গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
মল-মূত্র ত্যাগ করলে মানুষ দুর্বল হয় না। সবল হয়। তৃণমূলে ফিরতে চাওয়া নেতাদের সম্পর্কে এমনই মন্তব্য করে বসলেন বিজেপি নেতা তথাগত রায়। শুক্রবার সকালে একটি টুইট করেছেন তথাগত। তাতেই পরোক্ষে তৃমমূলমুখী নেতানেত্রীদের মল ও মূত্রের সঙ্গে তুলনা করেছেন বিজেপি-র এই ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতা। তাঁর এই টুইট নির্বাচনের ফলাফলে ইতিমধ্যেই ধ্বস্ত বিজেপি-তে এখন আবার কী জলঘোলা করে, সেটাই দেখার।
বিধানসভা ভোটের অব্যবহিত আগে তৃণমূল ছেড়ে অনেক নেতানেত্রী বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু ভোটের পর তাঁদের মধ্যে অনেকেই আবার তৃণমূলে ফেরার তোড়জোড় শুরু করেছেন। সোনালি গুহ, দীপেন্দু বিশ্বাসরা ইতিমধ্যেই লিখিত ভাবে সে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তৃণমূলে ফিরতে পারেন এমন জল্পনা চলছে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভ্রাংশু রায় এবং প্রবীর ঘোষালের মতো বেশ কয়েক জনকে নিয়ে। তথাগত টুইটে তাঁদের কারও নাম করেননি। কিন্তু তাঁর টুইটের লক্ষ্য ওই নেতারা বলেই মনে করছেন বিজেপি-র লোকজন। প্রয়াত সিপিএম নেতা হরেকৃষ্ণ কোঙারের একটি মন্তব্য উল্লেখ করে তথাগত টুইট করেছেন, ‘তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে আসা যে সব নেতা আবার তৃণমূলে ফিরে গিয়েছেন, তাঁদের সম্পর্কে আমি প্রয়াত সিপিএম নেতা হরেকৃষ্ণ কোঙারের একটি মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি করছি। মল-মূত্র ত্যাগ করলে মানুষ দুর্বল হয় না। সবলই হয়। ১৯৬৪ সালে যখন কম্যুনিস্ট পার্টি ভাঙে তখন সিপিআই নেতাদের সম্পর্কে এই উক্তি করা হয়েছিল।’
রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে যে ভাবে বিজেপি-তে ‘যোগদান মেলা’ শুরু হয়েছিল তার ঘোরতর বিরোধী ছিলেন তথাগত। দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুরে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছিলেন তিনি। কিন্তু তাতে আমল দেয়নি দল। নির্বাচনের কাজেও লাগানো হয়নি তাঁকে। ফলে ভোটের ফল বেরনোর পর থেকেই দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন তথাগত। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের পাশাপাশি কৈলাস বিজয়বর্গীয়, শিবপ্রকাশ এবং অরবিন্দ মেননকে হারের জন্য দায়ী করেছেন পর পর টুইটে। চার নেতার নামের আদ্যাক্ষর ব্যবহার করে ‘কে’, ‘এস’, ‘এ’, ‘ডি’ লাগাতার আক্রমণ শানিয়েছেন তথাগত। যার জন্য তাঁকে দিল্লিতে তলবও করা হয়েছে সম্প্রতি।
দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে বার বার আক্রমণ শানানোয় তথাগতকে সতর্ক করেছিল দল। বস্তুত, নেটমাধ্যমে ‘দলবিরোধী মন্তব্য’ রুখতে সম্প্রতি একটি শৃঙ্খলারক্ষা কমিটিও তৈরি করেছে রাজ্য বিজেপি। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে সেই কমিটির কথা হেসে উড়িয়ে দিয়েছেন প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত। যা থেকে স্পষ্ট যে, ওই কমিটিকে তিনি আমল দিচ্ছেন না। কথার পর এ বার শুক্রবারের টুইটে কাজেও করে দেখালেন তথাগত। তৃণমূলে ফিরতে চাওয়া নেতাদের নিয়ে রাজ্য বিজেপি-র অন্দরে ক্ষোভ ছিলই। কিন্তু তথাগতর মতো চাঁছাছোলা ভাষায় কেউই তাঁদের সঙ্গে মল-মূত্রের তুলনা টানেননি!