বিজেপির দুই রাজ্যের দুই নেতার পৃথক অবস্থান নিয়ে মাথাভাঙার জনসভা থেকে কেন্দ্রের শাসকদলকে নিশানা করতে পারেন অভিষেক। ফাইল চিত্র।
সদ্য বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল। তার পরেই আলিপুরদুয়ারে গিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে জনসভা করার কথা ঘোষণা করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেই মর্মে শুক্রবার উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার শহরে ওই বিধায়কের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনসভা করবেন তিনি। আর এই জনসভার ঠিক এক দিন পরে উত্তরবঙ্গের আর এক জেলায় সভা করবেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জনসভা করবেন কোচবিহারে। জেলা তৃণমূলের তরফে সভার আয়োজন করা হচ্ছে কোচবিহারের মাথাভাঙায়। তবে তৃণমূল শিবিরের নেতাদের দাবি, কোনও ভাবেই শুভেন্দুর সভার পাল্টা করছেন না তাঁরা। অভিষেকের জনসভার নির্ঘণ্ট স্থির হয়ে গিয়েছিল প্রায় এক মাস আগেই। সেই মর্মে তাঁরা জনসভার প্রস্তুতি নিয়েছেন। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। সে কথা মাথায় রেখে প্রতি মাসে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় জনসভা করছেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। তাই তৃণমূল শিবিরের দাবি, তাদের নেতার জনসভাকে যেন কোনও ভাবেই শুভেন্দুর পাল্টা সভা হিসাবে না দেখা হয়।
বুধবার শিলিগুড়িতে সাংবাদিক বৈঠক করে উত্তরবঙ্গের তৃণমূল নেতারা বিজেপির বিরুদ্ধে বাংলা ভাগের চক্রান্ত করার অভিযোগ করেছেন। সম্প্রতি ত্রিপুরা বিধানসভার নির্বাচনের প্রচারে এসে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা জানিয়েছেন, কোনও ভাবেই ত্রিপুরা রাজ্য ভেঙে নতুন রাজ্য তৈরির পক্ষপাতী নন তাঁরা। অন্য দিকে, আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জন বার্লা প্রকাশ্যেই উত্তরবঙ্গকে আলাদা করে রাজ্য তৈরির দাবি তুলেছেন। বিজেপির দুই রাজ্যের দুই নেতার পৃথক অবস্থান নিয়ে মাথাভাঙার জনসভা থেকে কেন্দ্রের শাসকদলকে নিশানা করতে পারেন অভিষেক। এমনটাই মনে করছেন রাজ্য রাজনীতির বৃত্তে থাকা একাংশ। তবে তাঁর এই সভায় আক্রমণের মুখে যে রাজ্য বিজেপির নেতারাও পড়বেন, তাতে একমত উত্তরবঙ্গের তৃণমূল নেতারা। কারণ পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতি করে সেই রাজ্যের বিভাজন চেয়ে বিজেপি দ্বিচারিতার রাজনীতি করছে বলেই অভিযোগ তৃণমূলের।
আর বিজেপির তরফে জানানো হয়েছে, গত রবিবার কলকাতায় গিয়ে অভিষেকের হাত ধরে সুমনের দলবদলের পরেই তড়িঘড়ি বিরোধী দলনেতার সভার আয়োজন করা হয়েছে। তারাও কোনও ভাবে তৃণমূলের সভার পাল্টা সভা করছে না। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর মুকুল রায় দিয়ে শুরু করে পর পর চার জন বিধায়ক দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। তার পর থেকেই পরিষদীয় দলে ভাঙন রুখতে অনেকটাই সফল হয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। ২০২২ সালে গেরুয়া শিবিরের কোনও বিধায়ক শাসকদলে নাম লেখাননি। তাতে স্বস্তি ফিরেছিল বিজেপির শিবিরে। কিন্তু ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের গোড়াতেই আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক দলবদল করে ধাক্কা দিয়েছেন বিজেপিকে। সেই ধাক্কা সামলে আলিপুরদুয়ারের নেতাকর্মীদের মনোবল ফেরাতেই শুভেন্দুর এই সফর। শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় রাজ্যপালের ভাষণের ওপর আলোচনা রয়েছে। কিন্তু সেই অধিবেশনে যোগ দেওয়ার বদলে আলিপুরদুয়ারে গিয়ে সভা করবেন শুভেন্দু।