে পৌঁছয়নি।
লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজেপির কেন্দ্রীয় দফতর থেকে রাজ্যের বাছাই করা কিছু শীর্ষ নেতা, মোর্চা নেতাদের অ্যাপে নথিভুক্ত বুথ সভাপতিদের নাম, ফোন নম্বর দিয়ে তাঁদের ফোন করে তালিকার সত্যাসত্য জানতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তখনই জানা যাচ্ছে বাস্তবে বুথ স্তরের হাল! দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নড্ডার রাজ্যে আসার কথা আজ, শুক্রবার। তার আগে সংগঠনের অবস্থায় চিন্তিত পদ্ম শিবির।
বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘ফোন করতে গিয়ে যা উত্তর পাচ্ছি, যা ঘটনা শুনছি, হাসব না কাঁদব, বুঝতে পারছি না! তবে পুরো চিত্র এমন নয়। বেশ কিছু জায়গায় কাজ ভাল হচ্ছে। অনেকে সৎ ভাবে পুরো সাংগঠনিক অবস্থার কথা জানাচ্ছেন, এটা ভাল দিক।’’ নতুন জেলা সভাপতিদের তালিকায় নাম থাকা এক জনের বক্তব্য, ‘‘আমাদের জেলায়ও ফোন এসেছিল। দেশের সব রাজ্যেই এটা হচ্ছে।’’ সূত্রের খবর, পুজোর আগে আর এক দফা ‘বুথ সশক্তিকরণে’র কাজ হবে। রাজ্য বিজেপির এক পদাধিকারী অবশ্য বলেন, ‘‘এই যাচাই করা গোটা প্রক্রিয়ারই অংশ ছিল। বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু বিচ্যুতি থাকতে পারে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে বিষয়টি আমরা ইতিবাচক ভাবে দেখছি।’’