মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র ।
কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল অফ ইন্ডিয়া (সিএজি) রিপোর্ট নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে তর্কবিতর্ক অব্যাহত। সরকারের বিরুদ্ধে সিএজি রিপোর্টকে হাতিয়ার করে সরব বিরোধী বিজেপি শিবির। সেই প্রসঙ্গেই, এ বার রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কড়া ভাষায় বিঁধলেন শুভেন্দু অধিকারী। পাশাপাশি আসন্ন রাজ্য বাজেট থেকে তিনি এবং তাঁর দল কী ‘আশা’ রাখছেন, তা-ও মঙ্গলবার জানিয়ে দিলেন বিরোধী দলনেতা।
সিএজি রিপোর্টে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়ে আলোচনার দাবিতে মঙ্গলবার বিধানসভায় মুলতুবি প্রস্তাব জমা দেন বিজেপির পরিষদীয় দল। পাশাপাশি, সিএজি রিপোর্ট নিয়ে তদন্তের দাবিও তোলেন তাঁরা। যদিও আলোচনার অনুমতি দেননি স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পরেই বিজেপি বিধায়কদের হট্টগোলে বিধানসভার অধিবেশন মুলতুবি হয়ে যায়। বিধানসভার অধিবেশনে সিএজি রিপোর্ট নিয়ে আলোচনার অনুমতি না মেলায় রাজ্যের শাসকদল তথা মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করলেন বিরোধী দলনেতা। শুভেন্দুর মন্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী আগে ‘চোর চোর’ শুনলে রেগে যেতেন, এখন ‘ক্যাগ (সিএজি রিপোর্ট)’ শুনলে রেগে যান। শুভেন্দুর কথায়, ‘‘চোর শব্দ শুনলে মুখ্যমন্ত্রী আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ওঁর ঘুম ছুটে যায়। এখন ক্যাগ শব্দ শুনলেই মুখ্যমন্ত্রী এবং শাসকদল লাফাচ্ছে। আমাদের বিধানসভায় আজ ক্যাগ রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা করতে দেওয়া হয়নি। আমাদের সোচ্চার প্রতিবাদে অধিবেশন মুলতুবি করতে বাধ্য হয়েছে।’’
ক্যাগ রিপোর্টে রাজ্যের দুর্নীতি নিয়ে ‘ভয়ঙ্কর’ তথ্য রয়েছে বলেও দাবি করেছেন বিরোধী দলনেতা। শুভেন্দুর দাবি, ‘‘ক্যাগ রিপোর্টে ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর তথ্য রয়েছে। ভুয়ো অ্যাকাউন্টের তথ্য রয়েছে। টাকা তছরুপের তথ্য রয়েছে। কারচুপি এবং দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে।’’
যদিও সিএজি রিপোর্ট নিয়ে শুভেন্দুর কটাক্ষ প্রসঙ্গে রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা কয়েক বছরে দেখেছি বিরোধী দলনেতা হিসাবে শুভেন্দু চরম ব্যর্থ। উনি বিধানসভার কক্ষ ব্যবহার করতে জানেন না। তাই এখন ক্যাগ নিয়ে, রাজ্য সরকারকে নিয়ে ভ্রান্ত তথ্য দিয়ে চলেছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধেও সিএজি দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে। তাই এ সব নিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত না করে বিরোধী দলনেতার উচিত রাজ্যের মানুষের হয়ে বিধানসভায় কথা বলা।’’
সিএজি রিপোর্ট নিয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার পাশাপাশি বাজেট অধিবেশন থেকে তাঁর ‘আশা’র কথাও শোনালেন শুভেন্দু। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি রাজ্য বিধানসভার বাজেট অধিবেশনের সূচনা হবে। সেই বাজেটে, রাজ্যের শিল্পের অগ্রগতির জন্য টাটা গোষ্ঠীকে আবার রাজ্যে ফিরিয়ে আনার উল্লেখ থাকবে বলেই আশা করছেন শুভেন্দু (উল্লেখযোগ্য, এক সময় সিঙ্গুরের বহুফসলি জমিতে টাটার ন্যানো গাড়ির কারখানা করার প্রকল্পের বিরুদ্ধে মমতার সঙ্গে আন্দোলন করেছিলেন শুভেন্দুও। তবে তখন তিনি তৃণমূলে)। একই সঙ্গে সেই বাজেটে রাজ্য সরকারি কর্মীদের কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়ার কথা ঘোষণার আশা তিনি রাখছেন বলেও মঙ্গলবার জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, রাজ্যের ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পের টাকাও ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ২০০০ করা হবে বলে তিনি আশাবাদী। একই সঙ্গে, পেট্রোপণ্য এবং রান্নার গ্যাসে রাজ্য সরকার যে ‘সেস’ নেয়, তা-ও বাজেটে মকুব করা উচিত বলে শুভেন্দু দাবি তুলেছেন। সিভিক পুলিশ এবং আশা কর্মীদের বেতন-ভাতা এবং সরকারি শূন্যপদে অবিলম্বে নিয়োগ নিয়েও বাজেটে ইতিবাচক ঘোষণা হবে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন বিরোধী দলনেতা। যদিও রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, রাজ্য বাজেট নিয়ে নিজেদের ‘আশা’র আড়ালে আসলে নিজেদের ‘ইস্যু’র কথাই জানিয়েছেন শুভেন্দু।
বাজেট প্রসঙ্গে শুভেন্দু আরও বলেন, ‘‘আমরা বাজেটে অংশ নেব। বাজেটে আমাদের প্রধান বক্তা হবেন অর্থনীতিবিদ অশোক লাহিড়ী। আমিও বলব। ৮ তারিখ বাজেট পেশের পর ৯ তারিখ রাজ্যপালের কাছে যাব। দাবি জানাব, ক্যাগ রিপোর্ট নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এবং ক্যাবিনেটকে পার্টি করে এফআইআর করতে।’’
প্রসঙ্গত, সিএজি রিপোর্ট দিয়ে জানিয়েছিল, মমতার সরকার ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ২০২১-এর মার্চ মাস পর্যন্ত কেন্দ্রীয় অনুদানের ১ লক্ষ ৯৪ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ খরচের শংসাপত্র জমা দিতে পারেনি। সেই রিপোর্টকে হাতিয়ার করেছে বিজেপি। কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার অভিযোগ তুলেছে, রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় অনুদানের প্রায় ২ লক্ষ ২৯ হাজার কোটি টাকা খরচের শংসাপত্র দিতে পারেনি। বিরোধীদের দাবি, রাজ্যের তৃণমূল সরকার এই টাকা নয়ছয় করেছে। জবাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন, এর মধ্যে ২০০২-০৩ থেকে বাম জমানার হিসাবও রয়েছে। তাঁর কাছে কেন ২০০৩ সালের হিসাব চাওয়া হচ্ছে? সে সময়ে তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতাতে আসেনি। সিএজি ‘বিজেপির জন্য রাজনৈতিক দলিল তৈরি করছে’ বলেও দাবি করে রাজ্যের শাসকদল।