মুকুলের উপরে চাপ বাড়াতে মরিয়া শুভেন্দু। ফাইল চিত্র
দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকরের আশঙ্কাতেই মুকুল রায়কে তৃণমূল অসুস্থ সাজিয়ে রাখতে চাইছে বলে দাবি করলেন শুভেন্দু অধিকারী। কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক মুকুলের পরে সম্প্রতি বিষ্ণুপুর ও বাগদার বিধায়ক তন্ময় ঘোষ এবং বিশ্বজিৎ দাস তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এ সব নিয়ে কথা বলতে গিয়েই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু বলেন, ‘‘যাঁরা বিধায়ক হওয়ার পরে দলবদল করছেন, তাঁরা ছাড় পাবেন না। আইনগত ব্যবস্থা হবে। আর একটা নির্বাচন পর্যন্ত মামলা চলতেই থাকবে, এটা চলবে না।’’ একই সঙ্গে শুভেন্দু বলেন, ‘‘মুকুল রায়কে অসুস্থ সাজিয়ে রাখা হয়েছে। পাবলিক অ্যাকান্টস কমিটি (পিএসি)-র চেয়ারম্যান পদ নিয়ে এত বিতর্ক, তার পরেও কমিটির বৈঠকে মুকুলবাবু থাকছেন না। কাজ চালাচ্ছেন ওই কমিটির সদস্য তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায়।’’
অগস্টের প্রথম সপ্তাহে কৃষ্ণনগরে সংবাদমাধ্যমের সামনে মুকুল মন্তব্য করেন, কৃষ্ণনগরে উপনির্বাচন হলে তৃণমূল পর্যূদস্ত হবে। বিজেপি স্বমহিমায় ফিরে আসবে। ‘‘এটা বলা ঠিক হয়নি,’’— বলে পরে মুকুল দাবি করলেও তখন তৃণমূলের কেউ কেউ বলেছিলেন, অসুস্থতার কারণেই এমন অসংলগ্ন বক্তব্য। মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশুও বাবার অসুস্থতার কথা জানান। পরে বিধানসভায় এসেও মুকুল দাবি করেছিলেন, তিনি বিজেপি-রই বিধায়ক। সেই বক্তব্য নিয়েও ‘অসুস্থতা’ জল্পনা তৈরি হয়। তবে বুধবার শুভেন্দুর দাবি, গোটাটাই সাজানো।
মঙ্গলবার রাজ্য বিজেপি-র একটি বৈঠকে কী ভাবে দলত্যাগ বিরোধী আইন বিধানসভায় কার্যকর করা যায় তা নিয়ে বৈঠক হয়। সিদ্ধান্ত হয়েছে, কী ভাবে দলত্যাগীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা দেখবেন শুভেন্দু। বুধবার সে কথা জানিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘‘দলত্যাগ বিরোধী আইন বাংলায় গত ১০ বছরে কার্যকর হয়নি। মুকুল রায়ের ঘটনায় আমরা যে পদক্ষেপ করেছি তাতে আমরা সফল হবই। আইনি লড়াইয়ে কোন পথে আমরা এগবো তার দায়িত্ব দল আমায় দিয়েছে। পদত্যাগ না করে দলত্যাগ চলবে না। আমি আইনি বিষয়টা দেখব। দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কী কী করতে হয় তা নিয়ে আমি আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলব।’’ তন্ময় ও বিশ্বজিতের বিরুদ্ধেও বিজেপি আদালতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন শুভেন্দু।
বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে তিন বিধায়ক তৃণমূলে চলে যাওয়ায় বিজেপি যে চিন্তিত তা বুধবার অনেকটাই স্পষ্ট হয়েছে। বুধবার দক্ষিণবঙ্গের সব বিধায়ককে দলের দফতরে ডাকা হয়েছিল। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন শুভেন্দু ও রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। একই ভাবে উত্তরবঙ্গের বিধায়কদের নিয়েও শিলিগুড়িতে বৈঠক করছেন রাজ্য বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী। তবে কি বিজেপি ভয় পাচ্ছে? জবাবে দিলীপ বলেন, ‘‘মূলত নতুন বিধায়কদের প্রশিক্ষণের জন্যই বসা হয়েছে। তবে এটাও ঠিক যে, চাপের মুখে কেউ কেউ আত্মসমর্পণ করে ফেলছেন।’’ একই সঙ্গে মুকুলকে আক্রমণ করে দিলীপ বলেন, ‘‘মুকুল রায়ের মতো নেতাকে প্রথমবার নির্বাচনে জেতার সুযোগ আমরা তৈরি করে দিয়েছি। কিন্তু তিনি পরে যা করেছেন তাতে রাজনীতিকদের প্রতি শ্রদ্ধা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আমরা ভরসা করে ভুল করেছিলাম।’’