শুধু দর্শকাসন থেকেই প্রশ্ন ওঠেনি। মঞ্চে থাকা দিলীপও বর্তমান রাজ্য নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। গত রবিবার পুরভোটের দিন বিকেলে আচমকাই ১২ ঘণ্টার বাংলা বন্ধ ডাকে বিজেপি। শনিবার সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তোলেন দিলীপ।
বৈঠকের শুরুতেই দলের বিদ্রোহীদের বার্তা দেন সুকান্ত মজুমদার। নিজস্ব চিত্র
নতুন রাজ্য কমিটি গঠনের পরে এই প্রথম জেলা নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠক ডেকেছিলেন সুকান্ত মজুমদার। সেই বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতা অমিত মালবীয় থেকে সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ থাকলেও গরহাজির ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তা নিয়েই গেরুয়া শিবিরে জোর জল্পনা। তবে সেই জল্পনাকে ছাপিয়ে গেল রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়-সহ বেশ কয়েক জন বিধায়কের তোলা প্রশ্ন। পুরভোটে কেন বিপর্যয় হয়েছে, তার কারণ দেখাতে শাসকের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা দলের পক্ষে ভাল হচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেন অনেকে। সেই সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই বাংলা বন্ধ ডেকে দল কেন হাস্যাস্পদ হল তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন দিলীপ।
জাতীয় গ্রন্থাগারের একটি সভাকক্ষে হওয়া এই বৈঠককে দল অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে বলে আগেই দাবি করেছিল বিজেপি। কিন্তু সেই বৈঠকেই শুভেন্দু কেন রইলেন না, তা নিয়ে দলের ভিতরেই জল্পনা শুরু হয়। রাজ্য নেতাদের অনেকেই একে অপরকে প্রশ্ন করেন। যদিও আনন্দবাজার অনলাইনকে শুভেন্দু জানিয়েছেন, তিনি যে এই বৈঠকে থাকতে পারবেন না, সেটা রাজ্য সভাপতিকে আগে থেকেই জানিয়ে রেখেছিলেন। শুভেন্দু বলেন, ‘‘বিশেষ কাজে আমি দিনভর ভুবনেশ্বরে ছিলাম। সন্ধ্যায় কলকাতায় ফিরেছি। বৈঠকে যে থাকতে পারব না তা আগেই রাজ্য সভাপতিকে জানিয়ে রেখেছিলাম।’’
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবারের বৈঠকে অনেকেই রাজ্য কমিটির কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সরব ছিলেন হুগলির সাংসদ লকেট। তিনি যে সরব হতে পারেন, তা আগে থেকেই আঁচ করেছিলেন গেরুয়া শিবিরের রাজ্য নেতারা। সামলানোর চেষ্টাও হয়। কিন্তু দর্শকাসনে বসা লকেটকে শেষ পর্যন্ত সামলানো যায়নি। পুরভোটে খারাপ ফলের পরেই দল আত্মবিশ্লেষণ করুক বলে দাবি তোলেন লকেট। শনিবার তিনি সেই দাবি তোলেন বৈঠকেও। জাতীয় গ্রন্থাগারের সভাকক্ষে উপস্থিত এক বিজেপি নেতা জানান, দলের বিভিন্ন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে রাজ্য নেতারা ‘কোটা’ ব্যবস্থা চালু করেছেন বলেও অভিযোগ তোলেন হুগলির সাংসদ। তাঁর অভিযোগ ছিল, কারও সঙ্গে রাজ্য নেতাদের খারাপ সম্পর্ক থাকলেই কমিটি থেকে বাদ পড়তে হয়। সমালোচনা করলেই নেতাদের কোপে পড়তে হয়।
জানা গিয়েছে লকেটের পাশাপাশি শনিবার সরব হয়েছেন বিজেপি-র তিন বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ, নীলাদ্রিশেখর দানা এবং অমর শাখা। তাঁদের বক্তব্য ছিল, নির্বাচনে ফল খারাপ হলেই তৃণমূলের সন্ত্রাসকে দায়ী করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তব হল, পুরুলিয়া, বিষ্ণুপুরের মতো অনেক জায়গায় কোনও রকম সন্ত্রাসের অভিযোগ না থাকলেও ফল খারাপ হয়েছে। আসলে মানুষ যে বিজেপি-কে ভোট দিচ্ছে না এবং তার জন্য নেতৃত্বই দায়ী সে কথা মেনে নেওয়ার দাবিও ওঠে বৈঠকে। আসল কারণ থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখা সংগঠনের পক্ষে ক্ষতি হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন কেউ কেউ। অনেক জায়গায় সিপিএম কী ভাবে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে বৈঠকে। জানা গিয়েছে, সাংসদ লকেট-সহ অন্য বিধায়কেরা সরব হলে তাঁদের সামলানোর ভূমিকা নেন অমিত।
নিজস্ব চিত্র
শুধু দর্শকাসন থেকেই প্রশ্ন ওঠেনি। মঞ্চে থাকা দিলীপও বর্তমান রাজ্য নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বলে সূত্রের খবর। গত রবিবার পুরভোটের দিন বিকেলে আচমকাই ১২ ঘণ্টার বাংলা বন্ধ ডাকে বিজেপি। এর পরেই অভিযোগ উঠেছিল যে, কোনও রকম আলোচনা ছাড়াই বন্ধ ডাকা হয়েছে। শনিবার সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তোলেন দিলীপ। ওই দিন বন্ধ ডাকা হলেও তার কোনও রকম প্রভাব না পড়ায় দল সাধারণ মানুষের কাছে হাস্যাস্পদ হয়েছে বলে জেলার নেতারাও অনেকে সমালোচনা করেছেন বলে জানা গিয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা বলেন, ‘‘দিলীপদা স্পষ্ট করে বলেছেন, বন্ধের মতো একটা কর্মসূচি সফল করতে প্রস্তুতি লাগে। বাড়ি বাড়ি, দোকানে দোকানে গিয়ে কর্মীরা বন্ধ সফল করতে বলবেন। সেই সময়টুকু তো দিতে হবে। প্রস্তুতির সময় না দিয়ে কর্মীদের আন্দোলনে ফেলে দেওয়াটা ঠিক নয়। আগামী দিনে এটা মনে রাখতে হবে।’’
তবে বৈঠকের শুরুতেই দলের বিদ্রোহীদের বার্তা দেন সুকান্ত। তিনি বলেন, ‘‘দল কোনও ব্যক্তির নয়! এটা আসলে টিম ওয়ার্ক। সেই টিমের সিদ্ধান্ত কোনও সময়ে ভুল হয়, আবার কখনও ঠিক হয়। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে সেটি দল নিয়েছে মনে করতে হবে।’’