রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) কেন্দ্রীয় হারে করার দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে নতুন উদ্যমে নামছে বিজেপি। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) কেন্দ্রীয় হারে করার দাবিতে আদালতের লড়াইতে নতুন উদ্যমে নামছে বিজেপি। প্রথম থেকে এই মামলায় মুখ্য ভূমিকা নিয়ে এসেছেন সিপিএমের আইনজীবী সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। সরকারি কর্মচারীদের বামপন্থী সংগঠনের হয়ে আইনজীবী ফিরদৌস শামিমও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। বিজেপির সংগঠন সরকারি কর্মচারী পরিষদও এই মামলায় রয়েছে। তাঁদের আইনজীবী হিসাবে কলকাতা হাই কোর্টে ছিলেন গুড্ডু সিংহ। এখন সেই মামলা সুপ্রিম কোর্টে। সেখানে গেরুয়া শিবিরের ‘অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড’ উদ্যম মুখোপাধ্যায়। তবে আগামী শুক্রবার (৩ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্টে ওই মামলার শুনানি হলে জাতীয় স্তরের দুই দুঁদে আইনজীবীকে গেরুয়া শিবিরের হয়ে সওয়াল করতে দেখা যেতে পারে। এমন সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী স্বয়ং। তবে কারা থাকবেন সেই ভূমিকায়, তা নিয়ে এখনও কিছু বলছে না বিজেপি।
কলকাতা হাই কোর্ট মামলাকারী রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের পক্ষে রায় দেওয়ার পরে সুপ্রিম কোর্টে যায় সরকার। ২০২২ সালের ৩ নভেম্বর মামলা দায়ের হয় শীর্ষ আদালতে। প্রথম শুনানি হয় ২৮ নভেম্বর। রাজ্যের পক্ষে সওয়াল করেন আইনজীবী মুকুল রোহতগি। সেই দিনেই সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয় পরবর্তী শুনানি ৫ ডিসেম্বরেই মামলা শেষ হবে। পরে রাজ্য আইনজীবী বদল করে নিয়োগ করে অভিষেক মনু সিঙঘভিকে দায়িত্ব দেয়। এর পর থেকে একের পর এক তারিখ দেওয়া হলেও নানা কারণে শুনানি পিছিয়ে গিয়েছে। গত ১৪ জুলাইয়ে নবম বার পিছিয়ে পরবর্তী শুনানির তারিখ দেওয়া হয় ৩ নভেম্বর।
আগামী শুক্রবার যাতে কোনও ভাবেই শুনানি পিছিয়ে না-যায় তা নিয়েই এ বার উদ্যোগী রাজ্য বিজেপি। অতীতে প্রয়াত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুষমা স্বরাজের কন্যা আইনজীবী বাঁশুরি স্বরাজকে আইনজীবী হিসাবে নিয়োগ করে বিজেপি। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের দুই দুঁদে আইনজীবী পিএস পাটোলিয়া এবং মীনাক্ষি অরোরাকেও দাঁড় করায় তারা। তবে এ বার কোন দুই ‘বিখ্যাত’ আইনজীবী বিজেপির হয়ে দাঁড়াবেন, তা এখনও জানা যায়নি। তবে দলীয় সূত্রে খবর, পাটোলিয়া থাকতে পারেন, তবে মীনাক্ষিকে বাদ দেওয়া হবে। প্রসঙ্গত, পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগের যে নির্দেশ হাই কোর্ট দিয়েছিল তার বিরোধিতা করে নবান্ন এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশন সুপ্রিম কোর্টে যায়। সেই সময়ে সরকার পক্ষের কৌঁসুলি হয়েছিলেন মীনাক্ষি। সেই কারণেই বিজেপির কর্মচারী পরিষদ আর মীনাক্ষিকে চাইছে না। সংগঠনের রাজ্য সভাপতি দেবাশিস শীল বলেন, ‘‘উদ্যম মুখোপাধ্যায়, বাঁশুরি স্বরাজ থাকছেনই। তবে আরও দুই আইনজীবী আগামী শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করবেন। কারা লড়বেন সেটা ঠিক করছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। এর বাইরেও গুড্ডু সিংহ-সহ আরও কয়েক জন আইনজীবীও থাকবেন।’’
আইনজীবী বাঁশুরি এখন দিল্লি বিজেপির রাজ্য সম্পাদক পদে রয়েছেন। এর পাশাপাশি দলের আইনজীবী শাখারও দায়িত্বে রয়েছেন। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, ডিএ মামলার শুক্রবারের শুনানির জন্য বিজেপি যে প্রস্তুতি নিচ্ছে তাতে জোড়া সেনাপতির ভূমিকায় কারা থাকবেন তা বাঁশুরি এবং শুভেন্দুই ঠিক করছেন। এর আগে একের পর এক দিন শুনানি পিছিয়ে গেলেও এ বার যে বিজেপি সেটা হতে দিতে চায় না, সে ইঙ্গিত গত শুক্রবারই দিয়েছেন শুভেন্দু। দলীয় দফতরে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের পক্ষ থেকে দু’জন প্রবীণ আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টে থাকবেন। যাতে ডিএ মামলার শুনানি এবং নিষ্পত্তি ওই দিনেই হয়।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার বারে বারে সিনিয়র আইনজীবীদের দাঁড় করিয়ে ডেট নিচ্ছেন, ডেটের পরিবর্তন হচ্ছে। আদালতের প্রক্রিয়া নিয়ে আমার কোনও অভিযোগ নেই। তবে ৩ তারিখে সুপ্রিম কোর্টে যাতে ডিএ মামলার নিষ্পত্তি হয় তাঁর জন্য দলের পক্ষ থেকে দু-দু’জন সিনিয়র আইনজীবী সরকারি কর্মচারী পরিষদের হয়ে থাকবেন।’’ তিনি দাবি করেন, রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা যাতে নায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না-হন সেটা নিশ্চত করতে চায় বিজেপি।
২০২২ সালের ২০ মে রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের ৩১ শতাংশ হারে ডিএ দেওয়ার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাই কোর্ট। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল রাজ্য। রাজ্যের যুক্তি, হাই কোর্টের সিদ্ধান্ত মেনে ডিএ দিতে হলে প্রায় ৪১ হাজার ৭৭০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। যা রাজ্য সরকারের পক্ষে এই মুহূর্তে বহন করা কঠিন। প্রসঙ্গত, হাই কোর্টের নির্দেশ মেনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বকেয়া ডিএ না-দেওয়ার জন্য নবান্নের বিরুদ্ধে একটি আদালত অবমাননার মামলাও হয়। তবে সেটির শুনানি আপাতত হাই কোর্টে স্থগিত রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের অনুরোধে।