বিস্ফোরণের পরে ঘটনাস্থলে স্থানীয়রা। ছবি: রয়টার্স।
কেরলের এর্নাকুলাম জেলার কালামাসেরি এলাকায় বিস্ফোরণের ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে কেরল পুলিশ এবং এনএসজি-র সদস্যেরাও। তদন্তকারীরা প্রাথমিক ভাবে মনে করছেন, একটি টিফিন কৌটোর মধ্যে রাখা ছিল বিস্ফোরক। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সকাল ৯টা ৪৭ মিনিটে প্রথম বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে কনভেনশন সেন্টারটি। কারও কারও মতে যদিও এই সময়টি ৯টা ৪০।
প্রাথমিক তদন্তে যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তাতে জানা গিয়েছে, তুলনায় কম তীব্রতাসম্পন্ন বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছিল। বিস্ফোরণস্থল থেকে ব্যাটারি এবং বৈদ্যুতিন তারের টুকরো পাওয়া যাওয়ায় তদন্তকারীদের একাংশ মনে করছেন, সময় ধরে বিস্ফোরণটি ঘটানো হয়েছিল। তবে এই বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে আরও তদন্ত প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে।
আনুষ্ঠানিক ভাবে এই বিস্ফোরণকাণ্ডের তদন্ত এনআইএ-র হাতে তুলে দেওয়া না হলেও, রবিবার সকাল থেকেই ঘটনাস্থলে ছিলেন কেন্দ্রীয় সংস্থাটির এসপি। কেরল পুলিশের ডিজি দরবেশ সাহেব জানান, তদন্তে সব রকম সম্ভাবনার কথাই মাথায় রাখা হচ্ছে। তদন্তের জন্য বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট গঠনের কথাও জানিয়েছেন তিনি।
রবিবার সকালে কালামাসেরি এলাকায় একটি কনভেনশন সেন্টারে বিস্ফোরণটি ঘটে। এই ঘটনায় এক জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম হয়েছেন বেশ কয়েক জন। মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কালামাসেরি মেডিক্যাল কলেজের অন্যতম শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, তাঁদের হাসপাতালে আহতদের মধ্যে দশ জন ভর্তি রয়েছেন। আহতদের মধ্যে দু’জন ভেন্টিলেশনে রয়েছেন। আর এক জনের অবস্থা সঙ্কটজনক। রবিবার সকালে কনভেনশন সেন্টারটিতে একটি অনুষ্ঠান চলছিল। সেই সময়ই বিস্ফোরণ হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, তিনটি বিস্ফোরণ ঘটেছে। জখমদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, তিন দিন ধরে কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠান চলছিল। রবিবারই ছিল অনুষ্ঠানের শেষ দিন। রবিবার সেখানে প্রায় দু’হাজার জন ছিলেন বলে দাবি। সকাল ৯টা নাগাদ প্রথম বিস্ফোরণটি ঘটে। তার পর আরও দু’টি বিস্ফোরণ ঘটে বলে জানা যায়। কনভেনশন সেন্টারটি ঘিরে রেখেছে পুলিশ। চলছে উদ্ধারকাজ।
বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধানে প্রাথমিক ভাবে জানা যাচ্ছে, আইইডি (ইম্প্রোভাইজ়ড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) ব্যবহার করা হয়েছিল। যে কারণে বিস্ফোরণের তীব্রতা ছিল বেশি। তদন্তকারীদের একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, এক সময় কোচি লাগোয়া ওই এলাকা অধুনা নিষিদ্ধ সংগঠন পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া (পিএফআই)-র ঘাঁটি ছিল। যদিও অতীতে পিএফআই কখনও হিংসাত্মক ঘটনায় আইইডি ব্যবহার করেনি। এই বিষয়টিও ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের।
ইতিমধ্যেই বিস্ফোরণে জখমদের চিকিৎসার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা করতে স্বাস্থ্য দফতরকে নির্দেশ দিয়েছেন কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীণা জর্জ। সব হাসপাতালকে তৎপর থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ছুটিতে থাকা চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের অবিলম্বে কাজে যোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী। কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলেছেন, ‘‘খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। খোঁজখবর নিচ্ছি। শীর্ষ আধিকারিকদের ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। ডিজিপির সঙ্গে কথা বলেছি। তদন্তের পরই সবটা জানা যাবে।’’ বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত ব্যক্তির পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন বাংলার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস, যিনি জন্মসূত্রে কেরলের বাসিন্দাও বটে। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনাও করেছেন তিনি।