BJP and TMC

মমতার সামনে ‘মোদী-শাহ চোর’ স্লোগান জেনেই দ্রুত বিধানসভায় গিয়ে পাল্টা ‘চোরধ্বনি’ দেন শুভেন্দুরা

বুধবার বিধানসভার অধিবেশন শেষে মুখ্যমন্ত্রী যোগ দেন বিধানসভা চত্বরে অম্বেডকর মূর্তির নীচে তৃণমূল পরিষদীয় দলের ধর্না কর্মসূচিতে। সেখানে ফিরহাদ হাকিম ও অরূপ বিশ্বাস পালা করে স্লোগান দেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:৫১
Share:

(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দু অধিকারী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

বুধবার বিধানসভা চত্বরে পরিকল্পিত ভাবেই মুখ্যমন্ত্রীর সামনে ‘চোর-চোর’ স্লোগান দিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা। অমিত শাহ ফিরে যাওয়ার পরেই ওই পরিকল্পনা করা হয়। ঘটনাচক্রে, তার আগে শাহ এবং নরেন্দ্র মোদীর নামেও ‘চোর’ স্লোগান দিচ্ছিলেন তৃণমূলের মন্ত্রীরা। সাম্প্রতিক কালে বিধানসভা চত্বরে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে কেউই মনে করতে পারছেন না। অনেকেরই মতে, ঘটনাটি ‘নজিরবিহীন’।

Advertisement

এমনিতেই রাজনৈতিক ভাবে বুধবার দিনটি ছিল ঘটনাবহুল। এক দিকে ধর্মতলায় শাহের সভা। অন্য দিকে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতি। সকাল থেকেই উভয় পক্ষে তাল ঠোকাঠুকি চলছিল। ধর্মতলার সভায় ছিলেন এক শ্রেণির ‘বঞ্চিত’রা। আবার বিধানসভায় কালো পোশাক পরে এসে তৃণমূলের বিধায়ক-মন্ত্রীরা ধর্না দিচ্ছিলেন কেন্দ্রের বকেয়া অর্থ থেকে ‘বঞ্চিত’ হিসেবে।

শাহের সভায় থাকার জন্য বিধানসভায় যাননি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু -সহ বিজেপি বিধায়কেরা। শুভেন্দুকে অবশ্য ইতিমধ্যেই শীতকালীন অধিবেশন থেকে সাসপেন্ড করেছেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। ঠিক ছিল, শাহের সভার ‘সাফল্য’ নিয়েই বুধবার ব্যস্ত থাকবে প্রধান বিরোধী শিবির। কারওরই বিধানসভায় আসার কথা ছিল না।

Advertisement

কিন্তু শাহের সভার পাশাপাশি বিধানসভার ভিতরে ও বাইরে মমতার নেতৃত্বে বিজেপিকে তুলোধনা করতে থাকে তৃণমূল। দিনের অধিবেশন শেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা যোগ দেন বিধানসভা চত্বরে অম্বেডকর মূর্তির নীচে তৃণমূল পরিষদীয় দলের ধর্না কর্মসূচিতে। তাঁর এক পাশে ছিলেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং অন্য পাশে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। পালা করে তাঁরা স্লোগান দিচ্ছিলেন, ‘‘অমিত চোর! মোদী চোর! বিজেপির সবাই চোর।’’

তখন বিধানসভায় কোনও বিজেপি বিধায়কই ছিলেন না। সকলেই ছিলেন ধর্মতলার সভামঞ্চের আশপাশে। শুভেন্দু ছিলেন শাহের সঙ্গে। তিনি এবং বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার শাহকে রেসকোর্স হেলিপ্যাড পর্যন্ত এগিয়ে দেন। শাহ বিমানবন্দরে রওনা হতেই নিজের বিধানসভার দফতরে ফোন করেন বিরোধী দলনেতা। প্রয়োজনীয় কাজের খোঁজ নেওয়ার পাশাপাশি বিধানসভার পরিস্থিতি প্রসঙ্গেও জানতে চান তিনি। তাঁকে জানানো হয়, বিধানসভা চত্বরে ধর্না দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়ার পাশাপাশি মোদী-শাহকে ‘চোর’ বলে স্লোগান দেওয়া হচ্ছে। শুনেই বেজায় ক্ষুব্ধ হন শুভেন্দু। সঙ্গে সঙ্গেই জানান, তিনি তখনই বিধানসভায় আসছেন! এসে পাল্টা কর্মসূচিও করবেন। নিজের দফতরকে নির্দেশ দেন, যাতে অবিলম্বে বাকি বিধায়কদের বিধানসভায় চলে আসতে বলা হয়। বস্তুত, কয়েক জন বিধায়ককে নিজেই ফোন করেন শুভেন্দু।

একে একে বিজেপির বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী, চন্দনা বাউড়ি, তাপসী মণ্ডলেরা বিধানসভা চত্বরে পৌঁছতে শুরু করেন। সাড়ে ৪টার কিছু আগে বিধায়ক শঙ্কর ঘোষকে নিয়ে বিধানসভা চত্বরে আসেন শুভেন্দু। এবং বিধানসভার দক্ষিণ গেট দিয়ে ঢুকতে ঢুকতেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শুরু করেন শুভেন্দু-শঙ্কর। পাল্টা তৃণমূলের ধর্না থেকেও বিরোধী দলনেতার উদ্দেশে জোর স্লোগান দেওয়া হয়। শুভেন্দু চিৎকার করে স্লোগান দিতে থাকেন, ‘‘চাকরি চোর! রেশন চোর! শিক্ষা চোর! বালি চোর! কয়লা চোর!’’ সেই ‘চোর সরকার’-এর মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দিতে দিতে বিধানসভায় নিজের দফতরে চলে যান বিরোধী দলনেতা। যখন তিনি অবস্থানরত তৃণমূল বিধায়কদের সামনে ওই স্লোগান দিচ্ছেন, তখন অনেকেই দৃশ্যত উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীকে দেখা যায় ঠোঁটে আঙুল রেখে সহকর্মী এবং সতীর্থদের শান্ত থাকতে বলছেন। বিধানসভায় কর্মরত কর্মী ও পুলিশ আধিকারিকেরা তখনকার মতো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন।

কিন্তু তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই বিধানসভার গাড়িবারান্দার সিঁড়িতে জমায়েত করে বিক্ষোভ শুরু করেন বিজেপি বিধায়কেরা। সঙ্গে স্লোগান দিতে শুরু করেন, ‘‘পিসি চোর! ভাইপো চোর! তৃণমূলের সবাই চোর!’’ কিছু সময় পরে সেই বিক্ষোভে যোগ দেন শুভেন্দু। এর পর দুই শিবিরের বিধায়কেরা পরস্পরকে ‘চোর’ সম্বোধন করে তুমুল স্লোগান দিতে থাকেন। এ ভাবে প্রায় আধ ঘণ্টা স্লোগান, পাল্টা স্লোগানে সরগরম থাকে বিধানসভার চত্বর। বিকেল ৫টার কিছু পরে ধর্না থেকেই নিজের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বিজেপি বিধায়কদের আচরণ নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেন। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করেন স্পিকারের কাছে। মমতার উপস্থিতিতে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে তাদের কর্মসূচি শেষ করে তৃণমূল। কিন্তু তৃণমূল পরিষদীয় দল অভিযোগ করে, জাতীয় সঙ্গীত চলার সময়েও বিজেপি বিধায়কেরা স্লোগান দিয়ে জাতীয় সঙ্গীতের অবমাননা করেছেন। তৃণমূল পরিষদীয় দল স্পিকারের কাছে বিজেপি পরিষদীয় দলের বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের করে।

ধর্না-অবস্থান থেকে গাড়িতে উঠে মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়েও বিজেপি বিধায়কেরা ‘চোর-চোর’ স্লোগান দেন। বিক্ষোভ শেষে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর উপস্থিতিতে বিজেপির এক বিধায়ক বলেন, ‘‘ঢিল মারলে পাটকেল খেতে হবে! আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অহেতুক চোর-চোর বলে আক্রমণ করেছে তৃণমূল। আর যারা বাংলার মানুষের নজরে চোর প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে, তাদের দেখে আমরা চোর বলেছি! আমরা কোনও ভুল করিনি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement