Suvendu Adhikari

মাসে সাড়ে ৭ কোটির বেশি ‘শ্রদ্ধার্ঘ্য’ খরচ অভিষেকের! আয়কর দফতরকে শুভেন্দুর চিঠি টাকার উৎস সন্ধানে

অভিষেকের এই কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকেই ‘চুরির টাকা বিলি হচ্ছে’ বলে প্রচারে নামে বিজেপি। এ নিয়ে ইডি, সিবিআই হতে পারে বলে রবিবারই পৈলানের মঞ্চ থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন অভিষেক।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:৩৮
Share:

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।

জানুয়ারি মাস থেকে নিজের লোকসভা কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারের প্রবীণদের জন্য বার্ধক্য ভাতা প্রকল্প চালু করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথম দফায় রবিবারই বিষ্ণুপুর এলাকায় চেক তুলে দিয়েছেন সাংসদ। আর সোমবারই অভিষেকের দেওয়া ওই টাকার উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলে আয়কর দফতরকে চিঠি লিখলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। অভিষেকের এই কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকেই ‘চুরির টাকা বিলি হচ্ছে’ বলে প্রচারে নামে বিজেপি। এ নিয়ে ইডি, সিবিআই হতে পারে বলে রবিবারই পৈলানের মঞ্চ থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন অভিষেক। সেই আশঙ্কা পুরোপুরি না মিললেও আয়কর দফতরের গোয়েন্দা এবং ফৌজদারি তদন্ত বিভাগের প্রিন্সিপাল ডিরেক্টর সুনিতা বাইন্সলার কাছে গেল শুভেন্দুর চিঠি।

Advertisement

প্রসঙ্গত, সর্বশেষ ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচিতে যাঁরা বার্ধক্য ভাতার জন্য নাম নথিভূক্ত করেছেন তাঁদের এখনও পর্যন্ত টাকা দেওয়া শুরু করেনি রাজ্য সরকার। তবে আগেই অভিষেক জানিয়ে দেন, তিনি নিজের লোকসভা এলাকার প্রবীণদের মাসে মাসে এক হাজার টাকা করে দেবেন। সেই টাকা রাজ্য সরকারের, তৃণমূলের না কি তাঁর ব্যক্তিগত, সে ব্যাপারে কিছুই বলেননি তিনি। তবে জানিয়েছেন, এক বার নয়, প্রতি মাসেই মিলবে টাকা। তবে যা হিসাব তিনি দিয়েছেন, তাতে সকলকে টাকা দেওয়া হলে মাসিক খরচ দাঁড়াবে ৭ কোটি ৬১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এই টাকার উৎস নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন শুভেন্দু। এর জবাবে তৃণমূলের মুখপাত্র তথা রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ‘‘মানুষের ভাল হলেই ওঁদের গায়ে জ্বালা ধরে। টাকা যেখান থেকেই আসুক সেটা চেকের মাধ্যমে সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পড়বে। আয়কর দফতর দেখতে পাবে কতটা স্বচ্ছতার সঙ্গে ভাতা দেওয়া হচ্ছে।’’

অতীতে রাজ্যে কোনও সাংসদই এমন উদ্যোগ নেননি। আগামী দিনে তাঁর দেখানো পথ যে গোটা বাংলায় চালু হতে পারে, সে আশা নিয়ে রবিবার অভিষেক বলেন, ‘‘আমি মনে করি, এই মানুষগুলোর মুখে হাসি ফোটানো জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব। গত নভেম্বরে কথা দিয়েছিলাম যে জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে বার্ধক্য ভাতা ডায়মন্ড হারবারে চালু করব। ১ তারিখই সভা করতে পারতাম। কিন্তু ১ জানুয়ারি দলের প্রতিষ্ঠা দিবস। সে দিন অনেক কাজ ছিল।’’ ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ জানান, গত দু’মাস ধরে কী ভাবে ডায়মন্ড হারবার ঘুরে ঘুরে ৭৬ হাজার ১২০ জন বয়স্ক মানুষের রেজিস্ট্রেশন করানো হয়েছে। তার পর বেছে নেওয়া হয়েছে, কাদের একান্তই বার্ধক্য ভাতা প্রয়োজন। অভিষেক জানান, ১৬,৩৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক চার-পাঁচ জন করে দায়িত্ব নিয়েছেন। তাঁদের মাধ্যমে প্রায় ৬০ হাজার মানুষকে মাসে মাসে হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে। বার্ধক্য ভাতার পর এ বার ১০০ দিনের কাজের টাকা দেওয়ারও চিন্তাভাবনা করছেন। সাংসদের কথায়, ‘‘৬৬ হাজার লোক রয়েছেন ডায়মন্ড হারবারে, যাঁরা ১০০ দিনের কাজ করে টাকা পায়নি। এক-দু মাসের মধ্যে ব্যবস্থা না হলে সেটাও আমি ডায়মন্ড হারবার দিয়ে শুরু করব।’’

Advertisement

আপাতত ৬০ হাজার প্রবীণকে এই ভাতা দেওয়া হবে বলে অভিষেক জানালেও শুভেন্দু মোট ৭৬,১২০ জনের হিসাবই লিখেছেন তাঁর চিঠিতে। মাথা পিছু মাসে এক হাজার টাকা করে ধরেই চিঠিতে জানিয়েছেন, এই প্রকল্পে মাসে ৭,৬১,২০,০০০ টাকা খরচ হবে। হিসাবের সঙ্গে অভিষেকের রবিবারের বক্তব্যের ভিডিয়ো ক্লিপও পাঠিয়েছেন হিসাব করেছেন। শুভেন্দু। অভিষেকের অর্থ সংগ্রহ নিয়ে লিখেছেন, ‘‘তিনি শুধু ১৬,৩৮০ জন বড় মনের স্বেচ্ছাসেবক বা দাতা খুঁজে বের করেননি সেই সঙ্গে তাঁদের এটা বোঝাতে পেরেছেন যে মাসে মাসে প্রত্যেককে তাঁর ব্যাক্তগিত বার্ধক্য ভাতা প্রকল্পের জন্য চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা দিতে হবে। সেটাও অনির্দিষ্টকালের জন্য।’’ সেই সঙ্গে অভিষেকের বিরুদ্ধে চলা ইডি, সিবিআইয়ের তদন্তের কথাও উল্লেখ করেছেন শুভেন্দু। শিক্ষক নিয়োগ থেকে কয়লা দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগের পাশাপাশি অভিষেকের বিরুদ্ধে দুবাই-যোগের দাবিও করেছেন আয়কর দফতরকে লেখা চিঠিতে। বার্ধক্য ভাতা দেওয়ার আড়ালে দুর্নীতির কালো টাকা রয়েছে বলেও অভিযোগ করে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। লোকসভা নির্বাচনের আগে ভোটারদের টাকা দিয়ে প্রভাবিত করার অভিযোগও তুলেছেন বিরোধী দলনেতা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement