(বাঁ দিক থেকে) শুভেন্দু অধিকারী, দ্রৌপদী মুর্মু, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। —ফাইল চিত্র।
নতুন তিন ফৌজদারি আইন পর্যালোচনা করতে একটি কমিটি গঠন করেছে রাজ্য সরকার। বুধবার এই সংক্রান্ত বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে সাত সদস্যের কমিটিতে কারা রয়েছেন, তা ঘোষণা করে দিয়েছে নবান্ন। বৃহস্পতিবার সকালে টুইট করে সেই কমিটিকে বেআইনি বলে আক্রমণ করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তবে বিরোধী দলনেতার এমন আক্রমণকে পাত্তা দিতে নারাজ রাজ্য সরকারের ঠিক করে দেওয়া কমিটির সদস্য তথা রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা কোনও পরামর্শ দিলে তার বিবেচনা তো রাষ্ট্রপতি করবেন, তাই আমাদের মনে হয় রাষ্ট্রপতি নিজের দায়িত্ব ভালই জানেন। কিন্তু শুভেন্দুবাবু তো ‘এলওপি’, তাই হয়তো একটু বেশিই বোঝেন বা জানেন।’’
এক্স হ্যান্ডলে শুভেন্দু লিখেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০২৪-এর ১৬ জুলাই একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে তিনটি নতুন ফৌজদারি আইন — ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস), ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা (বিএনএসএস) এবং ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম সংশোধনের পরামর্শ দেওয়ার জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে। এই আইনগুলি ১ জুলাই থেকে দেশে কার্যকর হয়ে গিয়েছে। রাজ্য স্তরে এই আইনের নাম পরিবর্তন করা দরকার কি না, তা-ও খতিয়ে দেখবে কমিটি।’’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘‘এই ধরনের উদ্যোগ গ্রহণযোগ্য নয়, এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই বিজ্ঞপ্তিটি শুধু বেআইনিই নয়, এটি যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর পরিপন্থী। সঙ্গে এই প্রচেষ্টা ভারতের সংসদ ও ভারতের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করছে। নতুন আইনের প্রতিটি দিক নিয়ে প্রায় চার বছর ধরে বিভিন্ন স্তরে জড়িয়ে থাকা অংশের সঙ্গে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করে তাদের মতামত নেওয়া হয়েছে। স্বাধীন ভারতে খুব কম আইন নিয়েই এত দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে।’’
বিরোধী দলনেতা লিখেছেন, ‘‘সংসদের উচ্চ এবং নিম্ন কক্ষে এই বিলগুলি পাশ করার পর ২০২৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু তিনটি ফৌজদারি বিলে সম্মতি দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ২০২৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে, ১ জুলাই থেকে তিনটি আইনের বিধান কার্যকর হবে।’’ তিনি আরও লেখেন, ‘‘সংসদে এক বার পাশ করা আইন পর্যালোচনা করার অধিকার এবং ক্ষমতা রাজ্য সরকারের নেই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতের সংবিধান দ্বারা প্রতিষ্ঠিত নিয়মগুলিকে চ্যালেঞ্জ করছেন। একটি প্রাদেশিক সরকারের প্রধান হিসাবে তিনি তাঁর সীমা অতিক্রম করছেন।’’
শুভেন্দুর এ হেন আক্রমণের জবাবে চন্দ্রিমা বলেন, ‘‘সংবিধানের ২৪৬ অনুচ্ছেদের কথা উল্লেখ করেই ওই কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কনকারেন্স লিস্টের কথা বলা হয়েছে, যেখানে কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়ের হাতেই আইন করার অধিকার রয়েছে। আর আমরা কোনও পরামর্শ দিলে তার বিবেচনা তো রাষ্ট্রপতি করবেন, তাই আমাদের মনে হয় রাষ্ট্রপতি নিজের দায়িত্ব ভালই জানেন। কিন্তু শুভেন্দুবাবু তো ‘এলওপি’, তাই হয়তো একটু বেশিই বোঝেন বা জানেন।’’ উল্লেখ্য, নতুন দণ্ড সংহিতা আইন নিয়ে আগেই নিজেদের আপত্তির কথা কেন্দ্রকে জানিয়েছিল রাজ্য সরকার। সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠিও দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সেই সব আপত্তি উড়িয়ে গত ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে তিন ফৌজদারি আইন। কার্যকর হওয়া ওই তিন আইন খতিয়ে দেখতে বুধবার সাত সদস্যের একটি কমিটি গড়েছে রাজ্য।
এই কমিটি গঠনের পাল্টা পদক্ষেপ করেছে রাজভবনও। রাজভবন সূত্রে খবর, ঠিক কী কারণে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে, কমিটির কাজ কী হবে, তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতার কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।
এই তিন আইন খতিয়ে দেখতেই সাত সদস্যের কমিটি গড়েছে রাজ্য সরকার। কমিটির শীর্ষে রয়েছেন প্রাক্তন বিচারপতি অসীমকুমার রায়। এ ছাড়াও রয়েছেন আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক, অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, রাজ্য সরকারের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার, কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল এবং আইনজীবী সঞ্জয় বসু। রাজভবন সূত্রে খবর, এই সিদ্ধান্তের পরেই রাজ্যের কাছে কমিটি সম্পর্কে তথ্য তলব করেছেন রাজ্যপাল বোস। শুধু তা-ই নয়, কেন্দ্রের প্রস্তাবে রাজ্য সরকার সময়ে জবাব দিয়েছিল কি না, তা-ও জানতে চেয়েছেন তিনি। রাজভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যপালের বক্তব্য, ‘‘দেশের মধ্যে আলাদা দেশ হয়ে উঠতে পারে না পশ্চিমবঙ্গ। বানানা রিপাবলিকও হয়ে উঠতে পারে না।’’ আর সেই সূত্র ধরেই এ বার রাজ্য সরকারের গঠিত কমিটিকে বেআইনি বলে আক্রমণ শানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা।