মালদহে বিক্ষোভ দমনে সক্রিয় পুলিশ। — নিজস্ব চিত্র।
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের অভিযোগে মালদহের মানিকচকের ১০টি জায়গায় চলছিল পথ অবরোধ। অভিযোগ, বিক্ষোভ হঠাতে গেলে অবরোধকারীদের হামলার মুখে পড়ে পুলিশ। তাদের মারধর করা হয়। এই ঘটনায় আক্রান্ত হন মানিকচক থানার আইসি-সহ বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মী। অভিযোগ, এর পরেই অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালায় পুলিশ। তাতে আহত হয়েছেন দু’জন। ওই দু’জনকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়। বর্তমানে সেখানেই তাঁরা চিকিৎসাধীন। ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত এলাকা। এই ঘটনায় আটক করা হয়েছে ১৫ জনকে। বিবৃতি দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। রাস্তা অবরোধমুক্ত করা হয়েছে।
এ দিকে, কী কারণে গুলি চালাতে হল পুলিশকে, তা জানতে চেয়ে রিপোর্ট তলব করেছে নবান্ন। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কটাক্ষ, প্রশাসনের উপর থেকে মানুষের বিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় আক্রান্ত হচ্ছে পুলিশ। তৃণমূল জানিয়েছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত হবে।
মালদহের মানিকচকে বেশ কয়েকটি এলাকায় গত কয়েক দিন ধরে বিদ্যুৎ বিভ্রাট চলছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়েরা। সেই অভিযোগেই বৃহস্পতিবার মালদহের মানিকচকে ১০টি জায়গায় পথ অবরোধ করা হয়। অবরোধকারীদের দাবি, প্রশাসনকে জানিয়েও লাভ হয়নি। শামিনুর বিবি নামে এক মহিলা বলেন, ‘‘দিনের পর দিন বিদ্যুৎ থাকছে না মানিকচকে। সারা রাত বিদ্যুৎ থাকে না। বাচ্চারা, অসুস্থ লোকজন কষ্ট পাচ্ছেন। অভিযোগ জানিয়েও লাভ হয়নি। আমাদের হরতাল চলছে, চলবে।’’ অবরোধ হটাতে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে আক্রান্ত হয় বলে অভিযোগ।
আরও অভিযোগ, পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে থাকেন অবরোধকারীদের একাংশ। পাল্টা গুলি ছোড়ে পুলিশ। তাতে দু’জন আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ। গোটা এলাকা ঘিরে ফেলে পুলিশবাহিনী। পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদব জানিয়েছেন, তিন জন পুলিশকর্মী গুরুতর আহত। বাকি বিষয় খতিয়ে দেখার পর জানানো হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। পরে পুলিশ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ঘটনাস্থলে গিয়ে তারা স্থানীয় মানুষজনকে অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ করে। উত্তেজিত জনতা সেই অনুরোধে কান না দিয়ে পুলিশের উপর চড়াও হয় এবং পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর করে। আইসি ঘটনাস্থলে পৌঁছলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। ঘটনায় দু’জন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। পুলিশের তরফে আরও বলা হয়েছে, ‘‘পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে যে দুষ্কৃতীরা পুলিশকে আক্রমণ করেছে এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
মানিকচকের তৃণমূল বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘গত কয়েক দিন ধরে মানিকচক এলাকার বেশ কিছু এলাকায় রাতে বিদ্যুৎ না থাকায় সমস্যা হচ্ছিল। আমি বহু বার ডিভিশনাল অফিসারকে বলেছিলাম সমস্যা মেটাতে। তা সত্ত্বেও সমস্যা মেটেনি। নুরপুর, শেখুপুরা, চণ্ডীপুরে বিদ্যুৎ না থাকার কারণে অবরোধ হয়েছিল। আমি অবরোধকারীদের অনুরোধ করায় তাঁরা অবরোধ তুলে নিয়েছিলেন। কিন্তু এনায়েতপুরের মানুষজন অবরোধে অনড় ছিলেন। যে ঘটনা ঘটেছে তা কাম্য নয়। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি।’’
এই নিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলগুলি আঙুল তুলেছে সরকারের দিকে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা রাজ্যের বিজেপি সভাপতি সুকান্ত জানিয়েছেন, রাজ্যে পুলিশ-প্রশাসনের উপর থেকে বিশ্বাস উঠে গিয়েছে সাধারণ মানুষের। সে কারণে পুলিশের উপর হামলা হয়েছে। পুলিশের গুলি চালানোর সমালোচনা করেছেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। তিনি জানিয়েছেন, পুলিশের এই পদক্ষেপ কাম্য নয়। তৃণমূল মুখপাত্র তথা কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। বিভাগীয় তদন্ত হবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে।’’