BJP

বঙ্গ বিজেপিকে পথে ফেরাতে সুনীল-মঙ্গল কাব্যের কড়া পাঠ

সুনীল ও মঙ্গল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের আস্থাভাজন। সুনীল উত্তরপ্রদেশে বিজেপির জয়ের নীরব কান্ডারি ছিলেন। আর মঙ্গল বিহার জয়ের নেপথ্য নায়ক হিসেবে পেয়েছিলেন সেখানে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পুরস্কার।

Advertisement

বিপ্রর্ষি চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৩ ০৮:৫৭
Share:

রাজ্য বিজেপির ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল এবং বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক মঙ্গল পাণ্ডে। ফাইল চিত্র।

যাঁরা ছ’ঘণ্টা ধৈর্য ধরে বৈঠকে বসতে পারেন না, তাঁরা সরকার বদলাবেন! দুর্গাপুরে রাজ্য বিজেপির দু’দিনের কার্যনির্বাহী বৈঠকের শেষ দিনে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের জবাবি ভাষণের আগে কার্যত ফাঁকা হলঘর দেখে এই মন্তব্য করেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক মঙ্গল পাণ্ডে। তার আগেও তিনি এবং রাজ্য বিজেপির ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল রাখঢাক না করে সংগঠনের ভুল-ত্রুটি তুলে ধরেন। সেই প্রসঙ্গে তাঁদের অনেক কড়া কথা বলতেও শোনা যায়।

Advertisement

সুনীল ও মঙ্গল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের আস্থাভাজন। সুনীল উত্তরপ্রদেশে বিজেপির জয়ের নীরব কান্ডারি ছিলেন। আর মঙ্গল বিহার জয়ের নেপথ্য নায়ক হিসেবে পেয়েছিলেন সেখানে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পুরস্কার। বাংলা জয়ের স্বাদ পেতে শাহ ভরসা করেছেন এই দু’জনের উপরে। দু’দিনের বৈঠকে এই সুনীল-মঙ্গল কাব্যেরই কড়া পাঠ পেলেন নেতারা। যা নিয়ে চর্চা বৈঠক শেষেও।

সূত্রের খবর, বৈঠকে মঙ্গল জেলা সভাপতিদের কাছে জানতে চান, জেলা স্তরে এই ধরনের কার্যনির্বাহী বৈঠক কবের মধ্যে শেষ করা সম্ভব? নিজেই ৩১ জানুয়ারির সময়সীমা দেন। কিন্তু অধিকাংশ জেলা সভাপতি জানান, ওই সময়ের মধ্যে করা সম্ভব নয়। ক্ষুব্ধ মঙ্গল বলেন, দলে থাকতে হলে, ‘সক্রিয়তা’র সঙ্গে থাকতে হবে। এত ঢিলেঢালা মানসিকতা থাকলে দলে থাকতে হবে না। কাজ না করতে পারলে সরিয়ে দিতে পারেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন। পরে ১২ ফেব্রুয়ারি জেলা স্তরে কার্যনির্বাহী বৈঠক শেষ করার চূড়ান্ত দিন ধার্য হয়েছে।

Advertisement

সূত্রের খবর, বৈঠকের প্রথম দিনেই ময়নার বিধায়ক অশোক দিন্দা জেলা সভাপতিদের সঙ্গে নিচু তলার কর্মীদের যোগাযোগ অভাবের বিষয়টি ফের তোলেন। অভিযোগ, অনেক জেলা সভাপতি ‘পছন্দের লোক’ নিয়ে দল চালান। তাঁকে সেই মুহূর্তে থামিয়ে রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, এখানে এ সব আলোচনা করবেন না! এ সব নিয়ে আগে প্রচুর আলোচনা হয়েছে। তখন তাৎক্ষণিক ভাবে দু’জনকে থামিয়ে দেন মঙ্গল। নিজের বক্তব্যের সময়ে সুনীলের বক্তব্য ছিল, আজ যাঁরা পদে আছেন, কাল না-ও থাকতে পারেন। সে কথা মাথায় রেখেই কাজ করবেন। তিনি জানান, মেরেকেটে ৩০% মণ্ডলে কর্মসূচি নেওয়ার মতো অবস্থা। বাকি তো খাতায়-কলমে!

সূত্রের খবর, দলীয় নেতাদের মনোভাবে যথেষ্ট বিরক্ত মঙ্গল। দ্বিতীয় দিনের শেষ পর্বে তখনও সভাপতির জবাবি ভাষণ বাকি। কিন্তু তার আগেই ঘর কার্যত খালি হয়ে যায়। যা দেখে বিরক্ত হয়ে তিনি বলেন, যাঁরা ছ’ঘণ্টা ধৈর্য ধরে বসে বৈঠক করতে পারেন না, তাঁরা লড়াই করে সরকার বদলাবে? এই মন্তব্য কার্যত রাজ্য সভাপতির প্রতিও অনাস্থার শামিল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। যদিও দলের একাংশের যুক্তি, নেতা-কর্মীরা এসেছিলেন বিভিন্ন জেলা থেকে। দলের দেওয়া আনুষ্ঠানিক সময়সীমা দেখেই ফেরার টিকিট কেটেছিলেন। কিন্তু বৈঠক দীর্ঘায়িত হওয়ায় তাঁদের পক্ষে বেরিয়ে যাওয়া ছাড়া বিকল্প ছিল না।

কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একসঙ্গে চলার বার্তা থাকা সত্ত্বেও এই বৈঠকে দলের নতুন-পুরনো দ্বন্দ্ব ফের প্রকট হয়েছে। বৈঠকের অন্যতম আলোচ্য পঞ্চায়েত নির্বাচন হওয়া সত্ত্বেও প্রথম দিনের আলোচনায় ডাকই পাননি দলের পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখে তৈরি হওয়া কমিটির আহ্বায়ক তথা সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী। তিনি দলের কোর কমিটির সদস্যও। বৈঠকে দেখা যায়নি দলের রাজ্য সহ-সভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তিনি জানান, তাঁর কাছে বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ আসেনি। ছিলেন না রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু। তিনি জানান, এ বিষয়ে তাঁকে কেউ কিছু জানায়নি। কোর কমিটির সদস্য হওয়া সত্ত্বেও প্রথম দিনের বৈঠকে জায়গা হয়নি রাহুল সিংহের। দ্বিতীয় দিনে তিনি এলেও সূত্রের খবর, মঞ্চে তাঁর বসার জায়গা হয়নি বলে তিনি শেষ সারিতে গিয়ে বসেন। সামনে এসে বসার জন্য ডাকা হলেও তিনি আসতে রাজি হননি। শেষ পর্যন্ত বনসলের ইশারায় বরফ গলে। কিন্তু মধ্যাহ্ন ভোজের বিরতির পরেই রাহুল বেরিয়ে যান।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement